Sri Bhagavatashtakam: জীবন হউক উৎফুল্লময়

Sri Bhagavatashtakam

যাঁহারা Sri Bhagavatashtakam, কৃষ্ণেতর অভিলাষবর্জিত, পূর্ণপ্রেমরসের আস্বাদজনিত আনন্দদ্বারা দেদীপ্যমানা মনোবৃত্তি করে তাহাদের জীবন উৎফুল্লময় হয়। শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিসুধা যাহাদের উপর বর্তায়, তাহারা জীবন সংসারের সকল রকম বাধা বিপত্তিকে কাঁটিয়ে জীবন সংগ্রামে জয়ী হন। তাহাদের কোনো রকম দুশ্চিন্তা, শত্রু ক্ষতি করতে পারেনা। এমনকি পূর্ব জন্মের অনেক খারাপ কর্ম সংশোধন হয়ে যায়।

Sri Bhagavatashtakam

Sri Bhagavatashtakam: শ্রীভাগবতাষ্টকম্

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

শ্রীগোবিন্দপদারবিন্দমধুপানন্যাভিলাষোঙ্খিতান্ 

পূর্ণপ্রেমরসোৎসবোজ্জ্বলমনোবৃত্তিপ্রসন্নাননান। 

শশ্বৎকৃষ্ণকথামহামৃত পয়োরাশৌ মুদা খেলতো 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ১ ॥

অন্বয়- শ্রীগোবিন্দ-পদ-অরবিন্দ-মধুপান্ (যাঁহারা শ্রীগোবিন্দের শ্রীপাদপদ্মের ভ্রমর), অন্যাভিলাষ উঙ্খিতান্ (কৃষ্ণেতর অভিলাষ বর্জিত), পূর্ণ-প্রেম-রস-উৎসব-উজ্জ্বল-মনোবৃত্তি-প্রসন্ন-আননান্ (পূর্ণ প্রেমরসের আস্বাদজনিত আনন্দ দ্বারা দেদীপ্যমানা মনোবৃত্তি হেতু যাঁহাদের বদনমণ্ডল উৎফুল্ল রহিয়াছে), (এবং) শশ্বৎ কৃষ্ণকথা-মহা অমৃত-পয়োরাশৌ মুদা খেলতো (কৃষ্ণকথা-রূপ শ্রেষ্ঠ সুধা সাগরে যাঁহারা সানন্দে নিরন্তর ক্রীড়া করিতেছেন), ইমান্ ভাগবতান্ মূর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি] ৷ ১ ॥

অনুবাদ- যাঁহারা শ্রীগোবিন্দের শ্রীপাদপদ্মের ভ্রমর, কৃষ্ণেতর অভিলাষবর্জিত, পূর্ণপ্রেমরসের আস্বাদজনিত আনন্দদ্বারা দেদীপ্যমানা মনোবৃত্তিহেতু যাঁহাদের বদনমণ্ডল উৎফুল্ল রহিয়াছে এবং নিরন্তর কৃষ্ণকথারূপ শ্রেষ্ঠ সুধাসমুদ্রে যাঁহারা সানন্দে নিরন্তর ক্রীড়া করিতেছেন, সেই শ্রীভাগবতগণকে ভূমি বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ৷ ॥ 1 ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

পাদাজেকৃত সৎকৃতাবপি চতুর্ব্বর্গে ঘৃণাং কুর্ব্বতো 

দৃপাতেইপি গতব্যথান ব্রজপতিপ্রেমামৃতস্বাদকান্।

মদ্বানানতিদুস্তরং ভবমহাপাথোনিধিং গোষ্পদং

 বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ২॥

অন্বয়- চতুর্ব্বর্গে পাদাজেকৃত সৎকৃতৌ অপি (ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ-এই চতুর্বর্গ যাঁহাদের শ্রীপাদপদ্মে পূজা সহকারে লুণ্ঠন করিতে থাকিলেও), ঘৃণাং কুর্ব্বতো দুপাতে অপি (চতুর্বর্গে) (তাহাতে দৃষ্টিপাত বিষয়েও যাঁহারা অবজ্ঞা করিয়া থাকেন), গতব্যথান (যাঁহারা নিখিল ক্লেশ বিনির্মুক্ত), ব্রজপতি প্রেমামৃত স্বাদকান্ (ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণের প্রীতি সুধা যাঁহারা আস্বাদন করিতেছেন) অতি দুস্তরং ভব-মহাপাথো-নিধিং গোষ্পদং মন্ত্রানান (এবং) (যাঁহারা অতি ক্লেশে উত্তরণযোগ্য সংসাররূপ মহাসমুদ্রকে গোষ্পদ-তুল্য জ্ঞান করিয়া থাকেন), ইমান্ ভাগবতান্ মূর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুষ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি] ॥ ২॥

অনুবাদ- ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ এই চতুর্বর্গ যাঁহাদের শ্রীপাদপদ্মে পূজা সহকারে লুণ্ঠন করিতে থাকিলেও তাহাতে দৃষ্টিপাত বিষয়েও যাঁহারা অবজ্ঞা করিয়া থাকেন, যাঁহারা নিখিল ক্লেশ-বিনির্মুক্ত, ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণের প্রীতিসুধা যাঁহারা আস্বাদন করিতেছেন এবং যাঁহারা অতিক্লেশে উত্তরণযোগ্য সংসাররূপ মহাসমুদ্রকে গোষ্পদতুল্য জ্ঞান করিয়া থাকেন, এতাদৃশ সেই শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ॥ 2 ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

radha_krishna_image

মৃগ্যাং ব্রহ্মভবাদিভিব্রজবধূনাথান্ত্রি কঞ্জদ্বয়ীং 

স্বাতন্ত্র্যাৎ প্রণয়োরুরজ্জ্বভিরহো বদ্ধা বলাগ্নির্ভরম্। 

স্বচ্ছন্দং পিবতস্তদাসবরসং প্রস্যন্দমানং মুদা বন্দে 

ভাগবতানিমাননুলবং মুর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ৩ ॥

অন্বয়- রসং স্বচ্ছন্দং মুদা-পিবতঃ (উহা হইতে নিরন্তর ক্ষরিত মধুরস স্বেচ্ছায় পানরত আছেন) ইমান্ ভাগবতান্ মর্জ্জা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ] ॥ ৩ ॥

অনুবাদ- শ্রীব্রজগোপীগণের একমাত্র প্রভু শ্রীকৃষ্ণের যে শ্রীপাদপদ্মযুগল শ্রীব্রহ্মা ও শ্রীশিবাদি অন্বেষণ করিয়াও পান নাই, কিন্তু যাঁহারা স্বাতন্ত্র্যবশতঃ বলপূর্বক প্রীতিরূপে উৎকৃষ্ট রজ্জুদ্বারা তাঁহাকে দৃঢ়রূপে বন্ধন করিয়া তাঁহা হইতে নিরন্তর ক্ষরিত মধুরস স্বেচ্ছায় পানরত আছেন, এতাদৃশ সেই শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি । ॥ 3 ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

বিশ্বেষাং হৃদয়োৎসবান্ স্বসুখদান্ মায়ামনুষ্যাকৃতীন্

 কৃষ্ণেনাধ্যবতারিতান্ জনসমুদ্ধারায় পৃথ্বীতলে। 

সংসারাব্ধিবহিত্রপাদকমলাং স্ত্রৈলোক্যভাগ্যোদয়ান্ 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ৪ ॥

অন্বয়- বিশ্বেষাং হৃদয়-উৎসবান্ (ব্রহ্মাদি স্তম্ভ পর্যন্ত সকল জীবের আনন্দপ্রদ), স্ব-সুখদান্ (নিজানুসঙ্গীবর্গের সুখদাতা), মায়ামনুষ্যাকৃতীন্ (ভগবদাজ্ঞারূপ কৃপাবলম্বনে মনুষ্যাকারধারী), জন-সমুদ্ধারায় কৃষ্ণেন পৃথ্বীতলে অধ্যবতারিতান্ (পাপিগণের উদ্ধারার্থ কৃষ্ণকর্তৃক ভূতলে অবতারিত), সংসার-অন্ধি-বহিত্র-পাদকমলান্ (সংসার-সমুদ্র হইতে উত্তরণের পোতস্বরূপ শ্রীপাদপদ্মযুত), ত্রৈলোক্য ভাগ্য উদয়ান্ (ত্রিভুবনবাসীর সৌভাগ্যের ফলস্বরূপ) ইমান্ ভাগবতান্ মূদ্ধা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি] ॥ ৪॥

অনুবাদ- ব্রহ্মাদি-স্তম্ভপর্যন্ত সকল জীবের আনন্দপ্রদ, নিজানুসঙ্গী জনবর্গের সুখদাতা, ভগবদাজ্ঞারূপ কৃপাবলম্বনে মনুষ্যাকারধারী, পাপিগণের উদ্ধারার্থ কৃষ্ণকর্তৃক ভূতলে অবতারিত, সংসার-সমুদ্র হইতে উত্তরণের পোতস্বরূপ শ্রীপাদপদ্মযুত, ত্রিভুবনবাসীর সৌভাগ্যের ফলস্বরূপ এই ভাগবত গণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি । ॥ ৪ ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

আলোকামৃতদানতো ভবমহাবন্ধং নৃণাং ছিন্দতঃ 

স্পর্শাৎ পাদসরোজশৌচপয়সাং তাপত্রয়ং ভিন্দতঃ। 

আলাপাজনাগরস্য পদয়োঃ প্রেমানমাতন্বতো 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ৫ ॥

অন্বয়- আলোক-অমৃত-দানতো ভবমহাবন্ধং নৃণাং ছিন্দতঃ (যাঁহার। দর্শনামৃত প্রদানে জীবকুলের জন্মমরণরূপ সংস্কৃতির মহাবন্ধন ছেদন করেন), পাদসরোজ-শৌচ-পয়সাং স্পর্শাৎ তাপত্রয়ং ভিন্দতঃ (যাঁহাদের পাদ প্রক্ষালনজলের স্পর্শ সকলের ‘আধ্যাত্মিক’, ‘আধিদৈবিক’ ও ‘আধিভৌতিক’ তাপত্রয় বিনাশ করে), আলাপাৎ ব্রজনাগরস্য পদয়োঃ প্রেমাণম্ আতন্বতো (এবং যাঁহাদের সহিত আলাপে ব্রজনাগর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রীতি বিস্তারিত হয়) ইমান্ ভাগবতান্ মূর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [ এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ] ॥ ৫ ॥

অনুবাদ- যাঁহারা দর্শনামৃত-প্রদানে জীবকুলের জন্ম-মরণরূপ সংসৃতির মহাবন্ধন ছেদন করেন, যাঁহাদের পাদপ্রক্ষালন জলের স্পর্শ সকলের ‘আধ্যাত্মিক’, ‘আধিদৈবিক’ ও ‘আধিভৌতিক’ নামক তাপত্রয় বিনাশ করে এবং যাঁহাদের সহিত আলাপে ব্রজনাগর শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রীতি বিস্তারিত হয়, এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ॥ 5 ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

ভাবাবেশ সমুজ্জ্বলান্ পুলকিনো হর্ষাশ্রুধারাবলী- 

নির্ধৌতানন পঙ্কজান্নবনবানন্দাদ ভূশং নৃত্যতঃ। 

প্রেমোচ্চৈশ্চরিতং স গদগদপদং গোপীপতের্গায়তো 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ৬ ॥

অন্বয়- ভাবাবেশ সমুজ্জ্বলান্ (যাঁহারা প্রেমবিকারের আবেশে সম্যক্ দীপ্তিমান), পুলকিনো (ও রোমাঞ্চিত দেহ), হর্ষ-অশ্রুধারাবলীনির্ধৌত- আনন-পঙ্কজাৎ (হর্যাশ্রুধারায় যাঁহাদের বদনকমল প্রক্ষালিত হইতেছে), নব-নব-আনন্দাৎ ভূশং নৃত্যতঃ (যাঁহারা নব নব আনন্দে প্রভূত ভাবে নৃত্য করিতেছেন), প্রেম-উচ্চৈঃ স গদগদপদং গোপীপতেঃ চরিতং গায়তো (এবং যাঁহারা গদগদ বাক্যে, প্রণয় সহকারে গোপীপতি শ্রীকৃষ্ণের চরিতকথা উচ্চরবে সঙ্কীর্তনে রত আছেন) ইমান্ ভাগবতান্ মুর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুষ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ] ॥৬॥

অনুবাদ- যাঁহারা প্রেমবিকারের আবেশে সম্যক্ দীপ্তিমান্ ও রোমাঞ্চিতদেহ, হর্ষাশ্রুধারায় যাঁহাদের বদনকমল প্রক্ষালিত হইতেছে, যাঁহারা নব নব আনন্দে প্রভূতভাবে নৃত্য করিতেছেন এবং যাঁহারা গদগদবাক্যে প্রণয় সহকারে গোপীপতি শ্রীকৃষ্ণের চরিত উচ্চরবে সঙ্কীর্তনে রত আছেন, এতাদৃশ সেই শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুষ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ॥6॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

krishna_image

প্রেমাস্বাদপরায়ণান্ হরিপদস্ফুর্ত্তিক্ষুরম্মানসান্

 আনন্দৈকপয়োনিধীন রসসমুল্লাসিম্মিত শ্রীমুখান। 

ধন্যান্ সচ্চরিতৌঘনন্দিতজনান্ কারুণ্য পুরাশ্রয়ান্ 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥৭॥

অন্বয়- প্রেমাস্বাদপরায়ণান্ (শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের আস্বাদনই যাঁহাদের একমাত্র ব্রত), হরিপদস্ফূর্ত্তিস্ফুরৎ-মানসান (তদীয় পাদপদ্মের স্ফূর্তিতে যাঁহাদের হৃদয় আলোকিত), আনন্দ-এক-পয়োনিধীন (যাঁহারা আনন্দের মুখ্য সমুদ্রস্বরূপ), রসসমুল্লাসিস্মিত শ্রীমুখান্ (শ্রীভগবানের প্রতি অনুরাগে সমুল্লসিত ঈষৎ হাস্য দ্বারা যাঁহাদের বদনমণ্ডল অপূর্ব্ব শ্রী-সম্পন্ন), ধন্যান্ (যাঁহারা ধন্যবাদাহ) সচ্চরিত-ঔঘ-আনন্দিত জনান (যাঁহারা সাধু চরিতাবলী দ্বারা নরগণকে আনন্দিত করিতেছেন), কারুণ্য পুরাশ্রয়ান (এবং করুণা প্রবাহের আকর), ইমান ভাগবতান্ মূর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ] ॥ ৭ ॥

অনুবাদ- শ্রীকৃষ্ণপ্রেমের আস্বাদনই যাঁহাদের একমাত্র ব্রত, তদীয় শ্রীপাদপদ্মের স্ফূর্তিতে যাঁহাদের হৃদয় আলোকিত, যাঁহারা আনন্দের মুখ্য সমুদ্র-স্বরূপ শ্রীভগবানের প্রতি অনুরাগে সমুল্লসিত, ঈষৎ হাস্য দ্বারা যাঁহাদের বদনমণ্ডল অপূর্ব শ্রীসম্পন্ন, যাঁহারা সাধুচরিতাবলী দ্বারা নরগণকে আনন্দিত করিতেছেন এবং যাঁহারা ধন্যবাদার্হ ও করুণাপ্রবাহের আকর, এতাদৃশ সেই শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ॥ 7 ॥

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

কৃষ্ণাদন্যমজানতঃ ক্ষণমপি স্বপ্নেহপি বিশ্বেশ্বরে 

তস্মিন্ ভক্তিমহৈতুকীং বিদধতো হৃৎকায়বাভিঃ সদা। 

শ্রীলান্ সদ্গুণপুঞ্জকেলিনিলয়ান প্রেমাবতারানহং 

বন্দে ভাগবতানিমাননুলবং মূর্ছা নিপত্য ক্ষিতৌ ॥ ৮ ॥

অন্বয়- ক্ষণম্ অপি স্বপ্নে অপি কৃষ্ণাৎ অন্যম্ অজানতঃ (যাঁহারা মুহূর্তকালের জন্যও স্বপ্নেও কৃষ্ণ ব্যতীত আর কাহাকেও জানেন না), তস্মিন্ বিশ্বেশ্বরে হৃৎকায়বাভিঃ সদা অহৈতুকীং ভক্তিং বিদধতো (মৎস্য, কুর্মাদি ও গর্ভোদশায়ী প্রভৃতি অবতারের অংশী শ্রীকৃষ্ণে যাঁহারা সর্বদা কায়মনোবাক্যে অহৈতুকী ভক্তিমান) শ্রীলান্ সদ্গুণপুঞ্জ-কেলি-নিলয়ান্ (সেই ভজন সম্পত্তিশালী সাধুগুণসমূহের ক্রীড়াগৃহ), প্রেমাবতারান্ (ও প্রেমের অবতার) ইমান্ ভাগবতান্ মূর্ছা ক্ষিতৌ নিপত্য (অহং) অনুলবং বন্দে [এতাদৃশ শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি] ॥৮॥

অনুবাদ- যাঁহারা মুহূর্তকালের জন্যও স্বপ্নেও শ্রীকৃষ্ণ ব্যতীত আর কাহাকেও জানেন না। মৎস্য-কূর্মাদি ও গর্ভোদশায়ী প্রভৃতি অবতারের অংশী শ্রীকৃষ্ণে যাঁহারা সর্বদা কায়মনোবাক্যে অহৈতুকী-ভক্তিমান, সেই ভজন সম্পত্তিশালী সাধুগুণসমূহের ক্রীড়াগৃহ ও প্রেমের অবতার শ্রীভাগবতগণকে ভূমিতে বিলুণ্ঠিত হইয়া মস্তক দ্বারা সর্বদা (সাষ্টাঙ্গ) প্রণিপাত করি ॥ 8 ৷৷

** শ্রীভাগবতাষ্টকম্ **

|| শ্রীল রসিকানন্দ বিরচিতম্ ||

এতদ্ভাগবতাষ্টকং পঠতি যঃ শ্রদ্ধান্বিতঃ ক্ষেমদং 

ভজ্যুদ্রেক বিবর্দ্ধনং প্রতিপদং প্রেম প্রমোদ প্রদম্। 

প্রেমাণং পরমং ধ্রুবং স লভতে বৃন্দাবনেশাত্মসু 

ক্ষিপ্রং ভাগবতেষু যেন বশগো গোপাঙ্গনাবল্লভঃ ॥ ৯ ॥

অন্বয়- ক্ষেমদং (শ্রীভগবচ্চরণলাভরূপ কুশলের প্রদাতা), ভক্তি-উদ্রেক বিবর্দ্ধনং (বিশেষরূপে ভক্তির উৎকর্ষ বর্ধক), প্রতিপদং প্রেম-প্রমোদপ্রদম্ (এবং প্রতিপদে প্রেমানন্দ অর্পণকারী), এতৎ ভাগবত অষ্টকম্ (এই শ্রীভাগবতাষ্টক), পঠতি যঃ শ্রদ্ধান্বিত (যিনি শ্রদ্ধাসহকারে পাঠ করেন) ধ্রুবং স লভতে ক্ষিপ্রং পরমং প্রেমাণং বৃন্দাবনেশাত্মসু ভাগবতেষু (তিনি নিশ্চয়ই দ্রুত বৃন্দাবনাধীশ শ্রীকৃষ্ণের হৃদয় স্বরূপ শ্রীভাগবতগণের প্রতি পরমা প্রীতি লাভ করেন), যেন গোপাঙ্গনাবল্লভঃ বশগো (এবং তাঁহা দ্বারাই শ্রীগোপীবল্লভ শ্রীকৃষ্ণ বশীভূত হয়েন) ॥ ৯ ॥

অনুবাদ-এই শ্রীভাগবতাষ্টক ভগবচ্চরণ লাভরূপ কুশলের প্রদাতা, ইনি বিশেষরূপে ভক্তির উৎকর্ষ বর্ধক এবং প্রতি পদে প্রেমানন্দ-অর্পণকারী। যিনি শ্রদ্ধা সহকারে এই অষ্টক পাঠ করেন, তিনি নিশ্চয়ই দ্রুত বৃন্দাবনাধীশ শ্রীকৃষ্ণের হৃদয়স্বরূপ শ্রীভাগবতগণের প্রতি পরমা প্রীতি লাভ করেন এবং তাহা দ্বারাই গোপীবল্লভ শ্রীকৃষ্ণ বশীভূত হন ৷ ॥ 9 ॥

----- শ্রীভাগবতাষ্টকম্ স্তোত্র সমাপ্ত -----

Bhagvan Sri Sri Nrisinghadev Staba: জপ করুন নিয়মিত শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

শ্রীশ্রীনৃসিংহ-স্তব

শ্রীমদর্চার অগ্রভাগে পূর্ব মহাজনকৃত স্তোত্র এবং স্বকৃত স্তবপাঠ করে যিনি মধুসূদনকে স্তুতি করিবেন, তিনি সর্বপাপ হইতে নির্মুক্ত হইয়া বিষ্ণুলোকে গমন করিবেন।

এই Nrisinghadev Staba ভক্তিসাধকদের মস্তকের ভূষণস্বরূপ এই “সাধকমৌলিরত্ন” গ্রন্থ থেকে সংগৃহিত করা হয়েছে। 

Nrisinghadev staba: শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

Nrisinghadev staba
Source: Iskcon

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

জয় জয়াজিত জহ্যগজঙ্গমাবৃতিমজামুপনীতমৃষাগুণাম্। 

ন হি ভবন্তমৃতে প্রভবন্ত্যমী নিগমগীতগুণার্ণবতা তব

অন্বয়- অজিত! (হে অজিত!) জয় জয় (আপনার পুনঃ পুনঃ জ্য হউক); [ত্বং-আপনি] অগ-জঙ্গমাবৃতিং (স্থাবর-জঙ্গমাবরণরূপা। উপনীতমৃষাগুণাম্ (অসত্যগুণাশ্রিতা) অজাং (মায়াকে) জহি (বিনাশ করুন) । হি (কারণ) ভবন্তম্ ঋতে (আপনি ব্যতীত) অমী (উহারা-জীব বা অপর দেবগণ) ন প্রভবন্তি (ঐ কার্যে সমর্থ নহে)। নিগমগীতগুণার্ণবতা তব (বেদসকল আপনার গুণার্ণবত্ব কীর্তন করেন) ৷৷ ১ ৷৷

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

দ্রুহিণবহ্নিরবীন্দ্রমুখামরা জগদিদং ন ভবেৎ পৃথগুত্থিতম্। 

বহুমুখৈরপি মন্ত্রগণৈরজ স্বমুরুমূর্ত্তিরতো বিনিগদ্যসে ॥২॥

অন্বয়- দ্রুহিণ-বহি-রবীন্দ্রমুখামরাঃ (ব্রহ্মা, অগ্নি, সূর্য, ইন্দ্রাদি দেবগণ) ইদং জগৎ (ও এই বিশ্ব পৃথগ্‌ উত্থিতং (আপনা হইতে স্বতন্ত্র হইয়া উদ্ভূত) ন ভবেৎ (হইতে পারে না)। অতঃ (এই জন্যই) বহুমুখৈঃ মন্ত্রগণৈঃ (বেদমন্ত্রসমূহ অনন্তমুখে) ত্বং অপি (আপনাকেই) অজঃ (অজ) [ও] উরুমূর্তিঃ (বিরাটমূর্তি বা অনন্তমূর্তি বলিয়া) বিনিগদ্যসে (বিশেষভাবে কীর্তন করেন) ৷৷ ২ ৷৷

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

সকলবেদগণেরিতসদ্গুণত্ত্বমিতি সর্ব্বমনীষিজনা রতাঃ। 

ত্বয়ি সুভদ্রগুণশ্রবণাদিভিস্তব পদস্মরণেন গতক্লমাঃ ॥ ৩ ॥

অন্বয়- ত্বং সকলবেদগণেরিতসদ্গুণঃ (অখিলবেদ আপনার সদ্গুণ প্রচার করেন); ইতি (এই হেতু) সর্ব্বমনীষিজনাঃ (সকল মনীষিজন) ত্বয়ি (আপনাতে) সুভদ্রগুণশ্রবণাদিভিঃ (আপনার পরম-মঙ্গলময় গুণশ্রবণকীর্তনাদিদ্বারা) রতাঃ (অনুরক্ত হইয়া) পদস্মরণেন (আপনার পদদ্বয়স্মরণপূর্বক) গতক্রমাঃ (সর্বসন্তাপরহিত) [ভবন্তি-হইয়া থাকেন] ৷৷ ৩ ৷৷

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

নরবপুঃ প্রতিপদ্য যদি ত্বয়ি শ্রবণবর্ণনসংস্মরণাদিভিঃ। 

নরহরে ন ভজন্তি নৃণামিদং দৃতিবদুচ্ছ্বসিতং বিফলং ততঃ ॥ ৪ ॥

অন্বয়- নরহরে! (হে নৃসিংদেব!) যদি [নরাঃ-মানবগণ] নরবপুঃ (নরদেহ) প্রতিপদ্য (লাভ করিয়া) ত্বয়ি (আপনার) শ্রবণ-বর্ণন- সংস্মরণাদিভিঃ (শ্রবণ-কীর্তন-সংস্মরণাদিদ্বারা) ন ভজন্তি (ভজন না করে), ততঃ (তবে) নৃণাম্ (সেই সকল মানবের) ইদম্ উচ্ছ্বসিতং (এই শ্বাসগ্রহণ বা জীবনধারণ) দৃতিবৎ (ভস্ত্রার ন্যায়) বিফলম্ (বিফল) ॥ ৪ ৷৷

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

উদরাদিষু যঃ পুংসাং চিন্তিতো মুনিবর্ম্মভিঃ। 

হস্তি মৃত্যুভয়ং দেবো হৃদ্‌গতং তমুপাস্মহে  ৷৷ ৫ ॥

অন্বয়- যঃ দেবঃ (যে নৃসিংদেব) মুনিবর্ম্মভিঃ (যোগপথে) উদরাদিযু (উদরাদি স্থানস্থিত পদ্মসকলে) চিন্তিতঃ (চিন্তিত হইয়া) পুংসাং (যোগিপুরুষগণের) মৃত্যুভয়ং (মৃত্যুভয়) হস্তি (নাশ করেন), হৃদ্গতম্ (হৃদয়ে অবস্থিত) তং (তাঁহাকে) [বয়ং-আমরা] উপাস্মহে (ধ্যান করি) ॥ ৫ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

স্বনির্ম্মিতেষু কার্য্যেযু তারতম্যবিবর্জিতম্। 

সর্ব্বানুস্যূতসন্মাত্রং ভগবন্তং ভজামহে ॥ ৬॥

অন্বয়- [যিনি] স্বনিৰ্ম্মিতেষু (স্বনির্মিত) কার্য্যেষু (কার্য অর্থাৎ জীবাদি বিষয়ে স্থিত্যুদ্ভবলয়াদিতে) তারতম্যবর্জিতং (তারতম্যবর্জিত) সর্বত্রানুস্যূতসন্মাত্রং [ও] (সর্ববস্তুতে প্রবিষ্ট চিৎ বা সত্তামাত্ররূপে অবস্থিত) [তং-সেই] ভগবন্তং (ভগবান্কে) ভজামহে (আমরা ভজন করি) ॥ ৬॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

ত্বদংশস্য মমেশান ত্বন্মায়াকৃতবন্ধনম্। 

ত্বন্দগ্রিসেবামাদিশ্য পরানন্দ নিবর্ত্তয় ॥৭॥

অন্বয়- ঈশান। (হে ঈশ্বর।) পরানন্দ! (হে পরানন্দ!) ত্বদজ্জিসেবাম আদিশ্য (আপনার চরণযুগলের সেবা প্রদান করতঃ) ত্বদংশস্য (আপনার অণু-অংশস্বরূপ) মম (আমার) ত্বন্মায়াকৃতবন্ধনং (ভবদীয়মায়াকৃত বন্ধন) নিবর্ত্তয় (দূর করুন) ॥৭॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

ত্বৎকথামৃতপাথোধৌ বিহরস্তো মহামুদঃ। 

কুর্ব্বস্তি কৃতিনঃ কেচিচ্চতুর্বর্গং তৃণোপমম্ ॥৮॥

অন্বয়- ত্বৎকথামৃতপাথোধৌ (আপনার কথামৃতসমুদ্রে) বিহরম্ভঃ (বিহারশীল) মহামুদঃ (মহানন্দযুক্ত) কেচিৎ (কোন কোন) কৃতিনঃ (কৃতিব্যক্তি) চতুর্বর্গং (চতুর্বর্গকে) তৃণোেপমং (তৃণতুল্য) কুৰ্ব্বন্তি (জাম করিয়া থাকেন) ॥৮॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

ত্বয্যাত্মনি জগন্নাথে মন্মনো রমতামিহ। 

কদা মমেদৃশং জন্ম মানুষং সম্ভবিষ্যতি ॥ ৯॥

অন্বয়- ইহ (এই জন্মে) জগন্নাথে (জগন্নাথ), আত্মনি (পরমাত্মা) ঘয়ি (আপনাতে) মন্মনঃ (আমার চিত্ত) রমতাম্ (নিবিষ্ট হউক)। [কি জানি,] কদা (কখন) মম (আমার) ঈদৃশং (ঈদৃশ) মানুষং জন্ম (মনুষ্যজন্ম) সম্ভবিষ্যতি (লাভ হইবে?) ॥ ৯॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

চরণস্মরণং প্রেণা তব দেব সুদুর্লভম্। 

যথাকথঞ্চিমূহরে মম ভূয়াদহর্নিশম্ ॥ ১০॥

অন্বয়- দেব। নূহরে। (হে নৃসিংহদেব।) প্রেম্না (প্রেমের সহিত) তব (আপনার) চরণস্মরণং (শ্রীচরণস্মরণ) সুদুর্লভম্ (অতি দুর্লভ হইলেও)। [তৎ-উহা] যথাকথঞ্চিৎ (যে-কোনভাবে) মম (আমার) অহর্নিশং (দিবারাত্র) ভূয়াৎ (সাধিত হউক) ॥ ১০॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

কাহং বুদ্ধ্যাদিসংরুদ্ধ ক চ ভূমন্ মহস্তব। 

দীনবন্ধো দয়াসিন্ধো ভক্তিং মে নূহরে দিশ॥ ১১ ॥

অন্বয়- ভূমন্! (হে ভূমন্।) ক (কোথায়) বুদ্ধ্যাদিসংরুদ্ধঃ (মহদ-অহঙ্কার প্রভৃতি তত্ত্বের দ্বারা আচ্ছন্ন) অহং (আমি), ক চ (আর কোথায়) তব (আপনার) মহঃ (তেজঃ অর্থাৎ মহিমরাশি।) দীনবন্ধো! দয়াসিন্ধো। নূহরে। (হে নরহরে।) মে (আমাকে) ভক্তিং (ভক্তি) দিশ (প্রদান করুন) । ১১ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

মিথ্যাতর্কসুকর্কশেরিত-মহাবাদান্ধকারান্তরে। 

ভ্রাম্যম্মন্দমতেরমন্দমহিমংস্তজজ্ঞানবৰ্ম্মাস্ফুটম্ ॥ 

শ্রীমন্মাধব বামন ত্রিনয়ন শ্রীশঙ্কর শ্রীপতে। 

গোবিন্দেতি মুদা বদন মধুপতে মুক্তঃ কদা স্যামহম্ ॥ ১২॥

অন্বয়- অমন্দমহিমন্। (হে অনন্তমহিমময়।) মিথ্যাতর্কসু- কর্কশেরিতমহাবাদান্ধ কারান্তরে (মিথ্যা তর্কহেতু অতি কর্কশভাবে প্রণোদিত মহাবাদরূপ অন্ধকার-গহ্বরে) ভ্রাম্যম্মন্দমতেঃ (ভ্রমণনিরত মন্দমতি আমার নিকট) ত্বজ্ঞানবক্স (আপনার তত্ত্বজ্ঞানপথ) অস্ফুটম্ (অপ্রকাশিত)। মধুপতে (হে মধুপতে।) শ্রীমন্মাধব! বামন। ত্রিনয়ন। শ্রীপতে! গোবিন্দ। ইতি (ইত্যাদি নাম) মুদা (আনন্দভরে) বদন (বলিতে বলিতে) কদা (কখন) অহং (আমি) মুক্তঃ (মুক্ত) স্যাম্ (হইব?) ॥ ১২॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

যৎসত্ত্বতঃ সদাভাতি জগদেতদসৎ স্বতঃ।

 সদাভাসমসত্যস্মিন্ ভগবন্তং ভজাম তম্ ॥ ১৩ ॥

অন্বয়- যৎসত্ত্বতঃ (যাঁহার সত্তাতে) স্বতঃ অসৎ (স্বতঃই অসৎ) এতৎ জগৎ (এই জগৎ) সদাভাতি (সরূপে প্রতিভাত হয়), অস্মিন্ (এই) অসতি (অসৎ জগতে) সদাভাসম্ (সত্যপ্রকাশস্বরূপ) তং (সেই) ভগবন্তং (ভগবানকে) ভজাম (আমরা ভজন করি) ॥ ১৩ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

তপস্তু তাপৈঃ প্রপতত্ত্ব পৰ্ব্বতা- দটন্তু তীর্থানি পঠন্তু চাগমান্। 

যজন্তু যাগৈর্বিবদন্ত বাদৈ- হরিং বিনা নৈব মৃতিং তরন্তি ॥ ১৪ ॥

অন্বয়- মানবাঃ- [মানবগণ] তাপৈঃ (বিবিধ সূর্যাগ্নি-তাপে তপ্ত হইয়া) তপস্তু (তপস্যা করুক), পৰ্ব্বতাৎ (পর্বত হইতে) প্রপতত্ত্ব (পতিত হউক), তীর্থানি (তীর্থসকল) অটন্তু (ভ্রমণ করুক), আগমানি চ (শাস্ত্র সকল) পঠন্তু (পাঠ করুক), যাগৈঃ যজন্তু (নানা যজ্ঞ অনুষ্ঠান করুক), [অথবা] বাদৈঃ (তর্কদ্বারা) বিবদম্ভ (বাদবিসম্বাদই করুক), [কিন্তু] হরিং বিনা (শ্রীহরির কৃপাব্যতীত) মৃতিং (মৃত্যুকে) নৈব তরন্তি (নিশ্চয়ই অতিক্রম করিতে পারে না) ॥ ১৪ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

অনিন্দ্রিয়োহপি যো দেবঃ সর্ব্বকারকশক্তিধূক্। 

সর্ব্বজ্ঞঃ সর্ব্বকর্তা চ সর্ব্বসেব্যং নমামি তম্ ॥ ১৫ ॥

অন্বয়- যঃ দেব (যে ঈশ্বর) অনিন্দ্রিয়ঃ অপি (প্রাকৃত ইন্দ্রিয়রহিত হইয়াও) সর্ব্বকারকশক্তিবৃক্ (সর্বকর্তৃত্বশক্তিবিশিষ্ট), সর্বজ্ঞঃ (সর্বজ্ঞ), সর্ব্বকর্তা চ (ও সর্বকর্তা), সর্ব্বসেব্যং (সকলেরই আরাধ্য) তং (তাঁহাকে) নমামি (আমি নমস্কার করি) ॥ ১৫ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

ত্বদীক্ষণবশক্ষোভ মায়াবোধিতকৰ্ম্মভিঃ। 

জাতান্ সংসরতঃ খিন্নান্ নূহরে পাহি নঃ পিতঃ ॥ ১৬॥

অন্বয়- পিতঃ (হে পিতঃ।) নূহরে! (হে নৃসিংহ!) ত্বদীক্ষণবশক্ষোভ- মায়া-বোধিতকৰ্ম্মভিঃ (আপনার ঈক্ষণবশে ক্ষুব্ধা মায়াকর্তৃক প্রেরিত কর্মদ্বারা) জাতান্ (জ্ঞাত), সংসরতঃ (ও সংসার-ভ্রমণশীল) খিন্নান্ (খেদগ্রস্ত) নঃ (আমাদিগকে) পাহি (রক্ষা করুন) ॥ ১৬॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

অন্তর্যন্তা সর্ব্বলোকস্য গীতঃ শ্রুত্যা যুক্ত্যা চৈবমেবাবসেয়ঃ। 

যঃ সর্ব্বজ্ঞঃ সর্বশক্তিনৃসিংহঃ শ্রীমন্তং তং চেতসৈবাবলম্বে ॥ ১৭ ॥

অন্বয়- শ্রুত্যা (শ্রুতিকর্তৃক) যঃ (যিনি) সর্ব্বলোকস্য (সর্বলোকের) অন্তর্যন্তা (অন্তর্যামী বলিয়া) গীতঃ (ঐরূপ কথিত), যুক্ত্যা চ (যুক্তিদ্বারাও) এবম্ এব (এইরূপই) অবসেয়ঃ (অবধারণীয়), সর্বজ্ঞঃ (যিনি সর্বজ্ঞ), সর্ব্বশক্তিঃ (সর্বশক্তিমান) নৃসিংহঃ (শ্রীনৃসিংহদেব), শ্রীমন্তং (শ্রীমল্লক্ষ্মী- সহিত বিরাজিত), তম্ এব (তাঁহাকেই) চেতসা (হৃদয়ে) অবলম্বে (আশ্রয় করি) ॥ ১৭ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

যস্মিন্নুদ্যদ্বিলয়মপি যদ্ভাতি বিশ্বং লয়াদৌ

জীবোপেতং গুরুকরুণয়া কেবলাত্মাববোধে। 

অত্যন্তান্তং ব্রজতি সহসা সিন্ধুবৎ সিন্ধুমধ্যে মধ্যেচিত্তং

ত্রিভুবনগুরুং ভাবয়ে তং নৃসিংহম্ ॥ ১৮ ॥

অন্বয়- জীবোপেতং (জীবগণসহিত) বিশ্বং (বিশ্ব) লয়াদৌ (লয়ের পূর্বে স্থিতিকালে) যৎ (যাহাতে) ভাতি (প্রকাশিত থাকে), যস্মিন্ন (যাহায়্যে উদাদ্বিলয়ম্ অপি (বিশ্বের বিলয় দৃষ্ট হইলেও) গুরুকরুণয়া (যাঁহার প্রচুর করুণাহেতু) [জীবগণ] কেবলাত্মাববোধে (বিশুদ্ধ আত্মস্বরূপবোধ লাভ হইলে) সিন্ধুমধ্যে (সমুদ্রমধ্যে) সিন্ধুবৎ (নদীসকলের ন্যায়) সহসা (অকস্মাৎ) অত্যন্তান্তং (আত্যন্তিক গতি অর্থাৎ পরমমুক্তি) ব্রজতি (প্রাপ্ত হয়) ত্রিভুবনগুরুং (ত্রিলোকপূজ্য) তং (সেই) নৃসিংহং (নৃসিংহদেবকে) মধ্যেচিত্তং (হৃদয়মধ্যে) ভাবয়ে (ভাবনা করি) ॥ ১৮ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

সংসারচক্র-ক্রকচৈর্বিদীর্ণমুদীর্ণনানাভবতাপতপ্তম্।

কথঞ্চিদাপন্নমিহ প্রপন্নং ত্বমুদ্ধর শ্রীনৃহরে নৃলোকম্ ॥ ১৯ ॥

অন্বয়- শ্রীনূহরে! (হে শ্রীনূহরে।) সংসারচক্র-ক্রকচৈঃ (সংসারচক্ররূপ ! করাৎদ্বারা) বিদীর্ণম্ (বিদীর্ণ), প্রকটিত, উদীর্ণ-নানাভবতাপতপ্তম্ (নানাবিধ ভবতাপে তপ্ত) ইহ আপন্নম্ (এই সংসারে বিপদ্‌গ্রস্ত) কথঞ্চিৎ (কোনও প্রকারে) প্রপন্নং (শরণাগত) নৃলোকং (নরগণকে) ত্বং (আপনি) উদ্ধর (উদ্ধার করুন)॥১৯॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

যদা পরানন্দগুরো ভবৎপদে পদং মনো মে ভগবল্লভেত।

তদা নিরস্তাখিলসাধনশ্রমঃ শ্রয়েয় সৌখ্যং ভবতঃ কৃপাতঃ ॥ ২০॥

অন্বয়- [হে] ভগবন্! [হে] পরমানন্দগুরো! যদা (যখন) ভবৎপদে (আপনার পাদপদ্মে) মে (আমার) মনঃ (মন) পদং লভেত (আশ্রয় লাভ করিবে), তদা (তখন) ভবতঃ (আপনার) কৃপাতঃ (কৃপায়) নিরস্তাখিলসাধনশ্রমঃ (অখিল সাধনশ্রম বিদূরিত হইবে), [এবং] সৌখ্যং (পরমসুখ) শ্রয়েয় (লাভ করিব) ॥২০॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

ভজতো হি ভবান্ সাক্ষাৎ পরমানন্দচিঘনঃ।

আত্মৈব কিমতঃ কৃত্যং তুচ্ছদারসুতাদিভিঃ ॥ ২১ ॥

অন্বয়- ভজতঃ হি (ভজনকারীর নিকট) ভবান্ (আপনি) সাক্ষাৎ পরমানন্দচিদঘনঃ (পরমানন্দ-চিন্ময়বিগ্রহ) আত্মা এব (আত্মস্বরূপ), অতঃ (অতএব) তুচ্ছদারসুতাদিভিঃ (তুচ্ছ কলত্রপুত্রাদিদ্বারা) কিম্ কৃত্যম্ (প্রয়োজন কি?) ॥ ২১ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

মুঞ্চন্নঙ্গ তদঙ্গসঙ্গমনিশং ত্বামেব সঞ্চিন্তয়ন্ সন্তঃ 

সন্তি যতো যতো গতমদাস্তানাশ্রমানাবসন। 

নিত্যং তন্মুখপঙ্কজাদ্বিগলিতত্বৎপুণ্যগাথামৃত-স্রোতঃ-সংপ্লব-সংপ্লতো 

নরহরে ন স্যামহং দেহভূৎ ॥ ২২॥

অন্বয়- অঙ্গ নরহরে! [হে নরসিংহ! তদঙ্গসঙ্গম্ (পুত্রকলত্রাদির অঙ্গসঙ্গ) মুঞ্চন (পরিত্যাগপূর্বক) অনিশং (অহর্নিশ) ত্বাম্ এব (আপনাকেই) সঞ্চিন্তয়ন (চিন্তা করিতে করিতে), গতমদাঃ (বিগতাহঙ্কার) সন্তঃ (সাধুগণ) যতঃ যতঃ (যেই যেই স্থানে) সন্তি (অবস্থান করেন), তান্ (সেই সকল)। আশ্রমান্ (আশ্রম সমূহে) আবসন্ (অবস্থান-পূর্বক) নিত্যং (নিত্য) তন্মুখপঙ্কজাৎ (সেই সাধুগণের মুখপদ্ম হইতে) বিগলিত- ত্বৎপুণ্যগাথামৃতস্রোতঃ-সংপ্লবসংপ্লুতঃ (বিগলিত আপনার পবিত্র কথামৃত- শ্রোতোজলে স্নাত হইয়া) অহং (আমি) দেহভৃৎ (পুনর্জন্মভাক্) ন স্যাম্ (হইব না) ॥ ২২॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

উদ্ভুতং ভবতঃ সতোহপি ভুবনং সন্নৈব সর্পঃ স্রজঃ 

কুর্ব্বৎ কার্য্যমপীহ কূটকনকং বেদোহপি নৈবংপরঃ। 

অদ্বৈতং তব সৎ পরন্তু পরমানন্দং পদং তন্মদা 

বন্দে সুন্দরমিন্দিরানুত হরে মা মুঞ্চমামানতম্ ॥ ২৩ ॥

অন্বয়- সতঃ (সৎ বা নিত্যবস্তু) ভবতঃ (আপনা হইতে) উদ্ভূতম্ অপি (উৎপন্ন হইলেও) ভুবনং (জগৎ) সৎ ন এব (সৎ বা নিত্য নহে), [যথা] ব্রজঃ (পুষ্পমালিকা হইতে উদ্ভূত) সর্পঃ (সর্প) [সৎ বা নিত্য নহে), কূটকনকং (কৃত্রিম স্বর্ণ) কার্য্যং (অলঙ্কারাদি কার্য) কুর্ব্বৎ অপি (উৎপাদন করিয়াও) (সৎ অর্থাৎ প্রকৃত স্বর্ণ নহে]; বেদঃ অপি (বেদও) ন এবং পরঃ (এইরূপ বলেন না)। পরন্তু (কিন্তু) তব (আপনার) অদ্বৈতং (অদ্বয়ভাব) সৎ (নিত্য সত্য)। তৎ (সেই হেতু) [আপনার] সুন্দরং (সুন্দর) পরমানন্দং (পরমানন্দময়) পদং (চরণ) বন্দে (আমি বন্দনা করি)। ইন্দিরানুত। (হে রমাবন্দিত) হরে (হরে।) আনতং (সম্যরূপে প্রণত) মাং (আমাকে) মা মুঞ্চ (পরিত্যাগ করিবেন না) ৷ ২৩ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

মুকুটকুণ্ডল-কঙ্কণ-কিঙ্কিণীপরিণতং কনকং পরমার্থতঃ।

মইদহষ্কৃতি-খ-প্রমুখং তথা নরহরেন পরং পরমার্থতঃ ॥২৪॥

অন্বয়- মুকুট-কুণ্ডল-কঙ্কণ-কিঙ্কিণী-পরিণতং (মুকুট-কুণ্ডল-কঙ্কণ ও কিঙ্কিণীরূপে পরিণত হইলেও) কনকং (কনক) পরমার্থতঃ (বস্তুতঃ) (কনকালে আড়াই বটে); তথা (তদ্রূপ) মহদহস্কৃতি-খ-প্রমুখং (মই (বস্তুতা) ও আকাশ প্রভৃতি) পরমার্থতঃ (বস্তুতঃ) নূহরেঃ (শ্রীনৃসিংহবিষ্ণু হইতে) ন পরম্ (ভিন্ন নহে) ॥ ২৪ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

নৃত্যন্তী তব বীক্ষণাঙ্গনগতা কালস্বভাবাদিভি- ভাবান্ 

সত্ত্বরজস্তমোগুণময়ানুন্সীলয়ন্তী বহুন। 

মামাক্রম্য পদা শিরস্যতিভরং সর্ম্মদয়ন্ত্যাতুরম্ 

মায়া তে শরণং গতোহস্মি নূহরে ত্বমেব তাং বারয় ॥ ২৫ ॥

অন্বয়- মায়া (মায়া) তব (আপনার) বীক্ষণাঙ্গনগতা (দৃষ্টিবিষয়গতা হইয়া) নৃত্যন্তী (নৃত্য করিতে করিতে) কালস্বভাবাদিভিঃ (কাল- স্বভাবাদিদ্বারা) সত্ত্বরজস্তমোগুণময়ান্ (সত্ত্বরজস্তমোগুণময়) বহুন্ ভাবান্ (বহু ভাব) উন্মীলয়ন্তী (প্রকাশ করতঃ) আতুরং (অসমর্থ) মাম্ (আমাকে) শিরসি (আমার মস্তকে) অতিভরং (অতি নিষ্ঠুরভাবে) আক্রম্য (আক্রমণপূর্বক) সম্মৰ্দ্দয়ন্তী (সম্মর্দিত করিতেছে)। নূহরে। (হে নূহরে।) [অহং-আমি] তে (আপনার) শরণং গতঃ (শরণাগত) অস্মি (হইলাম), ত্বম্ এব (আপনিই) তাং (তাহাকে) বারয় (নিবারণ করুন) ॥ ২৫ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

দণ্ডন্যাসমিষেণ বঞ্চিতজনং ভোগৈকচিন্তাতুরং 

সম্মুহ্যন্তমহর্নিশং বিরচিতোদ্যোগক্লমৈরাকুলম্। 

আজ্ঞালঙ্ঘিনমজ্ঞমজ্ঞজনতাসম্মাননাসম্মদং 

দীনানাথদয়ানিধান পরমানন্দ প্রভো পাহি মাম্ ॥ ২৬ ৷৷

অন্বয়- দীনানাথদয়ানিধান। (হে দীন-অনাথ-দয়ানিধান।) পরমানন্দ প্রভো! (হে পরমানন্দময় প্রভো।) দণ্ডন্যাসমিষেণ (দণ্ড ও সন্ন্যাস গ্রহণচ্ছলে) বঞ্চিতজনং (লোকবঞ্চনাকারী) ভোগৈকচিন্তাতুরং (কেবল ভোগচিন্তায় পীড়িত) অহর্নিশং (নিরন্তর) সম্মুহান্তম্ (অতিশয় মোহপরায়ণ), বিরচিতোদ্যোগক্লমৈঃ (স্বকৃত কর্মক্লেশদ্বারা) আকুলং (আকুল), আজ্ঞালঙ্ঘিনং (আপনার আজ্ঞালঙ্ঘনকারী) অজ্ঞম্ (অজ্ঞ), অজ্ঞজনতা- সম্মাননসম্মদং (অজ্ঞজনগণের নিকট সম্মানপ্রাপ্তিবশতঃ অতিশয় অহষ্কৃত বা আনন্দিত) মাম্ (আমাকে) পাহি (রক্ষা করুন) ॥ ২৬ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

অবগমং তব মে দিশ মাধব স্ফুরতি যন্ন সুখাসুখসঙ্গমঃ।

 শ্রবণ-বর্ণন-ভাবমথাপি বা নহি ভবামি যথা বিধিকিঙ্করঃ ॥ ২৭ ॥

অন্বয়- মাধব! (হে মাধব!) তব (আপনার) অবগমং (স্বরূপের জ্ঞান) অথাপি (এবং) শ্রবণবর্ণনভাবং (আপনার বিষয়ে শ্রবণ-কীর্তনে রতি) মে দিশ (আমাকে প্রদান করুন), যৎ (যাহাতে) সুখাসুখসঙ্গমঃ (বিষয়জনিয় সুখদুঃখের সঙ্গ) ন স্ফুরতি (না হয়), যথা বা (অথবা যাহাতে) বিধিকিঙ্কর: (প্রেমশূন্য বিধির কিঙ্কর) ন হি ভবামি (না হই) ॥ ২৭॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

দ্যুপতয়ো বিদুরন্তমনন্ত তে ন চ ভবান্ ন গিরঃ শ্রুতিমৌলয়ঃ। 

ত্বয়ি ফলন্তি যতো নম ইত্যতো জয় জয়েতি ভজে তব তৎপাদম্ ॥ ২৮ ॥

অন্বয়- অনন্ত! (হে অনন্ত!) দ্যুপতয়ঃ (দেবগণ) তে (আপনার) অন্তম (অন্ত) ন বিদুঃ (জানেন না) ভবান্ চ ন (আপনিও জানেন না)। যতঃ (যেহেতু) শ্রুতিমৌলয়ঃ গিরঃ (শ্রুতিসার বাক্যসকলের তাৎপর্য) ত্বয়ি ফলন্তি (আপনাতে পর্যবসিত হয়), ইতি অতঃ (সেইহেতু) নমঃ (আপনাকে নমস্কার)। “জয় জয়” ইতি (পুনঃ পুনঃ আপনার জয় কীর্তনপূর্বক) তব (আপনার) তৎপদম্ (দুর্লভচরণযুগল) ভজে (ভজন করি) ॥ ২৮ ॥

শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব

সর্ব্বশ্রুতিশিরোরত্ন-নীরাজিতপদাম্বুজম্। 

ভোগযোগপ্রদং বন্দে মাধবং কর্মিনম্রয়োঃ ॥ ২৯ ॥

অন্বয়- কর্ম্মিনপ্রয়োঃ (কর্মী ও ভক্তের পক্ষে) ভোগ-যোগপ্রদং (ভোগ ও ভক্তিযোগপ্রদ), সর্ব্বশ্রুতি-শিরোরত্ন-নীরাজিতপদাম্বুজং (যাঁহার পাদপদ্ম নিখিলশ্রুতিশিরোরত্নসমূহদ্বারা নীরাজিত) সেই মাধবং (শ্রীমাধবকে) বদে (আমি প্রণাম করি) ॥ ২৯ ॥

-------- শ্রীশ্রীনৃসিংহস্তব সমাপ্ত --------

Lord Jagannath praise and Gayatri: জগন্নাথ স্তূতি-গায়ত্রী মন্ত্র

Jagannath Praise And Gayatri

এই নিবন্ধে আমরা জানবো প্রভু Jagannathdev -এর স্তূতি, প্রণাম মন্ত্র ও গায়ত্রী মন্ত্র সম্পর্কে (Jagannath Praise And Gayatri)।

যখন আমরা “প্রভু জগন্নাথের” নাম শুনি আমাদের মনে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কথা মনে পরে যায়। প্রভু জগন্নাথ হচ্ছে স্বয়ং প্রভু কৃষ্ণ। দেবাদিদেব এবং বৈষ্ণব প্রধান স্বয়ং মহাদেব শাস্ত্রে শ্লোক নাম্বার 41, 42 পন্থিতে বলেছেন “কৃষ্ণ কৃষ্ণ জগন্নাথ”। কৃষ্ণের 108 নামের একটি নাম হচ্ছে প্রভু জগন্নাথ। যখন দেবাদিদেব মহাদেব বলছেন সেখানে আর সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

কলি কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জগন্নাথ রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কালের বিভিন্ন সময়কালে বিভিন্ন অবতার রূপে এই পৃথিবীতে আবির্ভাব হয়েছেন। এই সব অবতার বিশ্লেষণ করা এই নিবন্ধে সম্ভব নয়।

Jagannath Praise And Gayatri

Table of Contents

Jagannath Praise And Gayatri: স্তূতি, প্রণাম মন্ত্র ও গায়ত্রী

জগন্নাথ হচ্ছেন এই জগতের নাথ। নাথ হচ্ছে পালক। এই জগতের পালক হচ্ছেন প্রভু জগন্নাথ। প্রভু জগন্নাথের সেবা এবং ধ্যানের মাধ্যমে (Jagannath Praise And Gayatri) আমরা আমাদের জীবনে আধ্যাত্বিকতা, মনের শান্তি বাড়িয়ে তুলতে পারি।

যেহেতো তিনি এই জগতের পালনকর্তা তিনি আমাদেরকে সকল বিপদ ভয় থেকে বাঁচাবেন। জীবনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানকে লাভ করা। এটা আমাদের এক জন্মে সম্ভব হবেনা। কিন্তু যদি আমরা আজ থেকে শুরু করি সেটা আমাদের পরের জন্মেও থাকবে।

এই জীবনে আমরা যতোই অর্থ, নাম-যশ ও প্রতিপত্তি, গাড়ি-বাড়ি উপার্জন করিনা কেন পরের জনমে আমাদেরকে সেই শুন্য থেকে শুরু করতে হবে। কিন্তু ভক্তি লাভ কখনো জন্মের পরিবর্তনে শেষ হয়ে যায় না। যতটুকু পর্যন্ত আমরা ভক্তি লাভ করবো, পরের জনমে সেখান থেকে আমাদের শুরু হবে।

তাই আমাদের উচিত নিত্য প্রভু জগন্নাথের স্তূতি ও গায়ত্রী পাঠ (Jagannath Praise And Gayatri) করা।  এটাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা।

Jagannath Praise And Gayatri: প্রভু জগন্নাথ স্তব

প্রভু জগন্নাথ স্তব

নমস্তে প্রভু জগন্নাথ, অনাথ জনঙ্কর নাথ। 

নমস্তে প্রভু বাসুদেব, ভকত জনঙ্ক বান্ধব। 

নমন্তে প্রভু ঋষিকেশ, ভকত জনঙ্ক বিশ্বাস। 

নমস্তে প্রভু বিশ্বরূপী, সকল হৃদি অছ ব্যাপি।

 সৃষ্টি প্রলয় অন্তকরু, এসর্ব গর্ভরে সংহারু। 

অশেষ কোটি বসুন্ধরী, তোর হৃদরে ছন্তি পুরি। 

চউদ ভুবন পাটণা, এ সর্ব তোহরি রচনা। 

তুব্রহ্মা রুদ্র বিষ্ণু তুহি, তো বিনু অন্য গতি নাই। 

সৃষ্টি যাহার খেলঘর, অশেষ মায়া জীব পার। 

তোহার নিঃশ্বাস মরুত, দেবে হোইলে তহুঁ জাত। 

তুহিটি দেব অগ্নি ইন্দ্র, নয়নু জাত সূর্য্য চন্দ্র। 

ভুজরু অনন্ত মুরতি, কণ্ঠরু জাত সরস্বতী। 

সদা চঞ্চল নিদ্রা নাহি, এরূপে শূন্যে অছরহি। 

এমন্ত অশেষ মহিমা, কে জাণিপারে গুণসীমা। 

তো নাম করুথিলে লয়, কোটি এ জন্ম পাপক্ষয়। 

নাম ঘোষিলে সর্বসিদ্ধি, খণ্ডই রোগ শোক ব্যাধি। 

আরও ভঞ্জন তো বানা, আতংগ কালে বজ্র সেহ্না। 

হোইল দশ অবতার, নাশিল মেদিনীর ভার। 

দুষ্ট নিবারি সন্থ পালু, তুনাথ পরম দয়ালু। 

তু অটু দরিদ্রংক ধন, তোতে পুজন্তি জ্ঞানীজন। 

সতী যুবতীঙ্কর মনে, নিজর স্বামী থান্তি যেহ্নে। 

সেহি প্রকারে মোর মন, তোঠারে রহু ভগবান। 

এমন্ত ভাবে কলে স্তুতি, প্রসন্ন হোইব শ্রীপতি। 

এ স্তুতি যে জন শুনন্তি, যম তা পাশে ন মাড়ন্তি।

রাজ দণ্ডকু নাহি ভয়, অইরিমানে যান্তি ক্ষয়। 

ভূত পিশাচ প্রেতগণ, কতিকিন আসন্তি পূণ। 

অশুভ স্বপন দেখিব, কি অবা গ্রহপীড়া থিব। 

এ স্তুতি শ্রবণে হুঅই, বাঞ্ছা সিদ্ধি ভলে। 

বচই আয়ু বিধ্যা ধন, খণ্ডই সবু ক্লেশমান। 

গঙ্গা সহিতে সর্বতীর্থে, স্নাহান কালে ফল যেতে। 

এ স্তুতি পাটি সেতেফল, মনই বিষ্ণু পাদতল। 

এ স্তুতি হোইল সংপূর্ণ, শুণি সন্তোষ কর মন।

Jagannath Praise And Gayatri: জগন্নাথ গায়ত্রী মন্ত্র

ওঁ ভুর্ভুবঃ স্বঃ তৎসবিতুর্বরেণ্যং ভর্গোদেবস্য ধীমহি ধিয়োয়োনঃ প্রচোদয়াৎ

Jagannath Praise And Gayatri: কৃষ্ণ জগন্নাথ অভিন্ন

কৃষ্ণ জগন্নাথ অভিন্ন

জয় জয় জগন্নাথ শচীর নন্দন। 

ত্রিভুবন করে যার চরণ বন্দন ।। 

নীলাচলে শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম-ধর। 

নদীয়া নগরে দণ্ড-কমণ্ডলু কর ।। 

কেহ বলে- ‘পুরবেতে রাবণ বধিলা।’ 

গোলোকের বৈভব-লীলা প্রকাশ করিলা।। 

শ্রীরাধার ভাবে এবে গোরা অবতার। 

‘হরে কৃষ্ণ’- নাম গৌর করিলা প্রচার ।। 

বাসুদেব ঘোষ বলে করি যোড় হাত। 

যেই গৌর সেই কৃষ্ণ সেই জগন্নাথ !!

Jagannath Praise And Gayatri: জয় জগন্নাথ

প্রভু জয় জগন্নাথ

জয় জগন্নাথ কালিঅসাআন্ত নীলতনু চকোড়োলা। 

মহাপ্রভু মহোদধী কূলে কল্পবট মূলে লগাইছ যে লীলা। ১। 

জয় জগন্নাথ সে লীলা মহিমা দেবে অগোচর কাহু জাণিবে মানব। 

মহাপ্রভু যাহাংক মহিমা অন্ত ন পাআন্তি কিঞ্চিতরে ব্রহ্মাশিব। ২। 

জয় জগন্নাথ ক্ষেত্র নীলাচলে শ্রী বড় দেউলে ভাই ভট্টশীঙ্ক মেলে। 

মহাপ্রভু ভক্তঙ্ক গহলে বসিছ নিশ্চলে পদু মকরন্দ গহলে। ৩।

জয় জগন্নাথ করি করাউছ মারুছ তারুছ সর্ব ঘটে অছ পুবি। 

মহাপ্রভু নিরক্ষ জনঙ্কু উদ্ধারিবা পাই। নাম নীলাদ্রী বিহারী। ৪। 

জয় জগন্নাথ কাহাকু করিছ রাজ রাজেশ্বরী কাহাকু কর ভিকারী। 

মহাপ্রভু কাহাকু দেইছ সরপুরী খিরী কেমরই ঝুরি ঝরি। ৫। 

জয় জগন্নাথ মাগু নাহি প্রভু কুবের সম্পদ মাণ্ড নাহি ইন্দ্রপদ। 

মহাপ্রভু যেতে সবু পাপ করিছি অধম কৃপা বলে কর ছেদ। ৬। 

জয় জগন্নাথ এতিকি মীনতি আহে লক্ষীপতি শ্রী মুখরু আজ্ঞা হেউ। 

মহাপ্রভু অন্তিম কালরে বিদায় বেলারে নাম ধরি জীব যাই। ৭। 

জয় জগন্নাথ কহে জয়কৃষ্ণ জোড়ি বেনিহস্ত আহে প্রভু মহাবাহু। 

মহাপ্রভু এ ভব সাগরু পারিকর প্রভু ভগত উদ্ধার হেউ। ৮। 

জয় জগন্নাথ মনী রুপ ধরি শঙ্খাসুর মারি বেদকু উদ্ধার কল। 

মহাপ্রভু বিধাতাঙ্ক হস্তে বেদকু সমর্পি জগতে টেক রাখিল। ৯। 

জয় জগন্নাথ কছপ রূপকু ধইল হে প্রভু আপণে হোই গরিষ্ঠ। 

মহাপ্রভু সসাগরা পৃথ্বী চক আকাররে। 

ধইল আপণা পৃষ্ঠ। ১০। 

জয় জগন্নাথ বরাহ রূপকু ধরি মহাপ্রভু বঢাইল নিজ কায়া। 

মহাপ্রভু গন্ত অগ্রে পৃথ্বি ধারণ করিল কেহি নজাণন্তি মায়া। ১১। 

জয় জগন্নাথ শুণিছি সত্যরে নৃসিংহ রূপরে হীরণ্যকু বিদারিল। 

মহাপ্রভু অসুর মানঙ্কু বিনাশ করিণ প্রহল্লাদকু তারিল। ১২। 

জয় জগন্নাথ বামন রূপকু ধরি মহাপ্রভু বলী ভুবনে চলিল। 

মহাপ্রভু তিনিপাদ ভূমী দান নেই প্রভু বলী পাতালে চাপিল। ১৩। 

জয় জগন্নাথ পশুরাম রূপে একবিংশবার পৃথিবী নিক্ষেত্রী কল। 

মহাপ্রভু পিতা আজ্ঞাপালি মাতাকু বধিল সংসারে যশ রাখিল। ১৪। 

জয় জগন্নাথ ত্রেতয়া যুগরে রাম অবতারে অহল্যাঙ্কু উদ্ধারিল। 

মহাপ্রভু রাবণ সবংশ নিধন করিণ সীতাঙ্কু উদ্ধার কল। ১৫। 

জয় জগন্নাথ দ্বাপর যুগরে কৃষ্ণ অবতারে কংসকু কল নিধন। 

মহাপ্রভু গোপীমানঙ্কর মনকু মোহিল সুদামাকু দেল ধন। ১৬। 

জয় জগন্নাথ গোপরে রোহিনী গর্ভু জাত হেল নাম তুম বলরাম। 

মহাপ্রভু শেষ নাগ রূপে ভাইঙ্ক সাঙ্গরে কল নানা লীলা মান। ১৭। 

জয় জগন্নাথ আহুরি শুণিছি ভারত যুদ্ধরে পান্ডব সপক্ষ হেল। 

মহাপ্রভু কৌরব সবংশ বিনাশ করিণ দুয্যোধনে শান্তিদেল। ১৮। 

জয় জগন্নাথ বৌদ্ধ রূপরে শ্রী নীলকন্দরে শঙ্খনাভি মণ্ডলরে। 

মহাপ্রভু মউন হোইণ উভা হোইঅছ ভাই ভউনী সাঙ্গরে। ১৯। 

জয় জগন্নাথ এ কলী যুগরে কলী অবতার হোইবে পরা আপণ। 

মহাপ্রভু বেনি হস্তে বারহাত খণ্ডাধরি ম্লেছ করিবে নিদ্ধন। ২০। 

জয় জগন্নাথ বেলু বেল পাপ ভারা বটুঅছি ধর্ম হেউঅছি উর্ণা। 

মহাপ্রভু ধর্ম সংস্তাপন কর প্রভু উড়ু পতিতপাবন বানা। ২১। 

জয় জগন্নাথ এহিপরি প্রভু নানা রূপ ধরি সংসার কর পালন। 

মহাপ্রভু তেণু জয় জগন্নাথ স্বামী বোলি ড়াকন্তি জগত জন। ২২। 

জয় জগন্নাথ এতিকি মীনতি আছে লক্ষ্মীপতি শ্রীমুখরু আজ্ঞা হেউ। 

মহাপ্রভু অন্তিম কালরে বিদায় বেলরে নামধরি জীবযাউ। ২৩। 

জয় জগন্নাথ কহে সরস্বতী ষোড়ী বেনি হস্ত আহে প্রভু মহাবাহু। 

মহাপ্রভু এ ভব সাগরু পারি কর প্রভু জগতু দ্ধার হেউ। ২৪। 

**জয় জগন্নাথ**

Jagannath Praise And Gayatri: শ্রী জগন্নাথ ভরসা

প্রভু জগন্নাথ ভরসা

ভোক লাগিলে কিএ অভড়া দেব শোষ লাগিলে টঙ্ক তোরাণি দেব তুমপরি আউ কিএ হেব, শ্রীকৃষ্ণ গোবিন্দ হরে মুরারে হেনাথ নারায়ণ বাসুদেব (৫ বার) 

শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু নিত্যানন্দ

হরে কৃষ্ণ হরে রাম শ্রীরাধে গোবিন্দ (৩ বার)

হরি বোল হরি বোল হরি বোল ভাই

হরিনামে তরি গলে জাগাই, মাধাই (৩ বার)

জয় গণেশ জয় গণেশ ত্রাহিমাং

শ্রীগণেশ শ্রীগণেশ রক্ষমাং (২ বার)

জগন্নাথ জগন্নাথ জগন্নাথ ত্রাহিমাং

মহাবাহু মহাবাহু মহাবাহু রক্ষমাং (২ বার)

বলভদ্র ভলভদ্র বলভদ্র তাহিমাং

বলভদ্র ভলভদ্র বলভদ্র রক্ষমাং (২ বার)

জয় সুভদ্রা জয় সুভদ্রা জয় সুভদ্রা ত্রাহিমাং

জয় সুভদ্রা জয় সুভদ্রা জয় সুভদ্রা রক্ষমাং (২ বার)

সুদর্শন সুদর্শন সুদর্শন তাহিমাং সুদর্শন সুদর্শন সুদর্শন রক্ষমাং

মহালক্ষী মহালক্ষী মহালক্ষী ত্রাহিমাং মহালক্ষী মহালক্ষী মহালক্ষী রক্ষমাং।

শ্রীমান নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ বদ্রি নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

লক্ষী নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ বিষ্ণু নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

রবি নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ সূর্য্য নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

কৃষ্ণ নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ রাম নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

শিব নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ হরি নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

রুদ্র নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ গুরু নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

ত্রাহি নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ রক্ষ নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

সর্ব নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ শ্রীমান নারায়ণ নারায়ণ নারায়ণ

কপূর গৌরং করুণাবতারং সংসার সারং ভুজগেন্দ্র হারং

সদা বসতং হৃদয়ার বিন্দে ভবং ভবানী সহিতং নমামি

আত্তা বিষর্ণা শিথিলাং চভিতা  ঘোরেষু চ ব্যধিষু বর্তমানাঃ 

সংকীত্যা নারায়ণ শব্দমাত্রং  বিমুক্তা দুঃখা সুখিনো ভবন্তিঃ

শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভু কি জয় বলভদ্র ঠাকুরকি জয় 

সুভদ্রা মাতা কি জয়  নীলচক্র কি জয় 

সত সংঘ কি জয় আজির আনন্দ কি জয় 

ওঁ ভগবৎ বাসুদেবায়! পুরুষোত্তমায়। জয় জগন্নাথ জয় রাধাকান্ত

FAQs

Chandan Yatra কবে হয়?

অক্ষয় তৃতীয়ায় (Akshaya Tritiya) আরম্ভ হইয়া 21 দিন থাকে। মদনমোহনকে চন্দনে লিপ্ত করিয়া নরেন্দ্র সরোবরে নৌকায় ভ্রমণ করানো হয়। Chandan yatra একটি মহোৎসব, শ্রীকৃষ্ণকে আনন্দ দেওয়ার একটা উৎসব।

21 -দিন শ্রীকৃষ্ণকে চন্দন মাখিয়ে রাখা হয়।  ভারতের অনেক রাজ্যে এই Chandan Yatra -এর উৎসবের সময় অনেক মন্দিরে প্রভু শ্রীকৃষ্ণকে নৌকা বিহার করানো হয়।

Chandan Yatra image

জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমাতে স্নানবেদীর উপর বিগ্রহ সকলকে রোহিণী গুপ্তের জল দ্বারা স্নান করানো হয়, লক্ষীদেবী তখন চাহানি মন্ডপ থেকে এই দৃশ্য দর্শন করিতে থাকেন। তৎপরে ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে পক্ষকাল অবস্থান করেন। এই সময় দেবতার জ্বর হওয়ায় এক পক্ষকাল দরজা ও পাকশালা বন্ধ থাকে।

শ্রাবণ মাসের শুরু একাদশী হইতে পূর্ণিমা পর্যন্ত এই উৎসব হয়।

আষাঢ়ের শুক্লপক্ষীয় পুষ্যানক্ষত্রযুক্তা দ্বিতীয়াতে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা হইয়া থাকে। যে সব ভক্তরা সেই দিনে বহু বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ ভোজন সেবা করেন, তারা ভগবানের অত্যন্ত প্রীতি হন।

Gayatri mantras of various Gods and Goddesses: গায়ত্রী মন্ত্র

Gayatri_mantras

যে কোনো মহাবিদ্যার সাধনা তখনই পূর্ণ হয় যখন সেই দেবীর গায়ত্রী মন্ত্র (Gayatri mantras) জপ করা হয়। এতে মহাশক্তির বাস্তবিক স্বরূপের দিকদর্শন হয়। সমস্ত দেব দেবীর গায়ত্রী মন্ত্র দ্বারা করা যায়। তারফলে শীঘ্রই সিদ্ধিলাভ করা যায় এবং সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়। নিম্নে সমস্ত গায়ত্রী মন্ত্রগুলো (Gayatri mantras) উল্লেখ করা হয়েছে।

Gayatri mantras

Gayatri mantras: গায়েত্রী মন্ত্র পাঠের ফল

সমস্ত দেব দেবীর আরাধনার  মাধ্যমে বিশ্বব্রহ্মান্ডের কল্যাণ রক্ষা হবে এবং এই সব দেব দেবীরা পূজিত হবে। জগৎ সংসারে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয়ের উক্ত দেব এবং দেবীর পূজা, গায়ত্রী মন্ত্র (Gayatri mantras) পাঠের মাধ্যমে মনের আশা, জীবনের সাফল্য উন্নতি বৃদ্ধি পাবে।

গায়ত্রী মন্ত্রগুলো (Gayatri mantras)

Table of Contents

1) চামুণ্ডা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

চামুণ্ডা গায়ত্রী

ওঁ ঘোররাবায়ৈ বিদ্মহে মুণ্ডমালিন্যৈ ধীমহি তন্নো চামুণ্ডাঃ প্রচোদয়াৎ।

2) শরভ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ পক্ষীরাজায় বিদ্মহে শরভেশ্বরায় ধীমহিঃ তন্নো শবভঃ প্রচোদয়াৎ।

3) শান্তা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ ভূতাধিপায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহিঃ তন্নঃ শান্তাঃ প্রচোদয়াৎ।

4) সরস্বতী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

সরস্বতী গায়ত্রী

ওঁ সরস্বত্যৈ বিদ্মহে ব্রহ্মপুত্র্যৈ ধীমহিঃ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

5) রাধা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

রাধা গায়ত্রী

ওঁ বৃষভানুজায়ৈ বিদ্মহে কৃষ্ণপ্রিয়ায়ৈ ধীমহিঃ তন্নো রাধাঃ প্রচোদয়াৎ।

6) গৌরী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

গৌরী গায়ত্রী

ওঁ সুভগায়ৈ বিদ্মহে কামমালায়ৈ ধীমহিঃ তন্নো গৌরীঃ প্রচোদয়াৎ।

7) যন্মুখ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাসেনায়ৈ ধীমহিঃ তন্নঃ ষন্মুখঃ প্রচোদয়াৎ।

8) নন্দী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

নন্দী গায়ত্রী

ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহিঃ তন্নো নন্দীঃ প্রচোদয়াৎ।

9) সীতা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

সীতা গায়ত্রী

ওঁ জনকজায়ৈ বিদ্মহে রামপ্রিয়ায়ৈ ধীমহিঃ তন্নঃ সীতাঃ প্রচোদয়াৎ।

10) শক্তি গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

শক্তি গায়ত্রী

ওঁ সর্বসম্মোহিন্যৈ বিদ্মহে বিশ্বজনন্যৈ ধীমহিঃ তন্নঃ শক্তিঃ প্রচোদয়াৎ।

11) গরুড় গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

গরুড় গায়ত্রী

ওঁ গরুড়ায় বিদ্মহে সুপর্ণায় ধীমহিঃ তন্নো গরুড়ঃ প্রচোদয়াৎ।

12) হনুমান গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

হনুমান গায়ত্রী

ওঁ অঞ্জনীজায় বিদ্মহে বায়ুপুত্রায় ধীমহিঃ তন্নঃ হনুমানঃ প্রচোদয়াৎ।

13) পরশুরাম গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ জামদগ্নায় বিদ্মহে মহাবীরায় ধীমহিঃ তন্নঃ পরশুরামঃ প্রচোদয়াৎ।

14) অগ্নি গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ মহাজ্বালায় বিদ্মহে অগ্নিমল্লায় ধীমহিঃ তন্নো অগ্নিঃ প্রচোদয়াৎ।

15) গুরু গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

গুরু_গায়ত্রী

ওঁ গুরুদেবায় বিদ্মহে পরব্রহ্মায় ধীমহিঃ তন্নো গুরুঃ প্রচোদয়াৎ।

16) ইন্দ্র গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ইন্দ্র গায়ত্রী

ওঁ সহস্রনেত্রায় বিদ্মহে বজ্রহস্তায় ধীমহিঃ তন্নো ইন্দ্রঃ প্রচোদয়াৎ।

17) আকাশ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ আকাশায় বিদ্মহে নভোদেবায় ধীমহিঃ তন্নো গগনঃ প্রচোদয়াৎ।

18) পৃথিবী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ পৃথ্বী দেব্যৈ বিদ্মহে সহস্রমূর্ত্যে ধীমহিঃ তন্নো মহী প্রচোদয়াৎ।

19) বায়ু গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ পবন পুত্রায় বিদ্মহে সহস্রমূর্ত্যে ধীমহিঃ তন্নো বায়ু প্রচোদয়াৎ।

20) সুদর্শন গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ সুদর্শনায় বিদ্মহে মহাজ্বালায় ধীমহিঃ তন্নঃ চক্রঃ প্রচোদয়াৎ।

21) রুদ্রাজ্ঞী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ রুদ্রচণ্ডিকায়ৈ বিদ্মহে পূর্ণফল দায়িন্যৈ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

22) তুলসী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ শ্রীত্রিপুরায় বিদ্মহে তুলসী পত্রায় ধীমহিঃ তন্নঃ তুলসী প্রচোদয়াৎ।

23) দূর্গা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

দূর্গা গায়ত্রী

ওঁ হ্রীং দুং দুর্গায়ৈ বিদ্মহে অষ্টাকক্ষরায়ৈ ধীমহিঃ তন্নঃ চণ্ডী প্রচোদয়াৎ।

24) চণ্ডিকা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ মহামায়ৈ বিদ্মহে চণ্ডিকায়ৈ ধীমহি তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

25) শিব গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

শিব গায়ত্রী

ওঁ মহাদেবায় বিদ্মহে রুদ্রমূর্তয়ে ধীমহিঃ তন্নঃ শিব প্রচোদয়াৎ।

26) ব্রহ্মা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ বেদাত্মনে বিস্ময়ে হিরণ্যগর্ভায় ধীমহিঃ তন্নো ব্রহ্মা প্রচোদয়াৎ।

27) বিষ্ণু গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ ত্রৈলোক্যমোহনায় বিদ্মহে কামসেবায় ধীমহিঃ তন্নো বিষ্ণুঃ প্রচোদয়াৎ।

28) নারায়ণ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ নারায়ণায় বিদ্মহে বাসুদেবায় ধীমহিঃ তন্নো বিষ্ণু প্রচোদয়াৎ।

29) রুদ্র গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহিঃ তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়া।

30) নৃসিংহ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

নৃসিংহ গায়ত্রী

ওঁ বজ্রনখায় বিদ্মহে তীক্ষ্ণ দংষ্ট্রায় ধীমহিঃ তন্নো নরসিংহঃ প্রচোদয়াৎ।

31) হয়গ্রীব গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ বাগীশ্বরায় বিদ্মহে হ্যগ্রীবায় ধীমহিঃ তন্নো হংসঃ প্রচোদয়াৎ।

32) গোপাল গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

গোপাল গায়ত্রী

ওঁ কৃষ্ণায় বিদ্মহে দামোদরায় ধীমহিঃ তন্নো বিষ্ণু প্রচোদয়াৎ।

33) রাম গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

রাম গায়ত্রী

ওঁ দশরথায় বিদ্মহে সীতাবল্লভায় ধীমহিঃ তন্নো রামঃ প্রচোদয়াৎ।

34) গণেশ গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

গণেশ গায়ত্রী

ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহিঃ তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ।

35) দক্ষিণামূর্তি গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ দক্ষিণামূর্তয়ে বিদ্মহে ধ্যানস্থায় ধীমহি তন্নো ধীশঃ প্রচোদয়াৎ।

36) সূর্য গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ আদিত্যায় বিদ্মহে মার্তণ্ডায় ধীমহিঃ তন্ন সূর্য প্রচোদয়াৎ।

37) কামদেব গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ কামদেবায় বিদ্মহে পুষ্পবাণায় ধীমহিঃ তন্নো অনঙ্গ প্রচোদয়াৎ।

38) কালী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

কালী গায়ত্রী
Belur Math Kali Puja

ওঁ কালিকায়ৈ বিদ্মহে শ্মশানবাসিন্যৈ ধীমহি তন্নো ঘোরে প্রচোদয়াৎ।

39) তারা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

তারা গায়ত্রী
Tarapith Mandir

ওঁ তারায়ৈ বিদ্মহে মহোগ্রায়ৈ ধীমহিঃ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

40) ত্রিপুরসুন্দরী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ ঐং ত্রিপুরা দেব্যৈ বিদ্মহে ক্লীং কামেশ্বর্য্যে ধীমহিঃ তন্নঃ ক্লিন্যে প্রচোদয়াৎ।

41) ভুবনেশ্বরী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ভুবনেশ্বরী গায়ত্রী
Saradapitha Ramkrishna Mission

ওঁ নারায়ণ্যৈ বিদ্মহে ভুবনেশ্বর্য্যে ধীমহিঃ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

42) ভৈরবী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ ত্রিপুরায়ৈ বিদ্মহে মহাভৈরব্যৈ ধীমহিঃ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

43) ছিন্নমস্তা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ বৈরোচন্যৈ বিদ্মহে ছিন্নমস্তায়ৈ ধীমহিঃ তন্নো দেবী প্রচোদয়াৎ।

44) ধূমাবতী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ ধূমাবত্যৈ বিদ্মহে সংহারিণ্যৈ ধীমহিঃ তন্নো ধূমা প্রচোদয়াৎ।

45) বগলামুখী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ হ্রীং ব্রহ্মাস্ত্রায় বিদ্মহে স্তম্ভনবাণস্য ধীমহিঃ তন্নো বগলা প্রচোদয়াৎ।

46) মাতঙ্গী গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ মাতঙ্গিণ্যৈ বিদ্মহে উচ্ছিষ্ট চাণ্ডালিন্যৈ ধীমহিঃ তন্নো বগলা প্রচোদয়াৎ।

47) কমলা গায়ত্রী মন্ত্রঃ-

ওঁ মহাদেব্যৈ বিদ্মহে বিষ্ণুপতৈ্যু ধীমহিঃ তন্নো লক্ষ্মী প্রচোদয়াৎ।

48) জগন্নাথ গায়ত্রী মন্ত্র মন্ত্রঃ-

সমাপ্ত

Dhyan mantras of various deities: জানুন বিভিন্ন দেব-দেবীর ধ্যান মন্ত্র

dhyan mantra Dhyan mantras of various deities

যে কোনো দেব দেবীর পূজা ঘরে করতে গেলে সেই সব দেব দেবীর ধ্যান মন্ত্র ও প্রণাম মন্ত্র (Dhyan mantras) জানা উচিৎ। সেই পূজা আপনি নিজেই করুন অথবা পুরোহিত দিয়ে করুন। ধ্যান মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ঘরোয়া পূজায় ও বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। যেকোনো পূজা শুরু ও সমাপ্ত করতে প্রণাম মন্ত্র, ধ্যান মন্ত্র দিয়ে করতে হয়। 

তাছাড়া যারা বিশেষ বিশেষ দেব-দেবীর নিত্য ধ্যান অথবা জপ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ও সঠিক মন্ত্র জানা অবশ্যই দরকার। আমরা এই সব ভক্তদের কথা মাথায় রেখে এই সব দরকারি মন্ত্রগুলো (Dhyan mantras) এখানে উল্লেখ করেছি। এই সব মন্ত্রগুলো বিভিন্ন বিশ্বস্ত সূত্র থেকে অনুসন্ধান করে এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।  

Dhyan mantras

Table of Contents

|| ধ্যান মন্ত্র বীজমন্ত্র সমূহ (Dhyan mantras) ||

|| সূর্য্যের ধ্যান ||

ওঁ রক্তাঙ্গু জাসনমশেষ-গুণৈক-সিন্ধুৎ ভানুৎ সমস্তজগতামধিপৎ ভজামি। পদ্মদ্বয়া ভয়বরান্ দধতং করাজৈ- মাণিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম্ ॥ 

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ ভগবতে শ্রীসূৰ্য্যায় নমঃ। বীজমন্ত্র ও স্ত্রী। মুলমন্ত্র হ্রীং হংসঃ, অথবা ও ঘৃণিঃ সূর্য্য আদিত্যঃ।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশং কাশ্মপেয়ং মহাদ্যুতিম্। ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্।।

|| বিষ্ণুর ধ্যান ||

বিষ্ণুর ধ্যান

ধ্যান মন্ত্রঃ- ওঁ ধ্যেয়ঃ সদা সবিতৃমণ্ডলমধ্যবর্তী, নারায়ণঃ সরসিজাসনসন্নিবিষ্টঃ। কেষুৎবান্ মকর (কনক) কুণ্ডলবান্ কিরীটী, হারী হিরণ্ময়বপুর তশঙ্খচক্রঃ ||

পূজার মন্ত্র:- ওঁ নমঃ শ্রীবিষ্ণবে নমঃ। মূলমন্ত্র-ওঁ নমো নারায়ণায়।

বীজমন্ত্রঃ- ওঁ । হোমের মন্ত্র-ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদৎ, সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ, দিবীব চক্ষুরাততং স্বাহা।

তুলসী দিবার মন্ত্রঃ- ওঁ নমস্তে বহুরূপার বিষ্ণবে পরমাত্মনে স্বাহা। বিষ্ণুর পূজার পর লক্ষ্মী, সরস্বতী ও গরুড়ের পূজা করিবে।

প্রার্থনা মন্ত্রঃ- ওঁ পাপোহহং পাপকর্মাহং পাপাত্মা পাপসম্ভবঃ। ত্রাহি মাং পুণ্ডরীকাক্ষ সর্ব্বপাপহরো ভব।। নমঃ কমলনেত্রায় হরয়ে পরমাত্মনে। অশেষ-ক্লেশ-নাশায় লক্ষ্মীকান্ত নমোহস্ত তে।। হরে মুরারে মধুকৈটভারে, গোপাল গোবিন্দ মুকুন্দ শৌরে। যজ্ঞেশ নারায়ণ কৃষ্ণ বিষ্ণো, নিরাশ্রয়ং মাং জগদীশ রক্ষ।।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ নমো ব্রহ্মণ্যদেখায় গোব্রাহ্মণ-হিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ ॥

|| শিবের ধ্যান ||

শিবের ধ্যান

শিবপূজা বিধিতে ধ্যান ও প্রণাম মন্ত্রঃ-

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং গতিত্বৎ পরমেশ্বর ।। ওঁ নমস্তুভ্যৎ বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে। নমঃ পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তার বৈ নমঃ ।। ওঁ নমস্যে ত্বাৎ মহাদেব লোকানাং গুরুমীশ্বরম্। পুংসামপূর্ণকামানাং কামাপুরামরাচ্ছি_পম্।

শিবের প্রচলিত ধ্যান মন্ত্রঃ-

ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতংসং, রত্নাকল্পোজ্জ্বলাঙ্গং পরশু-মৃগ-বরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্। পদ্মাসীনং সমন্তাং স্তুতমমরগণৈব্যাঘ্রকীর্ত্তিং বসানং। বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চবক্তং ত্রিনেত্রম্।।

বীজমন্ত্রঃ- হৌং। বিশ্বপত্রদানের বিশেষ মন্ত্র-ও এ্যম্বকং বজামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্দ্ধনম্। ঊর্ধ্বারুকমিব বন্ধনার ত্যোমু ক্ষীরমামৃতাৎ স্বাহা।

ক্ষমাপ্রার্থনা- আবাহনং ন জানামি নৈব জানামি পূজনম্। বিসর্জনং ন জানামি ক্ষমস্ব পরমেশ্বর ।

শিবের প্রণাম মন্ত্রঃ-

ওঁ মহাদেবং মহাত্মানং মহাযোগিনমীশ্বরম্। মহাপাপহরং দেবং মকারায় নমো নমঃ।। ওঁ নমস্তুভ্যং বিরূপাক্ষ নমস্তে দিব্যচক্ষুষে। নমঃ পিণাকহস্তায় বজ্রহস্তায় বৈ নমঃ।। নমঃ ত্রিশূলহস্তায় দণ্ডপাশাংসিপাণয়ে। নমঃ স্ত্রৈলোক্যনাথায় ভূতানং পতয়ে নমঃ।। ওঁ বাণেশ্বরায় নরকার্ণবতারণায়। জ্ঞানপ্রদায় করুণাময়সাগরায়।। কপূরকুন্দধবলেন্দুজটাধরায়। দারিদ্র – দুঃখহনায় নমঃ শিবায়।। নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর।। মহামৃত্যুঞ্জয় শিবের ধ্যান শিবং শান্তং মহাদেবং লোকানুগ্রহাকারকম্। শুদ্ধস্ফটিকসঙ্কাশং সহস্রাদিত্যবর্চসম্।। খড়াশূলবরাভীতি পঞ্চবক্তং সুশোভনম্। সর্ব্বরোগবিনাশার্থং ভজেহহং ভুবণেশ্বরম্।।

|| মনসার ধ্যান ||

ধ্যান মন্ত্রঃ- ওঁ দেবীমস্বা-মহীনাং শশধরবদনাং চারুকান্তিং বদান্যাৎ। হৎসা রূঢ়ামুদারাং সুললিতবসনাৎ সেবিতাৎ সিদ্ধিকামৈঃ। স্মেরাস্তাং মণ্ডিতাঙ্গীং কনকমণিগণৈন গিরত্বৈরনেকৈ- র্ব্বন্দেহহং সাষ্টনাগা-মুরুকুচযুগলাং ভোগিনীং কামরূপাম্ ॥ পূজার মন্ত্র- (ও) মনসাদেব্যৈ নমঃ। বীজমন্ত্র-মং। অন্তনাগ, আস্তীক ও অরুৎকারুমুনির পুজা করিতে হয়। মনসাপূজায়

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ আস্তীকস্থ্য মুনের্মাতা ভগিনী বাসুবেস্তণা। জরুৎকারুমুনেঃ পত্নী মনসাদেবি নমোহস্ত তে।।

|| মঙ্গলচণ্ডীর ধ্যান ||

ধ্যান মন্ত্রঃ- ওঁ বৈষা ললিতকান্তাখ্যা দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা। বরদাভয়হস্তা চ দ্বিভুজা গৌরদেহিকা।। রক্তপদ্মাসনস্থা চ মুকুটোজ্জল-মণ্ডিতা। রক্তকৌধেয়বসনা স্মিতবক্তা শুভাননা। নবযৌবন-সম্পন্না চার্জঙ্গী ললিতপ্রভা।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ মঙ্গলচণ্ডিকায়ৈ দেব্যৈ নমঃ। বীজমন্ত্র হ্রীং। মূলমন্ত্র-ও দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। আবাহনে-মঙ্গলচণ্ডিকে দেবি..।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়নি নমোহস্ত তে।।

|| দক্ষিণাকালীর ধ্যান ||

দক্ষিণাকালীর ধ্যান

ধ্যান মন্ত্রঃ-  ওঁ করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্। কালিকাং দক্ষিণাৎ দিব্যাৎ মুণ্ডমালাবিভূষিতাম্। সদ্যশ্চিন্নশিরঃ-খড়গ-বামাধোর্জ করাঘুজাম্। অভয়ং বরদঞ্চৈব দক্ষিণোন্ধাধ-পাণিকাম্ ।। মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্। কণ্ঠাবসক্তমুণ্ডালী-গলস্রুধির-চর্চ্চিতাম্ ॥ কর্ণাবতংসতানীত-শবযুগ্ম-ভয়ানকাম্। ঘোরদংষ্ট্রাং করালাম্বাং পীনোন্নতপয়োধরাম্ ।। শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীৎ হসম্মুখীম্। স্বকদ্বয়-গলদ্রক্ত-ধারা-বিস্ফুরিতাননাম্।। ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশানালয়বাসিনীম্। বালার্ক মণ্ডলাকার লোচনত্রিতয়ান্বিতাম্।। দস্তুরাং দক্ষিণব্যাপি লম্বমান-কচোচ্চয়াম্। শবরূপ-মহাদেব হৃদয়োপরি-সংস্থিতাম্।। শিবাভির্যোররাবাভিশ্চতুদিকু সমন্বিতাম্। মহাকালেন চ সমং বিপরীত-রভাতুরাম্ ।। সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরানন-সরোরুহাম্। এবং সঞ্চিন্তয়েৎ কালীং ধৰ্ম্মকাম-সমৃদ্ধিদাম্।।

প্রকারান্তর-

[ যাঁহারা ‘ক্রীৎ’ এই একাক্ষর বীজমন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছেন, তাঁহারা এই মন্ত্র বলিয়া কালীর ধ্যান করিবেন]।

ওঁ শবারূঢ়াৎ মহাভীমাং ঘোরদংষ্ট্রাং বরপ্রদাম্। হাস্যযুক্তাং ত্রিনেত্রাঞ্চ কপাল-কর্তৃকাকরাম্ ।। মুক্তকেশীং ললজ্জিহ্বাৎ পিবস্তীৎ রুধিরৎ মুহুঃ। চতুর্ব্বাহু-সমাযুক্তা বরাভয়করাং স্মরেৎ ।।

পূজার মন্ত্রঃ-  ওঁ দক্ষিণাকালিকায়ৈ নমঃ। বীজমন্ত্র হ্রীং। মূলমন্ত্র -ক্রীৎ, অথবা ক্রীং ক্রীং ক্রীং হং হং হ্রীং হ্রীং দক্ষিণে কালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীৎ হৎ হৎ হ্রীং হ্রীং স্বাহা। আবাহনে দক্ষিণে কালিকে দেবি ইত্যাদি। দক্ষিণাকালিকার পূজার সময় শবরূপী শিবকে পুজা করিতে হয়। শবরূপী শিব-অহাপ্রেত-পদ্মাসন’। পূজার মন্ত্র-হ ধৌঃ সদাশিব মহাপ্রেতপদ্মাসনায় নমঃ।

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ- ওঁ আয়ুৰ্দ্দেহি যশো দেহি ভাগ্যং ভগবতি দেহি মে। পুত্রান্ দেহি ধনৎ দেহি সর্ব্বান্ কামাংশ্চ দেহি মে।১ দুর্গোত্তারিণি দুর্গে ত্বং সর্ব্বাশুভ-নিবারিণি। ধর্মার্থমোক্ষদে দেবি নিত্যং মে বরদা ভব।।২ কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিণি। ধৰ্ম্মকামপ্রদে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে॥৩

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্ব্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্ত তে।|

**প্রত্যেক শক্তিমূর্তিকেই এই মন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারা যায় এবং সকলেরই প্রণাম মন্ত্র ‘সর্ব্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে’ ইত্যাদি। কালীপুজার পরে মহাকাল ভৈরবের পুজা করিবে, কারণ এই মহাকাল শিবেরই মুর্তিবিশেষ।**

|| জগদ্ধাত্রীর ধ্যান ||

জগদ্ধাত্রীর ধ্যান
Ramakrishna Mission

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ সিংহস্কন্ধাধিসংরূঢ়াৎ নানালঙ্কারভূষিতাম্। চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগযজ্ঞোপবীতিনীম্ ॥ শঙ্খ-শাঙ্গ-সমাযুক্ত-বামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্। চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ ধারয়ন্তীঞ্চ দক্ষিণে।। রক্তবস্ত্রপরীধানাং বালার্কসদৃশীতহুম্। নারদাজৈর্মু নিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্ ।। ত্রিবলীবলয়োপেত-নাভিনাগমৃণালিনীম্। রত্নদ্বিপময়দ্বীপে সিংহাসন-সমন্বিতে। প্রফুল্ল-কমলারূঢ়াং ধ্যায়েতাং ভবগেহিনীম্ ।।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ জগদ্ধাত্রীদুর্গায়ৈ নমঃ।

বীজমন্ত্রঃ- যুৎ।

মূলমন্ত্রঃ- হংহৎ স্বাহা। আবাহনেঃ- জগদ্ধাত্রীদুর্গে দেবি ইত্যাদি। প্রণাম ও পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র দক্ষিণাকালীর ন্যায়। বাহন সিংহ।

|| অন্নপূর্ণার ধ্যান ||

অন্নপূর্ণার ধ্যান মন্ত্র, প্রণাম মন্ত্র বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে Ghoruapuja– এর ঘরে অন্নপূর্ণা পূজা পেইজে

|| মহাকালের ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ মহাকালং যজ্ঞেদ্দেব্যা দক্ষিণে ধূম্রবর্ণকম্। বিভ্রতৎ দণ্ডখটাঙ্গৌ দংষ্ট্রাভীমমুখং শিশুম্। ব্যাঘ্রচর্মাবৃতকটিং তুন্দিলং রক্তবাসসম্। ত্রিনেত্রমুগ্ধকেশঞ্চ মুণ্ডমালা-বিভূষিতম্। জটাভার-লসচ্চন্দ্র-খণ্ডযুগ্রং অবন্নিভম্ ।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ মহাকালভৈরবায় নমঃ। মূলমন্ত্র-হৎ ক্ষোৎ যাং রাং লাং বাং ক্রোং মহাকালভৈরব সর্ব্ববিমান্ নাশয় নাশব হ্রীং শ্রীং ফট্ স্বাহা। মহাকালের পূজা করিয়া পুনর্ব্বার পঞ্চোপচারে কালীর পূজা করিতে হয়।

|| গঙ্গামার ধ্যান ||

গঙ্গামার ধ্যান
Belur math

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ সুরূপাং চারুনেত্রাঞ্চ চন্দ্রাযুতসমপ্রভাম্। চামরৈব্বীজ্যমানান্ত শ্বেতচ্চত্রোপশোভিতাম্।সুপ্রসন্নাৎ সুবদনাং করুণার্জ-নিজান্তরাম্। সুধাপ্লাবিত ভূপৃষ্ঠা-মাদ্রগন্ধানুলেপনাম্। ত্রৈলোক্যনমিতাৎ গঙ্গাৎ দেবাদিভিরভিই তাম্।। পুজার মন্ত্র-ও গঙ্গায়ৈ নমঃ। বীজমন্ত্র-গাং। 

মূল মন্ত্রঃ- গাৎ গঙ্গায়ৈ বিশ্বমুখ্যায়ৈ শিবামৃতায়ৈ শান্তিপ্রদায়িন্যৈ নারায়ণ্যৈ নমো নমঃ।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ নমো নারায়ণ্যৈ দশহরায়ৈ গঙ্গায়ৈ নমো নমঃ, ওঁগঙ্গায়ৈ দেব্যৈ নমঃ।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ সদ্যঃ পাতকসংন্ত্রী সন্ধেম্মাদুঃখবিনাশিনী। সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈল্প পরমা গতিঃ।

|| মাতুলসীর ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ ধ্যায়ে দেবীং নবশশিমুণীং পঞ্চবিম্বাধরোধীম্, বিস্তোতন্তীৎ কুচযুগভরানম্রকল্পাঙ্গযষ্টিম্। ঈষদ্ধান্তাৎ ললিতবদনাৎ চন্দ্রসূর্যাগ্নিনেত্রাম্, শ্বেতাঙ্গীৎ তামভয়বরদাং শ্বেতপদ্মাসনস্থাম্॥

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ তুলসীদেব্যৈ নমঃ। তুলসীবৃক্ষে হরির পূজাও হয়। যন্ত্র, যথা-“ওঁ হররে নমঃ”।

তুলসী-স্নান মন্ত্রঃ-  ওঁ গোবিন্দবল্লভাং দেবীং ভক্তচৈতন্যকারিণীম্। আপয়ামি জগদ্ধাত্রীং বিষ্ণুভক্তিপ্রদায়িনীম্।।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ বৃন্দায়ৈ তুলসীদেব্যৈ প্রিয়ায়ৈ কেশবন্ত চ। বিষ্ণুভক্তিপ্রদায়িন্তৈ সত্যবত্যৈ নমো নমঃ॥

|| রামের ধ্যান ||

lored-ram

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ কোমলাঙ্গং বিশালাক্ষ-মিন্দ্রনীল-সমগ্র দম্। দক্ষিণাংশে দশরণং পুত্রাবেষ্টন-তংপরম্। পৃষ্ঠতো লক্ষ্মণং দেবং সচ্ছত্রং কনক প্রভম্ ।। পার্শ্বে ভরতশত্রুয়ৌ তালবৃন্ত-করাবুভৌ। অগ্রে ব্যগ্রৎ হনুমন্তং রামানুগ্রহকাঙ্ক্ষিণম্ ॥

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ শ্রীরামচন্দ্রায় নমঃ। বীজমন্ত্র-রাং। বাহন-হনুমান, ইহার পূজার মন্ত্র-ওঁ হনুমতে নমঃ।

প্রণাম মন্ত্রঃ- প্রণাম মন্ত্র

|| সীতার ধ্যান ||

ram-sita

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ নীলান্তোজ-দলাভিরাম-নয়নাং নীলাম্বরালঙ্কতাৎ, গৌরাঙ্গীৎ শরদিন্দু-সুন্দরমুখীৎ বিস্মের-বিস্বাধরাম্। কারুণ্যামৃতবর্ষিণীৎ হরিহরব্রহ্মাদিভিবন্দিতাৎ, ধ্যায়েৎ সর্ব্বজনে স্পিতার্থফলদাৎ রামপ্রিয়াং জানকীম্।।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ সীতায়ৈ দেব্যৈ নমঃ। বীজমন্ত্র-সীং।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ দ্বিভুজাং স্বর্ণবর্ণাভাং রামালোকন-তৎপরাম্। শ্রীরাম-বনিতাৎ সীতাৎ প্রণমামি পুনঃ পুনঃ।।

|| গুরুর ধ্যান ||

gurur-dhyan

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ ধ্যায়েচ্ছিরসি শুক্লাজে দ্বিনেত্রং দ্বিভুজং গুরুম্। শ্বেতাম্বর পরীধানং শ্বেত মাল্যান্ডলেপনম্। বরাভয়করং শান্তং করুণাময় বিগ্রহম্ ॥ বামেনোৎপলধারিণ্যা শ্যালিঙ্গিত বিগ্রহম্। স্মেরাননং সুপ্রসন্নং সাধকাণ্ডীষ্টদায়কম্।।

পূজার মন্ত্রঃ-  ওঁ শ্রীগুরবে নমঃ। বীজমন্ত্র। – ঐং।

প্রণাম মন্ত্রঃ-  ওঁ অখণ্ডমণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্। তৎপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ। অজ্ঞানতিমিরান্ধস্ত জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া। চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ।। গুরুব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। গুরুঃ সাক্ষাৎ পরং ব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ ।।

|| ব্রহ্মার ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ ব্রহ্মা কমণ্ডলুধর শুতুব ক্র শ্চতুর্ভুজঃ। কদাচিদ্রক্ত-কমলে হংসারূঢ়ঃ কদাচন।। বর্ণেন রক্তগৌরাঙ্গঃ প্রাংগুস্তঙ্গাঙ্গ উন্নতঃ। কমণ্ডলুর্বমিকরে ক্রবো হস্তে তু দক্ষিণে।। দক্ষিণাধস্তণা মালা বামাধশ্চ তথা ক্রচা। আজ্যস্থালী বামপার্শ্বে বেদাঃ সর্ব্বেহগ্রতঃ স্থিতাঃ ।। সাবিত্রী বামপার্শ্বস্থা দক্ষিণস্থা সরস্বতী। সর্ব্বে চ ঋষয়োহাগ্রে কুৰ্য্যাদেভিশ চিন্তনম্।।

পূজার মন্ত্রঃ-  ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ। বীজমন্ত্র-ব্রৌং।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ চতুর্ব্বদনসম্মস্থ-চতুর্ব্বেদ কুটুম্বিনে। দ্বিজানুষ্ঠের সৎকৰ্ম্ম-সাক্ষিণে ব্রহ্মণে নমঃ ।।

|| গোপালের ধ্যান ||

gopal

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ পঞ্চবর্ষ-মতিদৃপ্তমঙ্গনে ধাবমান মতিচঞ্চলেক্ষণম্। কিঙ্কিণীবলয়হার নূপুবৈ-রঞ্চিতং নমত গোপবালকম্ ।।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ গোপালার নমঃ। বীজমন্ত্র-ক্লীং।

মূলমন্ত্রঃ- গোপালায় স্বাহা।

প্রণাম মন্ত্রঃ-  ওঁ নীলোৎপলদলশ্যামং যশোদানন্দনন্দনম্। গোপিকানয়নানন্দং গোপালং প্রণমাম্যহম্।।

|| শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান ||

srikirishna

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ স্বরে বৃন্দাবনে রম্যে মোহরন্ত মনারতম্।গোবিন্দং পুণ্ডরীকাক্ষং গোপকণ্ঠাঃ সহস্রশঃ।আত্মনো বদনান্তোজে প্রেরিতাক্ষিমধুব্রতাঃ। পীড়িতাঃ কামবাণেন চিরমাশ্লেষণোৎসুকাঃ। মুক্তাহার-লসৎসপীন তুঙ্গস্তন ভরানতাঃ। শ্রস্ত ধম্মিল্ল-বসনা মদস্খলিত-ভাষণাঃ। দন্তপঙ্ক্তি প্রভোন্তাসি স্পন্দমানাধরাঞ্চিতাঃ। বিলোভয়ন্তী-বিবিধৈ-বিভ্রমৈর্ভাবগতিতৈঃ। ফুল্লেন্দীবর কান্তি-মিন্দুবদনৎ বর্হাবতংসপ্রিয়ম্। শ্রীবৎসাঙ্কমুদার কৌস্তভধরৎ পীতাম্বরং সুন্দরম্। গোপীনাং নয়নোৎপলার্জিত-তনুৎ গো-গোপ-সংঘাবৃতম্। গোবিন্দং কমলবেণুবাদনপরং দিব্যাঙ্গভূষং ভঙ্গে॥

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ শ্রীকৃষ্ণায় নমঃ। বীজমন্ত্র-ক্লীং।

মূলমন্ত্রঃ- ক্রীং গোপীজনবল্লভায় স্বাহা। প্রণাম মন্ত্র-বিষ্ণুর ন্যায়।

|| রাধিকার ধ্যান ||

Radhika Dhyan

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ অমল-কমল-কান্তিং নীলবন্ত্রাৎ সুকেশীং, শশধর-সম-বক্তাং খঞ্জনাক্ষীং মনোজ্ঞাম্। স্তনযুগ-গত-মুক্তা দামদীপ্তাং কিশোরীং, ব্রজপতি-সুতকান্তাৎ রাধিকা-মাশ্রয়েহহং।।

পূজার মন্ত্রঃ-  ওঁ শ্রীরাধিকায়ৈ দেব্যৈ নমঃ। বীজমন্ত্র-রাং।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ নবীনাং হেমগৌরাঙ্গীং পূর্ণানন্দবতীৎ সতীম্। বৃষভানুহুতাৎ দেবীং বন্দে রাধাৎ জগৎপ্রস্থম্।।

|| ষষ্ঠীর ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ দ্বিভুজাৎ হেমগৌরাঙ্গীং রত্নালঙ্কার ভূষিতাম্। বরদাভয়হস্তাঞ্চ শরচ্চন্দ্র নিভাননাম্। পট্টবস্ত্র-পরীধানাং পীনোন্নত-পয়োধরাম্। অঙ্কার্পিতসুতাং ষষ্ঠীমখুঙ্গস্থাৎ বিচিন্তয়েৎ।।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ যজ্ঞীদেব্যৈ নমঃ। বীজমন্ত্র-যং। বর্তী-দেবসেনাপতি কার্তিকেয়ের স্ত্রী, এইজন্য ইহার অপর নাম দেবসেনা। ইহার বাহন মার্জার এবং বটবৃক্ষ ইহার প্রিয়।

প্রণাম মন্ত্রঃ-  ওঁ জয় দেবি জগন্মাত-জগদানন্দকারিণি। প্রসীদ মম কল্যাণি নমস্তে যষ্ঠি দেবিকে।।

|| মার্কণ্ডেয়ের ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ দ্বিভুজৎ জটিলং সৌম্যং সুরদ্ধং চিরজীবিনম্। (মার্কণ্ডেয়ং নরো ভক্ত্য। পূজরেৎ প্রযতস্বথা)। দণ্ডাক্ষসূত্রহস্তঞ্চ মার্কণ্ডেরং বিচিন্তয়েৎ।॥

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ মার্কণ্ডেয়ায় নমঃ। বীজমন্ত্র-মাং।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ চিরজীবী যথা ত্বং ভে। ভবিষ্যামি তথা মুনে। রূপবান্ বিত্তবাংশ্চৈব শ্রিয়া যুক্তশ্চ সর্ব্বদা ।। মার্কণ্ডেয় মহাভাগ সপ্তকল্পান্তজীবন। আয়ুরিষ্টার্থসিদ্ধার্থমস্মাকং বরদো ভব ।। প্রণাম ও আয়ুঃপ্রদ মহাভাগ সোমবংশসমুদ্ভব। মহাতপো মুনিশ্রেষ্ঠ মার্কণ্ডেয় নমোহস্ত তে।।

|| সত্যনারায়ণের ধ্যান ||

satyanarayan dhyan

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ ধ্যায়েৎ সত্যৎ গুণাতীতৎ গুণত্রয়সমন্বিতৎ। লোকনাথং ত্রিলোকেশং পীতাম্বরধরং হরিম্ ।। ইন্দীবরদলশ্যামং শঙ্খচক্রগদাধরম্। নারায়ণৎ চতুর্ব্বাহুং শ্রীবৎসপদভূষিতম্। গোবিন্দৎ গোকুগানন্দং জগতঃ পিতরং গুরুম্ ॥

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ সত্যনারায়ণায় নমঃ। আবরণ পূজা-ও সত্যনারায়ণন্ত আবরণবেবতাভ্যো নমঃ।

পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ-  ওঁ নমস্তে বিশ্বরূপায় শঙ্খচক্রধরায় চ। পদ্মনাভায় দেবায় হৃষীকপতয়ে নমঃ। নমোহনস্তস্বরূপায় ত্রিগুণাত্মবিভাসিনে॥

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ সত্যনারায়ণং দেবং বন্দেহহং কামদং শুভম্। লীলয়া বিততং বিশ্বং যেন তস্মৈ নমো নমঃ।।

|| বাণলিঙ্গের ধ্যান ||

বাণলিঙ্গের-ধ্যান

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ প্রমত্তং শক্তিসংযুক্তং বাণাখ্যঞ্চ মহাপ্রভম্। কামবাণান্বিতং দেবং সংসার-দহনক্ষমম্। শৃঙ্গারাধি-রসোল্লাসং ভাবয়েং পরমেশ্বরম্।।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ বাণেশ্বরায় শিবায় নমঃ। বীজমন্ত্র ও মূলমন্ত্র- ঐং।

প্রণাম মন্ত্রঃ- ওঁ বাণেশ্বরায় নরকার্ণব-তারণায়, জ্ঞানপ্রদায় করুণামৃত-সাগরায়। কপূর-কুন্দ-ধবলেন্দু-জটাধরার, দারিদ্র্যদুঃখদহনায় নমঃ শিবায়।।

|| শুভসূচনীর ধ্যান ||

ধ্যানমন্ত্রঃ-  ওঁ রক্তা পদ্মচতুর্মুখী ত্রিনয়না চামীকরালঙ্কতা। পীনোতুঙ্গকুচা দুকুলবসনা হংসাধিরূঢ়া পরা। ব্রহ্মানন্দময়ী কমণ্ডলুবরাক্ষাভীতিহস্তা শিবা। ধোয়া সা শুভসূচনী ত্রিজগতামপ্যাপন্নদ্ধারিণী।।

পূজার মন্ত্রঃ-  ওঁ হ্রীং শুভসূচনীদেব্যৈ নমঃ। আবরণ পুজা-ও শুভসূচনী- দেব্যা আবরণদেবতাভ্যো নমঃ। হংসপুজা-ও হংসেভ্যো নমঃ।

প্রণাম মন্ত্রঃ-  ওঁ শুভবাঞ্ছাপ্রদে নিত্যৎ সর্বদা সুখবন্ধিনি। শুভকার্য্যেযু সর্ব্বত্র শুভৎ দেহি নমোহস্ত তে।।

|| বিশ্বকৰ্ম্মা-পূজা ||

বিশ্বকৰ্ম্মা-পূজা

আশ্বিন মাসের সংক্রান্তিতে (ভাদ্রমাসের শেষ দিনে) কর্ম্মকার, সূত্রধর প্রভৃতি গণ এই পূজা করিয়া থাকে।

ধ্যানমন্ত্রঃ- ওঁ দংশপাল মহাবীর সুচিত্র-কর্মকারক। বিশ্বকৃঢ় বিশ্বযুচ্চ ত্বৎ রসনা-মানদণ্ডধুক্।

পূজার মন্ত্রঃ- ওঁ বিশ্বকৰ্ম্মণে নমঃ। বীজমন্ত্র:-বিং। আবাহনে – ওঁ বিশ্বকৰ্ম্মন্ ইহাগচ্ছ।

প্রণাম মন্ত্রঃ- শিল্পাচার্য্য মহাভাগ দেবানাং কার্য্যসাধক। বিশ্বকৰ্ম্মন্ নমস্তুভ্যং সর্ব্বাভীষ্ট প্রদায়ক।।

সমাপ্ত

Maa Durga Stotras: মাদূর্গার স্তোত্র, প্রণাম, ধ্যান মন্ত্র

Maa Durga Stotra

আমাদের উচিৎ প্রত্যেকদিন মনোযোগ সহকারে মাদূর্গার  মন্ত্র অথবা স্তোত্র(Stotras Dhyan Mantras) পাঠ করা।  এই জগতের অধিষ্টাত্রী দেবী হচ্ছেন মাদুর্গা। এই জগৎ সংসারকে একটি দুর্গের মতো করে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই দুর্গের রক্ষাকর্তা হচ্ছেন মাদুর্গা। 

দেবীপূরণে এবং শাস্ত্রে উল্লেখ আছে যে মাদূর্গার ধ্যান, পূজা ও জপ করলে জীবনের দুঃখ-বাঁধা বিপদ কেটে যায়। মাদূর্গাকে বিনাশকারী, বিপদতারিনী রূপেও পূজা করা হয়। ইনি অসুর বিনাশ করেন। নিত্য মাদূর্গার নাম, স্তোত্র (Stotras Dhyan Mantras) পাঠ করলে আমাদের মনের অসুরের ও বিনাশ হয়।

Table of Contents

দূর্গা মন্ত্র পাঠে (Stotras Dhyan Mantras) করো সফল জীবন

|| দূর্গা মূলমন্ত্র ||

ওঁ দুর্গায়ৈ নমঃ।

ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা।

|| দূর্গা ধ্যান মন্ত্র (সংক্ষিপ্ত) ||

সিংহস্থাশশিশেখরা মরকতপ্রখ্যা চতুর্ভিভূজৈ, শংঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চদধতী-নেত্রৈস্তিভিঃ শোভিতা। আমুক্তাঙ্গদহারকঙ্কণরণৎকাঞ্চীক্কণন্নুপুরা, দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু বো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা।।

|| জয়র্গার ধ্যান মন্ত্র(Stotras Dhyan Mantras) ||

জয়র্গা

ওঁ কালালাভাৎ কটাক্ষৈররিকুল-ভয়দাং মৌলিবদ্ধেন্দুরেখাং,

শঙ্খং চক্রং কৃপাণং ত্রিশিখমপি করৈরুস্ বহন্তীৎ ত্রিনেত্রাম্।

সিংহস্কন্ধাধিরূঢ়াৎ ত্রিভুবনমখিলং তেজসাপুরয়ন্তীং,

ধ্যায়েদ্দুর্গাং জয়াখ্যাং ত্রিদশপরিরতাৎ সেবিতাং সিদ্ধিকামৈঃ ।।

|| শীতলামার ধ্যান মন্ত্র ||

ওঁ শ্বেতাঙ্গীং রাসভস্থাৎ করযুগবিলসম্মার্জনীপূর্ণকুন্তাৎ,

মার্জ্জন্যা পূর্ণকুন্তাদমৃতময়জলং তাপশান্ত্যৈ ক্ষিপন্তীম্।

দিগবস্থাৎ মুদ্ধিন সুর্পাৎ কনকমণিগণৈভূষিতাঙ্গীং ত্রিনেত্রাং,

বিস্ফোটাদ্যগ্রতাপপ্রশমনকরণীৎ শীতলাং তাং ভজামি ।।

|| শীতলামার প্রণাম মন্ত্র(Stotras Dhyan Mantras) ||

শীতলামা

ওঁ নমামি শীতলাং দেবীং রাসভস্থাৎ দিগম্বরীম্।

মার্জনীকলসোপেতাং সুর্পালস্কৃতমস্তকাম্ ।।

শীতলে ত্বং জগন্মাতা শীতলে ত্বং জগৎপিতা।

শীতলে ত্বং জগদ্ধাত্রী শীতলায়ৈ নমো নমঃ ।।

|| মঙ্গলচণ্ডীর ধ্যান মন্ত্র(Stotras Dhyan Mantras) ||

ওঁ বৈষা ললিতকান্তাখ্যা দেবীমঙ্গলচণ্ডিকা।

বরদাভয়হস্তা চ দ্বিভুজা গৌরদেহিকা ।।

রক্তপদ্মাসনস্থা চ মুকুটোজ্জল-মণ্ডিতা।

রক্তকৌধেয়বসনা স্মিতবক্তা শুভাননা।

নবযৌবন-সম্পন্না চার্ব্বঙ্গী ললিতপ্রভা ৷৷

|| দক্ষিণাকালীর ধ্যান মন্ত্র(Stotras Dhyan Mantras) ||

দক্ষিণাকালী

ও করালবদনাৎ ঘোরাৎ মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম্। 

কালিকাং দক্ষিণাৎ দিব্যাং মুণ্ডমালাবিভূষিতাম্।

সদ্যচ্ছিন্নশিরঃ-খড়গ-বামাধোর্থ করাযুজাম্। 

অভরৎ বরদঞ্চৈব দক্ষিণোন্ধাধ-পাণিকাম্ । 

মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথা চৈব দিগম্বরীম্। 

কণ্ঠাবসক্তমুণ্ডালী-গলদ্রুধির-চর্চ্চিতাম্ ॥ 

কর্ণাবতংসতানীত-শবযুগ্ম-ভয়ানকাম্। 

ঘোরদংষ্ট্রাৎ করালাম্ব্যাং পীনোন্নতপয়োধরাম্ ।। 

শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীৎ হসম্মুখীম্। 

স্বকন্বয়-গলদ্রক্ত-ধারা-বিস্ফুরিতাননাম্ ।। 

ঘোররাবাং মহারৌদ্রীং শ্মশানালয়বাসিনীম্। 

বালার্ক মণ্ডলাকার লোচনত্রিতয়ান্বিতাম্ ।। 

দস্তুরাং দক্ষিণব্যাপি লম্বমান-কচোচ্চরাম্। 

শবরূপ-মহাদেব হৃদয়োপরি-সংস্থিতাম্।। 

শিবাভির্থোররাবাভিশ্চতুদিকু সমন্বিতাম্। 

মহাকালেন চ সমং বিপরীত-রতাতুয়াম্ ।। 

সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরানন-সরোঝহাম্। 

এবং সঞ্চিন্তরেৎ কালীৎ ধৰ্ম্মকাম-সমৃদ্ধিদাম্।।

প্রকারাম্ভর

(যাঁহারা ‘ক্রীৎ’ এই একাক্ষর বীজমন্ত্রে দীক্ষিত হইয়াছেন, তাঁহারা এই মন্ত্র বলিয়া কালীর ধ্যান করিবেন।)

ওঁ শবারূঢ়াং মহাভীমাং ঘোরদংষ্ট্রাৎ বরপ্রদাম্। 

হাহ্যযুক্তাং ত্রিনেত্রাঞ্চ কপাল-কর্তৃকাকরাম্ ।। 

মুক্তকেশীং ললজ্জিহবাং পিবন্তীৎ রুধিরং মুহুঃ। 

চতুর্ব্বাহু-সমাযুক্তা। বরাভয়করাং স্মরেৎ।।

|| পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র (Stotras Dhyan Mantras) ||

ওঁ আয়ুৰ্দ্দেহি যশো দেহি ভাগাৎ ভগবতি দেহি মে। 

পুত্রান্ দেহি ধনং দেহি সর্ব্বান্ কামাংশ্চ দেহি মে ।। 

দুর্গোত্তারিণি দুর্গে ত্বং সর্ব্বাশুভ-নিবারিণি। 

ধর্মার্থমোক্ষদে দেবি নিত্যৎ মে বরদা ভব ।। 

কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিণি। 

ধৰ্ম্মকামপ্রদে দেবি নারায়ণি নমোহস্ত তে।।

প্রণাম মন্ত্র মন্ত্র

প্রত্যেক শক্তিমূর্তিকেই এই মন্ত্রে পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারা যায় এবং একইভাবে সকলেরই প্রণাম মন্ত্র এক হয়।

|| অন্নপূর্ণার ধ্যান মন্ত্র (Stotras Dhyan Mantras) ||

ওঁ রক্তাৎ বিচিত্রবসনাং নবচন্দ্রচূড়া-মন্ত্রপ্রদান-নিরতাৎ স্তনভারনম্রাম্। 

নৃত্যন্ত-মিন্দুশকলাভরণং বিলোক্য হৃষ্টাং ভজে ভগবতীৎ ভবদুঃখহন্ত্রীম্ ।।

|| জগদ্ধাত্রীর ধ্যান মন্ত্র(Stotras Dhyan Mantras) ||

জগদ্ধাত্রী

ওঁ সিংহস্কন্ধাধিসংরূঢ়াৎ নানালঙ্কারভূষিতাম্। 

চতুর্ভুজাং মহাদেবীং নাগবজ্ঞোপবীতিনীম্ ॥ 

শঙ্খ-শাঙ্গ-সমাযুক্ত-বামপাণিদ্বয়ান্বিতাম্। 

চক্রঞ্চ পঞ্চবাণাংশ্চ ধারয়ন্তীঞ্চ দক্ষিণে।। 

রক্তবস্ত্রপরীধানাং বালার্কসদৃশীতনুম্। 

নারদালৈমুনিগণৈঃ সেবিতাং ভবসুন্দরীম্।। 

ত্রিবলীবলয়োপেত-নাভিনালমৃণালিনীম্। 

রত্নদ্বিপময়দ্বীপে সিংহাসন-সমন্বিতে। 

প্রফুল্ল-কমলারূঢ়াৎ ধ্যায়েতাং ভবগেহিনীম্।।

|| সপ্তশ্লোকী দুর্গা (Stotras Dhyan Mantras) ||

শিব উবাচ

দেবি ত্বং ভক্তসুলভে সর্বকার্যবিধায়িনী। কলৌ হি কার্যসিন্ধ্যর্থমুপায়ং ব্রহি যত্নতঃ।।

দেব্যুবাচ শৃণু দেব প্রবক্ষ্যামি কলৌ সর্বেষ্টসাধনম্। ময়া তবৈব স্নেহেনাপ্যদ্বাস্তুতিঃ প্রকাশ্যতে।।

ও অস্য শ্রীদুর্গাসপ্তশ্লোকীস্তোত্রমন্ত্রস্য নারায়ণ ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, শ্রীমহাকালীমহালক্ষ্মীমহাসরস্বত্যো দেবতাঃ, শ্রীদুর্গাপ্রীত্যর্থঃ সপ্তশ্লোকীদুর্গাপাঠে বিনিয়োগঃ।

ওঁ জ্ঞানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হিসা। বলাদাকৃষ্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি। ১ ॥

দুর্গে স্মৃতা হরসি ভীতিমশেষজন্তোঃ,

স্বস্থৈঃ স্মৃতা মতিমতীব শুভাং দদাসি। দারিদ্র্যদুঃখভয়হারিণি কা ত্বদন্যা,

সর্বোপকারকরণায় সদার্দ্রচিত্তা৷ ২ ৷৷

সর্বমঙ্গলমঙ্গলে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোহস্ত তে৷৷ ৩।৷

শরণাগতদীনার্তপরিত্রাণপরায়ণে

সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোহস্তু তে৷৷৪।৷

 সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে। ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোহস্তু তে। ৫।৷

রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা রুষ্টা তু কামান্ সকলানভীষ্টান।

ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং ত্বামাশ্রিতা সর্বাবাধাপ্রশমনং এবমেব ত্বয়া হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি। ৬ ॥ 

ত্রৈলোক্যস্যাখিলেশ্বরি। কার্যমস্মদ্বৈরিবিনাশনম্।। ৭ ॥

|| দুর্গা শ্রীসপ্তশ্লোকীর বঙ্গানুবাদ ||

দেবাদিদেব মহাদেব বললেন- হে দেবি! তুমি ভক্তের কাছে সহজলভ্য এবং সমস্ত কর্মের বিধানকারিণী। কলিযুগে কামনাপূরণের যদি কোনও উপায় থাকে, তবে তোমার বাণীদ্বারা সম্যভাবে তা বলো।

দেবী পার্বতী বললেন- হে দেব! আমার ওপরে আপনার অসীম স্নেহ। কলিযুগে সর্বকামনা সিদ্ধির যে সাধন; তা আমি বলছি, শুনুন। তার নাম হল ‘অস্বাস্তুতি’।

ওঁ এই দুর্গাসপ্তশ্লোকী স্তোত্রের ঋষি হলেন নারায়ণ, ছন্দ অনুষ্টুপ, শ্রীমহাকালী, মহালক্ষ্মী এবং মহাসরস্বতী হলেন দেবতা; শ্রীদুর্গার প্রীত্যর্থে সপ্তশ্লোকী দুর্গাপাঠে এর বিনিয়োগ করা হয়।

এই ভগবতী মহামায়া দেবী জ্ঞানীদের চিত্তকেও বলপূর্বক আকর্ষণ করে মোহময় করে দেন। ।।১৷৷

হে মা দুর্গা! আপনি স্মরণমাত্রই সব প্রাণীর ভয় হরণ করে নেন এবং স্বস্থ পুরুষের দ্বারা চিন্তা করলে তাকে পরম কল্যাণময়ী বুদ্ধি প্রদান করেন। দুঃখ, দারিদ্রদ্র্য ও ভয়হারিণী দেবি! আপনি ছাড়া দ্বিতীয়া কে আছেন যার চিত্ত সকলের উপকার করার জন্য সততই দয়াদ্র। ।।২।।

নারায়নী! আপনি সর্বপ্রকার মঙ্গলপ্রদানকারী মঙ্গলময়ী, কল্যাণদায়িণী শিবা। আপনি সর্ব পুরুষার্থ সিদ্ধিদায়িনী, শরণাগতবৎসলা, ত্রিনয়নী গৌরী। আপনাকে প্রণাম।  ।।৩।।

শরণাগত, দীন এবং পীড়িতকে রক্ষায় সতত নিরত তথা সকলের পীড়া নিবারণকারিণী নারায়ণী দেবি! আপনাকে প্রণাম। ।।৪।।

সর্বস্বরূপা, সর্বেশ্বরী তথা সর্বপ্রকার শক্তিসম্পন্না দিব্যরূপা দেবি দুর্গে! সকল ভয় থেকে আমাদের রক্ষা করুন, আপনাকে প্রণাম। ।।৫।।

হে দেবি! আপনি প্রসন্ন হলে সর্বব্যাধি দূর করে দেন, আবার কুপিত হলে মনোবাঞ্ছিত সব কামনা নাশ করে দেন। যারা আপনার শরণ গ্রহণ করেছে, তাদের কাছে বিপদ কখনও আসে না। আপনার শরণগ্রহণকারী ব্যক্তি অপরের শরণদাতা হন। ।।৬৷ ৷

হে সর্বেশ্বরি! আপনি এরূপে তিন লোকের সমস্ত বাধা দূর করুন এবং আমাদের শত্রু নাশ করুন। ।।৭।।

-সমাপ্ত-

|| দুর্গা দেবীকবচ (Stotras Dhyan Mantras) ||

Maa Durga

ওঁ অস্য শ্রীচণ্ডীকবচস্য ব্রহ্মা ঋষিঃ, অনুষ্টুপ্ ছন্দঃ, চামুণ্ডা দেবতা, অঙ্গন্যাসোক্তমাতরো বীজম্, দিগ্বন্ধদেবতাস্তত্বম্, শ্রীজগদম্বাপ্রীত্যর্থে সপ্তশতীপাঠাঙ্গত্বেন জপে বিনিয়োগঃ।

|| ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ ||

**মার্কণ্ডেয় উবাচ**

ওঁ যদ্ গুহ্যং পরমং লোকে সর্বরক্ষাকরং নৃণাম্। যন্ন কস্যচিদাখ্যাতং তন্মে রূহি পিতামহ।। ১ ৷৷ 

ব্রহ্মোবাচ অস্তি গুহ্যতমং বিপ্র সর্বভূতোপকারকম্। দেব্যাস্ত কবচং পুণ্যং তৎ শৃণুষ মহামুনে৷৷ ২৷৷ 

প্রথমং শৈলপুত্রী চ দ্বিতীয়ং ব্রহ্মচারিণী। তৃতীয়ং চন্দ্রঘণ্টেতি কৃষ্মাণ্ডেতি চতুর্থকম্ ॥ ৩॥

পঞ্চমং স্কন্দমাতেতি ষষ্ঠং কাত্যায়নী তথা। সপ্তমং কালরাত্রীতি মহাগৌরীতি চাষ্টমম্ ॥ ৪ ॥

নবমং সিদ্ধিদাত্রী চ নবদুর্গাঃ প্রকীর্তিতাঃ। উক্তান্যেতানি নামানি ব্রহ্মণৈব মহাত্মনা।। ৫ ।।

অগ্নিনা দহ্যমানস্তু শত্রুমধ্যে গতো রণে। বিষমে দুর্গমে চৈব ভয়ার্তাঃ শরণং  গতাঃ। ৬ ৷৷

ন তেষাং জায়তে কিঞ্চিদশুভং রণসঙ্কটে। নাপদং তস্য পশ্যামি শোকদুঃখভয়ং ন হি॥৭॥

যৈন্তু ভক্ত্যা স্মৃতা নূনং তেষাং বৃদ্ধিঃ প্রজায়তে। যে ত্বাং স্মরন্তি দেবেশি রক্ষসে তান্ন সংশয়ঃ ৷৷ ৮ ৷৷ 

প্রেতসংস্থা তু চামুণ্ডা বারাহী মহিষাসনা। ঐন্দ্রী গজসমারূঢ়া বৈষ্ণবী গরুড়াসনা। ৯ ৷৷ 

মাহেশ্বরী বৃষারূঢ়া কৌমারী শিখিবাহনা। লক্ষ্মীঃ পদ্মাসনা দেবী পদ্মহস্তা হরিপ্রিয়া। ১০৷৷ 

শ্বেতরূপধরা দেবী ঈশ্বরী বৃষবাহনা।ব্রাহ্মী হংসসমারূঢ়া সর্বাভরণভূষিতা। ১১ ৷৷

।। শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী (Stotras Dhyan Mantras) ||

মেধা ঋষি কর্তৃক রাজা সুরথ ও সমাধিকে ভগবতীর মহিমা বর্ণন প্রসঙ্গে মধুকৈটভ বধ সংবাদ বিনিয়োগঃ

ওঁ অস্য শ্রীপ্রথমচরিত্রস্য ব্রহ্মা ঋষিঃ, মহাকালী দেবতা, গায়ত্রী ছন্দঃ, নন্দা শক্তিঃ, রক্তদন্তিকা বীজম্, অগ্নিস্তত্বম্, ঋগ্বেদঃ স্বরূপম, শ্রীমহাকালীপ্রীত্যর্থে প্রথমচরিত্রজপে বিনিয়োগঃ।

**ধ্যানম্**

ওঁ খাং চক্র-গদেষু-চাপ-পরিঘান্ শূলং ভুশুণ্ডীং শিরঃ শঙ্খং সন্দধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্। নীলাম্মদ্যুতিমাস্য-পাদদশকাং সেবে মহাকালিকাং যামস্তৌৎ স্বপিতে হরৌ কমলজো হন্ত্রং মধুং কৈটভম্। ৷৷১৷৷

।। ওঁ নমশ্চণ্ডিকায়ৈ (Stotras Dhyan Mantras) ||

নমশ্চণ্ডিকায়ৈ

সাবর্ণিঃ সূর্যতনয়ো যো মনুঃ কথ্যতেহষ্টমঃ।

নিশাময় তদুৎপত্তিং বিস্তরাদ্ গদতো মম।॥২॥ 

মহামায়ানুভাবেন যথা মন্বন্তরাধিপঃ।

স বভূব মহাভাগঃ সাবর্ণিস্তনয়ো রবেঃ ৷৷৩৷৷

স্বারোচিষেহন্তরে পূর্বং চৈত্রবংশসমুদ্ভবঃ।

সুরথো নাম রাজাহভূৎ সমস্তে ক্ষিতিমণ্ডলে ॥৪॥

তস্য পালয়তঃ সম্যক্ প্রজাঃ পুত্রানিবৌরসান্। 

বড়বুঃ শত্রবো ভূপাঃ কোলাবিধ্বংসিনন্তদা ॥৫॥

তস্য তৈরভবদ্ যুদ্ধমতিপ্রবলদণ্ডিনঃ। 

ন্যূনৈরপি স তৈযুদ্ধে কোলাবিধ্বংসিভির্জিতঃ ।।৬।।

ততঃ স্বপুরমায়াতো নিজদেশাধিপোহভবৎ।

 আক্রান্তঃ স মহাভাগন্তৈস্তদা প্রবলারিভিঃ ।।৭৷৷

অমাত্যৈর্বলিভিদুষ্টৈদুর্বলস্য দুরাত্মভিঃ। 

কোষো বলঞ্চাপহৃতং তত্রাপি স্বপুরে ততঃ ।।৮।।

ততো মৃগয়াব্যাজেন হৃতস্বাম্যঃ স ভূপতিঃ।

একাকী হয়মারুহ্য জগাম গহনং বনম্৷ ।।৯।।

স তত্রাশ্রমমদ্রাক্ষীদ্ দ্বিজবর্যস্য মেধসঃ।

প্রশান্তশ্বাপদাকীর্ণং মুনিশিষ্যোপশোভিতম্ ।।১০।।

তস্থৌ কঞ্চিৎ স কালঞ্চ মুনিনা তেন সৎকৃতঃ।  

ইতশ্চেতশ্চ বিচরংস্তস্মিন্ মুনিবরাশ্রমে ।।১১।।

সোহচিন্তয়ত্তদা তত্র মমত্বাকৃষ্টচেতনঃ 

মৎপূর্বেঃ পালিতং পূর্বং ময়া হীনং পুরং হি তৎ ।।১২।।

মদ্‌ভৃত্যৈস্তৈরসদৃত্তৈর্ধর্মতঃ পাল্যতে নবা। 

ন জানে স প্রধানো মে শূরহস্তী সদামদঃ ।।১৩।।

মম বৈরিবশং যাতঃ কান্ ভোগানুপলপ্স্যতে। 

যে মমানুগতা নিত্যং প্রসাদ-ধন-ভোজনৈঃ।। ১৪।। 

অনুবৃত্তিং ধ্রুবং তেহদ্য কুর্বন্ত্যন্যমহীভূতাম্। 

অসম্যগ্‌ ব্যয়শীলৈস্তৈঃ কুর্বদ্ভিঃ সততং ব্যয়ম্ ।।১৫।।

সঞ্চিতঃ সোহতিদুঃখেন ক্ষয়ং কোষো গমিষ্যতি। 

এতচ্চান্যচ্চ সততং চিন্তয়ামাস পার্থিবঃ। ।।১৬।। 

তত্র বিপ্রাশ্রমাভ্যাসে বৈশ্যমেকং দদর্শ সঃ। 

স পৃষ্টস্তেন কস্তুং ভো হেতুশ্চাগমনেহত্র কঃ।।১৭।। 

সশোক ইব কস্মাত্ত্বং দুর্মনা ইব লক্ষ্যসে। 

ইত্যাক্য বচস্তস্য ভূপতেঃ প্রণয়োদিতম্। ।।১৮।। 

প্রত্যুবাচ স তং বৈশ্যঃ প্রশ্রয়াবনতো নৃপম্ ৷ ।।১৯।। 

বৈশ্য উবাচ ।।২০।।

সমাধিনাম বৈশ্যোহহমুৎপন্নো ধনিনাং কুলে ।।২১।। 

পুত্রদারৈর্নিরস্তশ্চ ধনলোভাদসাধুভিঃ। 

বিহীনশ্চ ধনৈর্দারৈঃ পুত্রৈরাদায় মে ধনম্৷ ।।২২।।

বনমভ্যাগতো দুঃখী নিরস্তশ্চাপ্তবন্ধুভিঃ। 

সোহহং ন বেদ্ধি পুত্রাণাং কুশলাকুশলাত্মিকাম্৷ ।।২৩।।

প্রবৃত্তিং স্বজনানাঞ্চ দারাণাঞ্চাত্র সংস্থিতঃ। 

কিন্তু তেষাং গৃহে ক্ষেমমক্ষেমং কিন্তু সাম্প্রতম্ ।।২৪।।

কথন্তে কিন্তু সম্পৃত্তা দুর্বত্তাঃ কিন্তু মে সুতাঃ ।।২৫।।

রাজোবাচ।।২৬।।

যৈর্নিরস্তো ভবাঁল্লুদ্ধৈঃ পুত্রদারাদিভির্ধনৈঃ।।২৭।। 

তেষু কিং ভবতঃ স্নেহমনুবয়াতি মানসম্ ।।২৮।।

বৈশ্য উবাচ ।।২৯।।

এবমেতদ্ যথা প্রাহ ভবানস্মদ্গতং বচঃ ।।৩০।।

কিং করোমি ন বয়াতি মম নিষ্ঠুরতাং মনঃ। 

যৈঃ সন্ত্যজ্য পিতৃস্নেহং ধনলুন্ধৈর্নিরাকৃতঃ।।৩১।।

পতিস্বজনহার্দঞ্চ হার্দি তেম্বেব মে মনঃ। 

কিমেতন্নাভিজানামি জানন্নপি মহামতে ।।৩২।।

যৎ প্রেমপ্রবণং চিত্তং বিগুণেষপি বন্ধুযু। 

তেষাং কৃতে মে নিঃশ্বাসো দৌর্মনস্যঞ্চ জায়তে ।।৩৩।।

করোমি কিং যন্ন মনস্তেম্বপ্রীতিষু নিষ্ঠুরম্ ।।৩৪।। 

মার্কণ্ডেয় উবাচ।। ৩৫ ৷৷

ততন্তৌ সহিতৌ বিপ্র তং মুনিং সমুপস্থিতৌ ।।৩৬।। 

সমাধির্নাম বৈশ্যোহসৌ স চ পার্থিবসত্তমঃ। 

কৃত্বা তু তৌ যথান্যায়ং যথাৰ্ছং তেন সংবিদম্ ।।৩৭।।

উপবিষ্টৌ কথাঃ কাশ্চিচ্চক্রতুর্বৈশ্যপার্থিবৌ ।।৩৮।। 

রাজোবাচ ।।৩৯।।

ভগবংস্তামহং প্রষ্টুমিচ্ছাম্যেকং বদম্ব তৎ ।।৪০।।

দুঃখায় যন্মে মনসঃ স্বচিত্তায়ত্ততাং বিনা। 

মমত্বং গতরাজ্যস্য রাজ্যাঙ্গেম্বখিলেম্বপি ।।৪১।।

জানতোহপি যথাজ্ঞস্য কিমেতগুনিসত্তম। 

অয়ঞ্চ নিকৃতঃ পুত্রৈর্দারৈভৃত্যৈস্তথোজঝিতঃ।।৪২।। 

স্বজনেন চ সন্ত্যক্তন্তেযু হার্দী তথাপ্যতি। 

এবমেষ তথাহঞ্চ দ্বাবপ্যত্যন্তদুঃখিতৌ ।।৪৩।। 

দৃষ্টদোষেহপি বিষয়ে মমত্বাকৃষ্টমানসৌ। 

তৎ কিমেতন্মহাভাগা যন্মোহো জ্ঞানিনোরপি ।।৪৪।। 

মমাস্য চ ভবত্যেষা বিবেকান্ধস্য মূঢ়তা ।।৪৫।। 

ঋষিরুবাচ ।।৪৬।।

জ্ঞানমন্তি সমস্তস্য জন্তোবিষয়গোচরে ।।৪৭।।

বিষয়শ্চ১) মহাভাগ যাতি চৈবং পৃথক্ পৃথক্।

দিবান্ধাঃ প্রাণিনঃ কেচিদ্রাত্রাবন্ধান্তথাপরে ।।৪৮।।

কেচিদ্দিবা তথা রাত্রৌ প্রাণিনগুল্যদৃষ্টয়ঃ।

জ্ঞানিনো মনুজাঃ সত্যং কিং তুতেন হি কেবলম্ ।।৪৯।।

যতো হি জ্ঞানিনঃ সর্বে পশুপক্ষিমৃগাদয়ঃ।

জ্ঞানঞ্চ তন্মনুষ্যাণাং যতেষাং মৃগপক্ষিণাম্ ।।৫০।।

মনুষ্যাণাঞ্চ যতেষাং তুল্যমন্যৎ তথোভয়োঃ।

জ্ঞানেহপি সতি পশ্যৈতান্ পতঙ্গাঞ্জাবচঞ্চুষু ৷৷ ৫১ ৷৷

কণমোক্ষাদৃতান্ মোহাৎ পীড্যমানানপি ক্ষুধা।

মানুষা মনুজব্যাঘ্র সাভিলাষাঃ সুতান্ প্রতি ।।৫২।।

লোভাৎ প্রত্যুপকারায় নন্বেতান(১) কিং ন পশ্যসি। 

লোড়াও মমতাবর্তে মোহগর্তে নিপাতিতাঃ ।।৫৩।।

মহামায়াপ্রভাবেণ সংসারস্থিতিকারিণা। 

তন্নাত্র বিস্ময়ঃ কার্যো যোগনিদ্রা জগৎপতেঃ ।।৫৪।।

মহামায়া হরেশ্চৈষা তয়া সংমোহ্যতে জগৎ।

জানিনামপি চেতাংসি দেবী ভগবতী হি সা ।।৫৫।।

বলাদাকৃষ্য মোহায় মহামায়া প্রযচ্ছতি। 

তয়া বিসৃজ্যতে বিশ্বং জগদেতচ্চরাচরম্ ।।৫৬।।

সৈষা প্রসন্না বরদা নৃণাং ভবতি মুক্তয়ে। 

সা বিদ্যা পরমা মুক্তের্হেতুভূতা সনাতনী ।।৫৭।।

সংসারবন্ধহেতুশ্চ সৈব সর্বেশ্বরেশ্বরী ।।৫৮।।

রাজোবাচ ।।৫৯।।

ভগবন্ কা হি সা দেবী মহামায়েতি যাং ভবান্। ৬০ ৷৷ 

ব্রবীতি কথমুৎপন্না সা কর্মাস্যাশ্চ কিং দ্বিজ। 

যৎপ্রভাবা চ সা দেবী যৎস্বরূপা যদুদ্ভবা ।।৬১।। 

তৎ সর্বং শ্রোতুমিচ্ছামি ত্বত্তো ব্রহ্মবিদাং বর ।।৬২।।

ঋষিরুবাচ ।।৬৩।।

নিত্যৈব সা জগমূর্তিস্তয়া সর্বমিদং ততম্ ।।৬৪।।

তথাপি তৎসমুৎপত্তির্বহুধা ক্রয়তাং মম। 

দেবানাং কার্যসিদ্ধ্যর্থমাবির্ভ বতি সা যদা ।।৬৫।। 

উৎপন্নেতি তদা লোকে সা নিত্যাপ্যভিধীয়তে। 

যোগনিদ্রাং যদা বিষ্ণুর্জগত্যেকার্ণবীকৃতে ।।৬৬।।

আস্তীর্য শেষমভজৎ কল্পান্তে ভগবান্ প্রভুঃ।

তদা দ্বাবসুরৌ ঘোরৌ বিখ্যাতৌ মধুকৈটভৌ ।।৬৭।।

বিষ্ণুকর্ণমলোদ্ভূতৌ হন্ত্রং ব্রহ্মাণমুদ্যতৌ। 

স নাভিকমলে বিষ্ণোঃ স্থিতো ব্রহ্মা প্রজাপতিঃ ।।৬৮।।

দৃষ্টা তাবসুরৌ চোগ্রেী প্রসুপ্তঞ্চ জনার্দনম্। 

তুষ্টাব যোগনিদ্রাং তামেকাগ্রহৃদয়স্থিতঃ।।৬৯।।

বিবোধনার্থায় হরেইরিনেত্রকৃতালয়াম্)।

বিশ্বেশ্বরীং জগদ্ধাত্রীং স্থিতিসংহারকারিণীম্ ।।৭০।। 

নিদ্রাং ভগবতীং বিষ্ণোরতুলাং তেজসঃ প্রভুঃ ।।৭১।।

ব্রহ্মুৌবাচ ।।৭২।।  

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বর্ষস্কারঃ স্বরাত্মিকা ।।৭৩।।

সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা। 

অর্ধমাত্রাঞ্ছিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ ।।৭৪।।

ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবি জননী পরা। 

ত্বয়ৈতদ্ ধার্যতে বিশ্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ ।।৭৫।।

ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা। 

বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে ।।৭৬।।

তথা সংহৃতিরূপান্তে জগতোহস্য জগন্ময়ে। 

মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ ।।৭৭।।

মহামোহা চ ভবতী মহাদেবী মহাসুরী। 

প্রকৃতিত্ত্বং চ সর্বস্য গুণত্রয়বিভাবিনী ।।৭৮।।

কালরাত্রিমহারাত্রিমোহরাত্রিশ্চ দারুণা। 

ত্বং শ্রীস্বমীশ্বরী ত্বং খ্রীস্ত্রং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা ।।৭৯।।

লজ্জা পুষ্টিস্তথা তুষ্টিস্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ। 

খাড়িজনী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিণী তথা ।।৮০।। 

শঙ্খিনী চাপিনী বাণভূশুণ্ডীপরিঘায়ুধা। 

সৌম্যা সৌম্যতরাশেষসৌম্যেভ্যস্তুতিসুন্দরী ।।৮১।। 

পরাপরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী। 

যচ্চ কিঞ্চিৎ কচিদ্বস্তু সদসদ্ বাখিলাত্মিকে ।।৮২।। 

তস্য সর্বস্য যা শক্তিঃ সাত্বং কিং সূয়সে তদা

যয়া ত্বয়া জগৎস্রষ্টা জগৎপাত্যত্তি(২) যো জগৎ ।।৮৩।।

সোহপি নিদ্রাবশং নীতঃ কত্ত্বাং স্তোতুমিহেশ্বরঃ।

বিষ্ণুঃ শরীরগ্রহণমহমীশান এব চ ।।৮৪।।

কারিতাস্তে যতোহতত্ত্বাং কঃ স্তোতুং শক্তিমান্ ভবেৎ। 

সা ত্বমিত্থং প্রভাবৈঃ স্বৈরুদারৈর্দেবি সংস্তুতা ।।৮৫।।

মোহয়ৈতৌ দুরাধর্ষাবসুরৌ মধুকৈটভৌ। 

প্রবোধঞ্চ জগৎস্বামী নীয়তামচ্যুতো লঘু ।।৮৬।।

বোধশ্চ ক্রিয়তামস্য হস্তমেতৌ মহাসুরৌ ।।৮৭।। 

ঋষিরুবাচ ।।৮৮।।

এবং স্তুতা তদা দেবী তামসী তত্র বেধসা ।।৮৯।।

বিষ্ণোঃ প্রবোধনার্থায় নিহন্তুং মধুকৈটভৌ। 

নেত্রাস্যনাসিকাবাহুহৃদয়েভ্যস্তথোরসঃ ।।৯০।।

নির্গম্য দর্শনে তন্ত্রৌ ব্রহ্মণোহব্যক্তজন্মনঃ। 

উত্তস্থৌ চ জগন্নাথস্তয়া মুক্তো জনার্দনঃ ।।৯১।।

একার্ণবেহহিশয়নাত্ততঃ স দদৃশে চ তৌ। 

মধুকৈটভৌ দুরাত্মানাবতিবীর্যপরাক্রমৌ ।।৯২।।

ক্রোধরক্তেক্ষণাবত্ত্বং(১) ব্রহ্মাণং জনিতোদ্যমৌ। 

সমুখায় ততস্তাভ্যাং যুযুধে ভগবান্ হরিঃ ।।৯৩।। 

পঞ্চবর্ষসহস্রাণি বাহুপ্রহরণো বিভুঃ। 

তাবপ্যতিবলোন্মত্তৌ মহামায়াবিমোহিতৌ ।।৯৪।। 

উক্তবস্তৌ বরোহস্মত্তো ব্রিয়তামিতি কেশবম্ ।।৯৫।।

শ্রীভগবানুবাচ ।।৯৬।।

ভবেতামদ্য মে তুষ্টৌ মম বধ্যাবুভাবপি ।।৯৭।।

কিমন্যেন বরেণাত্র এতাবদ্ধি বৃতং মম ।।৯৮।। 

ঋষিরুবাচ ।। ৯৯।।

বঞ্চিতাভ্যামিতি তদা সর্বমাপোময়ং জগৎ ।।১০০।।

বিলোক্য ত্যাভ্যাং গদিতো ভগবান্ কমলেক্ষণঃ

আবাং জহি ন যত্রোর্থী সলিলেন পরিপ্লুতা ।।১০১।।

ঋষিরুবাচ। ।।১০২।।

তথেত্যুত্ত্বা ভগবতা শঙ্খচক্রগদাভৃতা। 

কৃত্বা চক্রেণ বৈ চ্ছিন্নে জঘনে শিরসী তয়োঃ ।।১০৩।।

এবমেষা সমুৎপন্না ব্রহ্মণা সংস্তুতা স্বয়ম্। 

প্রভাবমস্যা দেব্যাস্ত ভূয়ঃ শৃণু বদামি তে।। 

ঐং ওঁ ।।১০৪।।

– সমাপ্ত –

Vows and Rules of all gods: সর্ব দেব-দেবীর ব্রতকথা

Vows-and-rules-of-all-gods-and-goddesses

বিশ্বাস করা হয় যে ব্রত পালন করলে সংসারের সকল বিপদ কেটে যায়, শান্তি সমৃদ্ধি জীবনে বৃদ্ধি পায়। এই নিবন্ধে আমরা কিছু দেবদেবীর ব্রতকথা, ব্রত-উপকরণ, ফল ও নিয়ম (Vows and rules of all gods and goddesses) উল্লেখ করেছি।

Table of Contents

Vows and rules of all Gods: ব্রতকথা, ব্রত-উপকরণ, ফল ও নিয়ম

Vows and rules of all gods and goddesses

|| Vows and Rules of all Gods: সাবিত্রী চতুর্দশী ব্রত ||

ব্রতের নিয়ম- জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর নাম সাবিত্র চতুর্দশী। ঐ দিন উপোস করে যথা নিয়মে সাবিত্রীদেবীর পূজা করে আহুতি দান করতে হয়। ব্রত শেষে ব্রাহ্মণকে ভোজন করিয়ে দক্ষিণা দিতে হয়। এই ব্রত সধবাদের জন্য নির্দিষ্ট। ব্রতের আগের দিন হবিষ্য করে থাকতে হয়। এই ব্রত চোদ্দো বছরে উপযাপন করতে হয়। উদযাপনের পরের দিন লাঙ্গলের পূজা করতে হয়। এছাড়া সধবা ও ব্রাহ্মণভোজন সাধ্যমত করাতে হয়।

ব্রতের উপকরণ- সিঁদুর, পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, ফুল, তুলসী, দুর্বা, বেলপাতা, ধূপ, দীপ, ধুনো, বটডাল, আম্রশাখা, হরীতকী, ৭টি কাপড় বা গামছা, ৭টি আসনাঙ্গুরীয়, ৭টি মধুপর্কের বাটি, চিনি, দধি, গাওয়া ঘি, পাখা, ১৫খানি নৈবেদ্য, ১টি কুঁচা নৈবেদ্য, ১৪টি সাজি, ফল মূল, ডোর, ভোজ্য, বালি, যজ্ঞকাষ্ঠ পূর্ণপাত্র ইত্যাদি।

ব্রতের ফল- যে নারী নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করে, তার স্বামী নীরোগ দেহে ও সুস্থ শরীরে দীর্ঘ জীবন লাভ করে থাকে এবং সেই নারীকে বৈধব্য যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না।

ব্রতকথা (Sabitri Chaturdashi Vrat)- মদ্র দেশের রাজা ছিলেন অশ্বপতি। তাঁর মেয়ের নাম সাবিত্রী। চোদ্দো বছর নিঃসন্তান অশ্বপতি সাবিত্রীদেবীর আরাধনা করে এই সর্ব সুলক্ষণা কন্যালাভ করেছিলেন বলে সাবিত্রীদেবীর নামেই কন্যার নামকরণ করেন।

সাবিত্রী যৌবনপ্রাপ্ত হয়ে তপোবনে একদিন ভ্রমণ করতে গিয়ে শাল্বদেশের রাজপুত্র সত্যবানকে মনে মনে স্বামীরূপে বরণ করেন। দেবর্ষি নারদ এই ঘটনা জানার পর অশ্বপতিকে বললেন-সাবিত্রী ঠিক পাত্রই নির্বাচন করেছে, কিন্তু সত্যবান অল্পায়ু।

বিবাহের এক বৎসর পরেই তার মৃত্যু নিশ্চিত। অশ্বপতি মহাভাবনায় তিনি কন্যাকে অনেক বোঝালেন। কিন্তু সাবিত্রী অবিচল থেকে বললেন, যাকে একবার মন দিয়েছি, তাকে ছাড়া আমি আর কিছুই জানি না। তার যা গতি হবে, তাই আমি মাথা পেতে নেব। যথা সময়ে উভয়ের বিবাহ হয়ে গেল।

সাবিত্রী-চতুর্দশী-ব্রত

রাজকন্যা সাবিত্রী তপোবনে আশ্রমবাসিনী হয়ে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলেন, আর নারদের কথামতো দিন গুণতে লাগলেন। দেবর্ষির বাক্য অনুসারে আর মাত্র তিনদিন বাকি। সাবিত্রী শ্বশুর-শাশুড়ির অনুমতি নিয়ে ব্রত আরম্ভ করলেন। নির্দিষ্ট দিনে সত্যবান কাঠ সংগ্রহ করতে রওনা হলে সাবিত্রীও তাঁর সঙ্গ নিলেন।

বনে এসে কাঠ সংগ্রহ করতে করতে হঠাৎ সত্যবান শিরঃপীড়ায় অস্থির হয়ে সাবিত্রীর কোলে ঢলে পড়লেন। দেখতে দেখতে সেখানে স্বয়ং যমরাজ উপস্থিত হয়ে সত্যবানের দেহ থেকে অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ প্রাণ বের করে নিজের পুরীর দিকে রওনা হলেন। সঙ্গে সঙ্গে সাবিত্রীও ছুটলেন যমরাজের পিছু পিছু।

যমরাজ তাকে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু সাবিত্রী কিছুতেই তাঁর পিছু ছাড়েন না। শেষ অবধি সাবিত্রীর অনেক কাকুতিমিনতি যমরাজ উপেক্ষা করতে পারেন না। সাবিত্রী যমরাজের নিকট প্রার্থনা করেন, শ্বশুর-শাশুড়ির চক্ষু দান করুন। যমরাজ তথাস্তু বলে পুনরায় রওনা হলেন।

কিন্তু আবার সাবিত্রী তাঁর পিছু নিয়েছে দেখে তিনি বললেন, সাবিত্রী তোমার আর একটি প্রার্থনা আমি পূরণ করব, তুমি ফিরে যাও। কিন্তু তোমার স্বামীকে ফিরিয়ে দিতে পারব না।

সাবিত্রী বললেন, আমার শ্বশুর রাজ্যচ্যুত হয়েছেন, তাঁকে তাঁর রাজ্য ফিরিয়ে দিন। যমরাজ বললেন, তাই হবে। তুমি এখনও কেন ফিরে যাচ্ছ না? ঠিক আছে তোমার স্বামীর প্রাণ ছাড়া আর একটি বর প্রার্থনা করো। সাবিত্রী বললেন, আমার পিতা অপুত্রক, তাঁকে আপনি শতপুত্র দিন। যমরাজ বললেন, তাই হবে।

এবার তুমি ফিরে যাও। এ কি। তুমি এখনও কেন আমাকে অনুসরণ করছ? আচ্ছা ঠিক আছে, তোমার স্বামীর জীবন ছাড়া আর একটি বর প্রার্থনা করো। সাবিত্রী বললেন, বেশ আপনি আমাকে এই বর দিন, সত্যবানের ঔরসে আমি যেন শতপুত্রের জননী হই।

যমরাজ কিছু না চিন্তা করেই বললেন, তথাস্তু। তারপর বললেন, এবার তুমি ফিরে যাও। সাবিত্রী বললেন, স্বামীকে না নিলে শতপুত্রের জননী হব কি করে? যমরাজ সতীর সঙ্গে বুদ্ধির খেলায় হেরে গেলেন। কাজেই সত্যবানের প্রাণবায়ু তাঁকে ফিরিয়ে দিতে হল।

এইভাবে সতী সাবিত্রী অন্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনলেন, শ্বশুরকে হৃতরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত করলেন, অপুত্রক পিতাকে শতপুত্রের জনক করলেন এবং নিজের মৃত স্বামীকে জীবিত করলেন।

সাবিত্রী চতুর্দশী ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: ইতুপূজা ব্রত ||

ব্রতের নিয়ম- কার্তিক সংক্রান্তির দিন একটি পরিষ্কার সরার মাঝখানে ঘট স্থাপন করে তার চারদিকে হলুদ, ধান, মান ও কচুগাছ একটি করে বসাতে হবে। মটর, সরিষা, সুষনি, কলমি ও পাঁচটি ছোট বটশাখা সেই সঙ্গে রাখতে হবে। পূজা শেষে এই মন্ত্রটি বলে প্রণাম করতে হয়। 

প্রণাম মন্ত্র- অষ্ট চাল, অষ্ট দূর্বা, কলস পাত্রে থুয়ে। শোনরে ইতুর কথা এক মনপ্রাণ হয়ে।। ইতু দেন বর। ধনে-ধান্যে পুত্রে বাড়ুক তাদের ঘর।

অঘ্রায়ন মাসের প্রতি রবিবারে এই ব্রত করে অঘ্রাণ সংক্রান্তির দিন নদী, পুষ্করিণী বা গঙ্গায় ইতু বিসর্জন দেবার বিধি। যে কোনো একজনকে উপবাসী থেকে ইতুর ব্রতকথা শুনতে হয়।

ব্রতের উপকরণ- সিঁদুর, ফল, দূর্বা, বেলপাতা, তিল, হরীতকী, দীপ, ধূপ, সেঁয়াকুল, ফল ও নৈবেদ্য।

ব্রতের ফল- এই ব্রত করলে রমণীগণ অতুল ঐশ্বর্য ও সুখ-সম্পদের অধিকারিণী হয়ে থাকে।

ব্রতকথা (Etu Puja Vrat)- এক দেশে এক ব্রাহ্মণ-ব্রাহ্মণী বহু কষ্টে ভিক্ষে করে দিন কাটাত। তাদের দুই মেয়ে ছিল উমনো ও ঝুমনো নামে। ব্রাহ্মণের একদিন পিঠে খেতে সাধ হল। ব্রাহ্মণ ভিক্ষে করে পিঠের জোগাড় করে সন্ধ্যেবেলায় ব্রাহ্মণীকে দিল।

ব্রাহ্মণী রাত্রিতে পিঠে তৈরি করতে লাগল। ব্রাহ্মণ রান্নাঘরের পাশে বসে গুণতে লাগল। পিঠে তৈরি হয়ে গেলে বামুন খেতে বসল। ব্রাহ্মণী তাকে পিঠে এনে দেয়। দুইটি পিঠে কম দেখিয়া ব্রাহ্মণ রাগে জ্বলিয়া ওঠে। ব্রাহ্মাণী ভয় পেয়ে তখন ব্রাহ্মণকে বলে আমি দুটি মেয়েকে দুটি পিঠে দিয়েছি। এরপর একদিন ব্রাহ্মণ এসে ব্রাহ্মণীকে বলল, আমি কন্যা দু’জনকে পিসীর বাড়ি নিয়ে যাব। একথা শুনে ব্রাহ্মণী খুবই দুঃখ পেল বটে কিন্তু ভয়ে ব্রাহ্মণকে কিছু বলতে পারে না।

তখন ব্রাহ্মণ কন্যা দু’জনকে নিয়ে পথ হাঁটতে থাকে। হাঁটতে হাঁটতে কন্যা দু’জন ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে একটি গাছের তলায় বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে তারা দু’জনেই সেখানে ঘুমিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে ব্রাহ্মণ সে স্থান ত্যাগ করে চলে যায়।

ঘট স্থাপন পর্ব

কন্যাদ্বয়ের ঘুম ভেঙে যেতেই ভাবতে লাগল কোথা পিতা বলি ডাকতে থাকে। উমনো বলে বাবাকে বুঝি বাঘে খেয়েছে। ঝুমনো বলে পিতা মোদের ত্যাগ করে চলে গেছে। আমরা পিঠে খেয়েছিলাম বলে সেই রাগে আমাদের পিতা আমাদেরকে বনবাসে রাখিয়া গেল।

রাত কেটে সকাল হল। সামান্য পিঠে খেয়ে এত যন্ত্রণা। এখন আমরা কোথায় যাব ভাবতে ভাবতে পথ চলতে লাগল। যেতে যেতে তারা দেখতে পায় দূরে কতকগুলি মেয়ে পূজা করছে।

উমনো-ঝুমনো সে স্থানে যাওয়া মাত্রই পূজার ঘটটি উলটে পড়ে গেল। তখন অন্য মেয়েরা রাগে অস্থির হয়ে কন্যাদ্বয়কে বলে তোমরা অলক্ষ্মী এখানে এসেছ। উমনো-ঝুমনো তাদেরকে নিজেদের কাহিনী সব বলে। তখন অন্য মেয়েরা দুই বোনকে ইতু ব্রত করতে বলে। এর ফলে সব দুঃখ ঘুচে যাবে।

এই কথা শুনে দু’জন তৎক্ষণাৎ স্নান করে ইতু ব্রত করে। ব্রতশেষে উমনো ও ঝুমনো বলে আমার বাবা-মার দুঃখ দূর করো। ধনেধান্যে যেন গৃহ পূর্ণ হয়ে যায়। বর দাও যেন সব ইচ্ছা পূরণ হয়। তারপর ইতু ঘট নিয়ে দুই বোন বাড়িতে আসিয়া দেখে ইতুর কৃপাতে ধনৈশ্বর্য পেয়ে বাবা-মা আনন্দে বাস করছে। কন্যাদ্বয়ে দ্বিজ দেখিয়া বলিল, এতদিন পর তোরা কোথা থেকে এলি।

কন্যাদ্বয় অভিমানে পিতাকে বলিল, তোমরা ধনী হইয়াছ, মোদের কারণেই। ইতু ব্রত করি মোরা অতি ভক্তিভরে। ব্রাহ্মণী এতক্ষণ গৃহ মধ্যে ছিল, বাহির হইয়া কন্যাদ্বয়কে মাতৃস্নেহে বুকে টেনে নেয়। কন্যাদ্বয় কহিল, মাতা ভক্তিভরে ইতু ব্রত করো প্রতি রবিবারে। ইতুর কৃপায় সংসারে দুঃখ-কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণা সব দূর হয়ে যাবে।

ইতুপূজা ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: অক্ষয়তৃতীয়া ব্রত ||

অক্ষয়তৃতীয়া ব্রত

ব্রতের নিয়ম- বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়া তিথিতে এই ব্রত করতে হয়। যব দিয়ে লক্ষ্মীনারায়ণের পূজা করে-ভোজ্য, জলপূর্ণ কলসী, তালপাতার পাখা, নতুন কাপড় বা গামছা ব্রাহ্মণকে দান করতে হয়। পরপর আট বছর এই ব্রত পালন করে শেষে উদ্যাপন করার বিধি।

ব্রতের উপকরণ- কিছু যব, একটি ভোজ্য, একখানি তালপাতার পাখা, একখানি নতুন কাপড় ও একটি জলপূর্ণ কলসী প্রয়োজন হয়। এগুলিই এই ব্রতের উপকরণ।

উদ্যাপন বৎসরে প্রত্যেক বস্তু সংখ্যায় আটটি হিসাবে ব্রাহ্মণকে দক্ষিণা সহ দান করতে হবে। এই দিন যবের ছাতু খেয়ে দিন-রাত কাটাতে হয়। ব্রতের ফল-এই ব্রত বহুকাল যাবৎ এ দেশে প্রচলিত। এই ব্রত স্ত্রী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই নির্দিষ্ট। এই ব্রত উদ্যাপন করলে সকল রকমের পার্থিব যশ সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে মৃত্যুর পরে বৈকুণ্ঠ প্রাপ্তি হয়।

অক্ষয়তৃতীয়া ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: তালনবমী ব্রত ||

তালনবমী ব্রত

ব্রতের নিয়ম- ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়। পর পর ন’বছর করে শেষে উদ্যাপন করতে হয়। পিষ্টক প্রভৃতি দিয়ে নারায়ণের ভোগ দিয়ে ব্রতশেষে ব্রাহ্মণভোজন করিয়ে, নিজ নিজ স্বামীগণকে আহার করিয়ে, তারপর নারীগণ নিজে আহার করবে।

ব্রতের উপকরণ- ঘট, দীপ, ধূপ, ফুল, নৈবেদ্য, নয়টি ফল, তাল, মিষ্টান্ন। উদ্যাপনের দিন ব্রাহ্মণকে একখানি নববস্ত্র ও একটি টাকা দক্ষিণা ধরে দিতে হয়। ব্রতের ফল-এই ব্রত করলে নারীগণ স্বামী-সোহাগিনী হয়ে সুখে কাল যাপন করতে সক্ষম হয়।

ব্রতকথা (Talnabami Vrat)- শ্রীকৃষ্ণের রুক্মিণী ও সত্যভামা নামে দুই রানী ছিলেন। এঁদের ভেতর শ্রীকৃষ্ণ রুক্মিণীকে একটু বেশি ভালবাসতেন। সে জন্য সত্যভামা মনে মনে দুঃখ পোষণ করতেন। একদিন সত্যভামা ব্যথিত হৃদয়ে এক তপোবনে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তপোবনে এক সন্ন্যাসী বাস করতেন। সত্যভামা সন্ন্যাসীকে তাঁর মনের কষ্টের কথা বললেন। সন্ন্যাসী বললেন, আমি এক ব্রতের কথা জানি, সেই ব্রত করলে স্বামী-সোহাগিনী হওয়া যায়। ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের নবমী তিথিতে লক্ষ্মী-জনার্দনের পূজার মধ্যে দিয়ে এই ব্রত উদ্যাপন করতে হয়। এই ব্রতের নাম তালনবমী ব্রত। এই ব্রতের প্রধান অঙ্গ তালফল দান। ন’বছর এই ব্রত পালন করে শেষে উদ্যাপন করতে হয়। সত্যভামা গৃহে ফিরে নয় বছর এই ব্রত পালন করে উদ্যাপন করেন ও শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হন।

তালনবমী ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: রামনবমী ব্রত ||

ব্রতের নিয়ম- এইদিন উপবাসী থেকে শ্রীরামচন্দ্রের পূজা ইত্যাদি করে গঙ্গাতীরে পিতৃপুরুষের তর্পণ করতে হয়। পরদিন অর্থাৎ দশমীর দিন ব্রাহ্মণভোজন ও ব্রতকথা শ্রবণ করে জলযোগের মাধ্যমে পারণ করার নিয়ম।

ব্রতের উপকরণ- পঞ্চগুঁড়ি, পঞ্চগব্য, তিল, হরীতকী, ফুল, দূর্বা, তুলসী, বেলপাতা, ফুলমালা, ধূপ, দীপ, ধূনা, দধি, মধু, চিনি, ঘৃত, রামচন্দ্রের ধুতি, সীতার ও কৌশল্যার শাড়ি, আসনাঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, নৈবেদ্য, কুঁচা নৈবেদ্য, উপকরণ, ভোগের দ্রব্য ও দক্ষিণা।

রামনবমী ব্রত

ব্রতকথা (Ramanvami Vrat)- মহারাজ দশরথ ছেলেপুলে না হওয়ার জন্য রঘুবংশ রক্ষার চিন্তায় অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়লেন। শেষ পর্যন্ত কুলগুরু বশিষ্ঠ উপদেশ দিলেন সস্ত্রীক শিবদুর্গা মন্ত্র জপ করে যাবার জন্যে। দশরথ তখন প্রধানা মহিষী কৌশল্যাকে নিয়ে অত্যন্ত ভক্তি সহকারে দীর্ঘকাল ধরে ঐ মন্ত্র জপ করতে লাগলেন। রাস্ত্র দশরথের শ্রদ্ধাভক্তিতে মহেশ্বর ভোলানাথের হৃদয় বিগলিত হল। তিনি তাঁকে দর্শন দিয়ে বললেন- বৎসে, তোমার মনোবাসনা অবশ্যই পূর্ণ হবে। তুমি অবিলম্বে পুত্র্যেষ্টি-যজ্ঞের অনুষ্ঠান করো। 

রাজা দশরথ যজ্ঞের আয়োজন করলেন। তারপর এক শুভদিনে এই ব্রত যজ্ঞ সুসম্পন্ন হল। সেই যজ্ঞের চরু খেলেন দেবী কৌশল্যা। অল্পকালের মধ্যেই রানীর মধ্যে গর্ভের লক্ষণ দেখা দিল। রাজা দশরথ আনন্দিত হলেন। যথাসময়ে কৌশল্যার গর্ভ থেকে স্বয়ং জনার্দন রামরূপে আবির্ভূত হলেন। অযোধ্যা নগরীতে উৎসবানন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগল চারদিকে। শ্রীরামচন্দ্রের পবিত্র আবির্ভাবের দিন, তাই এই দিনটির নাম রামনবমী। এই দিনটিকে স্মরণীয় রাখবার জন্যেই এই ব্রত।

ব্রতের ফল- এই ব্রত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যে নির্দিষ্ট। এই ব্রত উদ্যাপন করলে কৃতী পুত্রের জনক-জননী হয়ে জীবনে সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করা যায়।

রামনবমী ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: রাধাষ্টমী ব্রত ||

ব্রতের নিয়ম- ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে এই ব্রত করতে হয়। ব্রতের দিন উপবাসী থেকে শ্রীরাধিকা, ললিতা, বিশাখা প্রভৃতি অষ্টসখী ও বৃষভানু, নন্দ প্রভৃতির পূজা দিতে হবে। ব্রতের পরদিন ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবগণকে ভোজন করিয়ে আশীর্বাদ নিতে হয়।

ব্রতের উপকরণ- গন্ধ, পুষ্প, আতপচাল, সিদ্ধচাল, নৈবেদ্য, আট রকমের আটটি ফল।

ব্রতের ফল- এই ব্রত বাঞ্ছিতকে লাভ করার এবং সংসারকে সুখময় করার প্রকৃত উপায়।

রাধাষ্টমী ব্রত

ব্রতকথা (Radhastami Vrat)- এক সময়ে সূর্যদেব মন্দার পর্বতে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণের আরাধনায় নিমগ্ন হলেন। সূর্যের অভাবে ত্রিলোক অন্ধকার, দেবগণ উৎকণ্ঠিত হয়ে কৃষ্ণের কাছে গিয়ে হাজির হলেন। বললেন, বাসুদেব উপায় করুন।

শ্রীকৃষ্ণ মন্দার পর্বতে গিয়ে সূর্যকে দর্শন দিয়ে বললেন, তোমার তপস্যায় আমি তুষ্ট, তুমি বর প্রার্থনা করো। তখন সূর্যদেব বললেন, আমাকে একটি কন্যারত্ন দান করুন, তবে এমন কন্যা, চিরদিন যার বশে স্বয়ং আপনি অবস্থান করবেন।

শ্রীকৃষ্ণ বললেন, তথাস্তু। তারপরে আরও বললেন, আমি একমাত্র রাধিকা ভিন্ন অন্য কোনো নারীতে বশীভূত নই। আমি পৃথিবীভার লাঘবের জন্য শ্রীধাম বৃন্দাবনে নন্দালয়ে প্রতিপালিত হব, আর তারই অদূরে গোকুলে তুমি রাজা বৃষভানুরূপে জন্মগ্রহণ করবে এবং তারপর তোমার অভিলাষ পূর্ণ হবে।

তারপর একদিন সূর্যদেব রাজা বৃষভানুরূপে জন্ম নিলেন। সুলক্ষণা গোপকন্যা সুকীর্তির সঙ্গে তাঁর বিবাহ হল। তারপর ভাদ্রমাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে অনুরাধা নক্ষত্রে সুকীর্তির গর্ভে এক রূপবতী কন্যা জন্মগ্রহণ করেন। ইনিই শ্রীরাধিকা।

শ্রীরাধা আয়ান ঘোষের সঙ্গে পরিণীতা হলেন। কিন্তু যৌবনের প্রারম্ভ লগ্নেই তিনি পরস্ত্রী হয়েও শ্রীকৃষ্ণকে পরম পুরুষ জ্ঞানে তার সঙ্গ কামনায় ব্যাকুল হলেন এবং শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গোপনে বিহার করতে লাগলেন। কালক্রমে রাধা ও কৃষ্ণ অভিন্ন হয়ে গেলেন। রাধা তুষ্ট হলেই কৃষ্ণ তুষ্ট। বৈষ্ণব সাধকগণ বিধান দিলেন, যদি কৃষ্ণকে পরিতুষ্ট করতে চাও, তাহলে শ্রীরাধিকার জন্মলগ্নে রাধাষ্টমী ব্রত উপযাপন করো।

রাধাষ্টমী ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: জন্মাষ্টমী ব্রত ||

ব্রতের উপকরণ– সিদ্ধি, সিঁন্দুর, তিল, হরীতকী, পঞ্চশস্য, পঞ্চগুঁড়ি, পুষ্পাদি, বস্ত্র ২, আসনাঙ্গুরীয় ২, মধুপর্কবাটি ২, নৈবেদ্য ১, কুচা নৈবেদ্য ১, ভোগের দ্রব্য, আরতির দ্রব্য, দধি, দুগ্ধ, মধু, চিনি, গোময়, গোচনা, তৈল, হরিদ্রা, গুড়, বালি, কাষ্ঠ, খোড়কে, গব্যঘৃত, পূর্ণপাত্র, ভোজ্য, দক্ষিণা।

ব্রতের নিয়ম- ব্রতের পূর্বদিন সংযমী থাকিয়া ও হবিষ্যান্ন গ্রহণ করিয়া, তার পরদিন প্রাতঃস্নান করিয়া নিত্যক্রিয়া সমাধাপূর্বক নারায়ণশিলার সম্মুখে শুদ্ধাসনে পূর্ব বা উত্তরমুখে উপবেশন করিয়া আচমন ও করযোড়ে বিষ্ণুস্মরণ করিবেন।

আচমন- ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণু, মন্ত্র পাঠপূর্বক আচমন করিয়া করজোড়ে বিষ্ণুস্মরণ করিবেন। বিষ্ণুস্মরণ-ওঁ তদ্বিষ্ণো পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্। ওঁ অপবিত্র পবিত্রবা সর্বাবস্থাং গতোহপিবা। যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তর শুচি।। ওঁ সর্বমঙ্গল মঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্মাণি কারয়েৎ।।

জন্মাষ্টমী ব্রত

জন্মাষ্টমী ব্রতকথা (janmashtami vrat)

নারায়ণং নমস্কৃত্য নরঞ্চৈব নরোত্তমম্। 

দেবীং সরস্বতীঞ্চৈব ততো জয় মুদীরয়েৎ।। 

একদা দিলীপ রাজা বসি সিংহাসনে। 

নানা আলোচনা করে পাত্রমিত্র সনে।। 

সহসা বশিষ্ঠ মুনি তথায় আসিল। 

মুনিরে দেখিয়া রাজা আনন্দিত হৈল। 

পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া রাজা তুষিল মুনিরে। 

তুষ্ট হয়ে মুনি বসে সভার মাঝারে।। 

অতঃপর মহারাজ করজোড়ে কর। 

এক প্রশ্ন মনে মোর হয়েছে উদয়।। 

ব্যাকুল হয়েছি আমি জানিতে ঘটনা। 

কৃপা করি পূর্ণ কর মনের বাসনা।। 

কি কারণে নারায়ণ গোলক ত্যজিয়া। 

জন্মেছিল পূর্ণব্রহ্ম মর্ত্যেতে আসিয়া।। 

শুনিয়া বশিষ্ঠ বলে শুন হে রাজন। 

মহাপুণ্যময় ঘুরায় ছিল রাজা কংস নামধারী। 

মহাপরাক্রান্ত আর কথা করাব শ্রবণ।। 

মথুরায় অতি অত্যাচারী।। 

দেবতা ব্রাহ্মণে ভক্তি ছিল না তাহার। 

প্রজাগণ প্রতি সদা করে অত্যাচার।। 

একদিন সভামধ্যে কংস বসেছিল। 

সহসা নারদ ঋষি তথায় আসিল।। 

নারদে দেখিয়া কংস পরম যতনে। 

পাদ্য অর্ঘ্য দিয়া তাঁরে বসায় ‘আসনে।। 

ঋষি বলে কহ রাজা রাজ্যের কুশল। 

কংস বলে ঋষিবর সকলি মঙ্গল।। 

দেবকী নামেতে ছিল কংসের ভগিনী। 

ভক্তিমতী তিনি বসুদেবের গৃহিণী।। 

বসুদেব দেবকীর প্রসঙ্গ উঠিল। 

শুনিয়া নারদ তাহা বিষাদিত হৈল।। 

কংস রাজা বলে ঋষি কিসের কারণ। 

দেবকীর কথা শুনি বিষাদিত মন।। 

দেবর্ষি নারদ বলে শুন হে রাজন। 

ভাগিনেয় হস্তে হবে তোমার মরণ।। 

এত বলি ঋষিবর সভা ত্যাগ কৈল।

 নারদের কথা শুনি কংস ভীত হৈল।। 

পরদিন কংস রাজা বসিয়া সভায়। 

পাত্র মিত্রগণে বলে কি হবে উপায়।। 

শেষে কংস ভেবে চিন্তে না দেখি উপায় ।। 

দেবকীরে কেশে ধরি কাটিবারে যায়। 

বসুদেব বলে কংসে বিনয় বচনে।’ 

নারীহত্যা কর রাজা কিসের কারণে।। 

সর্বশাস্ত্র বিশারদ তুমি হও জ্ঞানী। 

কেন কর নারী হত্যা বল দেখি শুনি। 

কংস বলে বসুদেব করহ শ্রবণ। 

দেবর্ষি যা বলেছেন সেই বিবরণ।। 

দেবকীর অষ্টম গর্ভে যে পুত্র জন্মিবে। 

সেইপুত্র একদিন মোরে বিনাশিবে। 

শুনিয়া সান্ত্বনা করি বসুদেব কয়। 

নারী বধে মহাপাপ ওহে নররায়। 

দেবকীর পুত্র হলে তোমা দিব দান। 

অবলায় না বধিয়া রাখহ পরাণ। 

এত শুনি মনে মনে ভাবিল রাজন। 

ইহারে বধিয়া মোর কিবা প্রয়োজন।। 

দেবকীর গর্ভে যত সন্তান জন্মিবে। 

সেই শিশু লয়ে বধ করিব যে তবে।। 

অতঃপর কংস বসুদেব দেবকীরে। 

বন্দী করি রাখি দিল লৌহ কারাগারে।। 

বক্ষেতে চাপায় আনি দারুণ পাষাণ। 

বসুদেব দেবকীর আকুল পরাণ।। 

হস্ত পদ বাঁধি রাখে লৌহ শৃঙ্খলেতে। 

সশস্ত্র প্রহরী রাখে কারার দ্বারেতে। 

দিবানিশি স্মরে দোঁহে কোথা আছ হরি। 

কারামুক্ত কর প্রভু ভব ভয়হারী।। 

কারাগারে দেবকীর সাত পুত্র হৈল। 

একে একে কংস সবে বিনাশ করিল।। 

নানা অত্যাচার করে কংস নরপতি। 

অত্যাচারে জর্জরিতা হৈল বসুমতী। 

নিপীড়িতা বসুমতী কাঁদিতে কাঁদিতে। 

মহাদেব পাশে গিয়া লাগিল বলিতে।। 

শুন ওহে মহেশ্বর পার্বতীর পতি। 

কংস অত্যাচারে মোর এতেক দুর্গতি। 

ধরিত্রীর দশা হেরি দেব ত্রিলোচন। 

ক্রোধেতে হইল তাঁর আরক্ত লোচন।। 

ধরিত্রীর সম্বোধিয়া মহেশ্বর কয়। 

যাও সতী প্রতিকার করিব নিশ্চয়। 

ভক্তিভরে প্রণমিয়া মহেশ চরণে। 

বসুন্ধরা ফিরে যান আপনার স্থানে।। 

পার্বতীরে লইয়া শিব ব্রহ্মা পাশে যায়। 

ব্রহ্মার নিকটে গিয়া সকলি জানায়।। 

সব কথা শুনি ব্রহ্মা বলেন শঙ্করে। 

কারও সাধ্য নাই জেনো কংসে বধিবারে। 

একটি উপায় আছে ওহে পঞ্চানন। 

কংসকে বধিতে পারে নিজে নারায়ণ।।

 ক্ষীরোদ সাগরে তিনি আছেন শয়ানে। 

চল যাই তাঁর কাছে লয়ে দেবগণে।। 

এত বলি ব্রহ্মা দেবগণেরে ডাকিল। 

দেবগণ ব্রহ্মলোকে উপস্থিত হৈল।।

ব্রহ্মলোকে উপস্থিত হয়ে দেবগণ। 

কংসের বৃত্তান্ত সবে করিল শ্রবণ।।

দেবগণে লয়ে ব্রহ্মা গমন করিল। 

নারায়ণ পাশে গিয়া উপনীত হৈল।।

অনন্ত শয্যায় প্রভু ক্ষীরোদ সাগরে। 

দেবগণ গিয়া সেথা স্তব স্তুতি করে।।

প্রণমি চরণে দেব অখিলের প্রতি। 

কৃপা করি ধরিত্রীর ঘুচাও দুর্গতি।। 

তুমি নিত্য নিরঞ্জন ভব ভয়হারী। 

ত্রিলোক পালন কর্তা তুমি হে শ্রীহরি ॥ 

দুষ্টের দমন কর্তা ওহে নারায়ণ। 

বারে বারে ভক্তে তুমি করেছ রক্ষণ।। 

এবে দেবগণে রক্ষা করহে মুরারি। 

কংস ধ্বংস কর প্রভু সুদর্শন ধারী।। 

নরলোক প্রতি প্রভু চাহ একবার। 

কংস অত্যাচারে সবে করে হাহাকার।। 

পাপে পরিপূর্ণ পৃথ্বী রসাতলে যায়। 

তুমি ছাড়া কে রক্ষিবে এই ঘোর দায়।।

দেবতার স্তব স্তুতি শুনি নারায়ণ। 

ধীরে ধীরে চাহিলেন মেলিয়া নয়ন।।

মৃদু হাস্য করি প্রভু বলে দেবগণে।। 

ব্যাকুল হয়েছ সবে কিসের কারণে।।

ব্রহ্মা মহেশ্বর দাঁড়াইয়া যুক্ত করে। 

কংসের বৃত্তান্ত সব জানায় তাঁহারে।।

শুনি তাহা, দেবগণে বলে নারায়ণ। 

ভাগিনেয় হস্তে হবে কংসের নিধন।। 

অতঃপর যাও সবে নাহি কোন ভয়। 

কংস নাশ হেতু আমি করিব উপায়।। 

শুন বলি মহাদেব আমার বচন। 

ভগবতী সঙ্গে মোর করিবে গমন।। 

জন্ম লব কারাগারে দেবকী গর্ভেতে। 

মহামায়া জনমিবে যশোদা গর্ভেতে। 

এইরূপ পরামর্শ করি দেবগণ। 

নিজ নিজ স্থানে সবে করেন গমন।। 

অতঃপর দেবকীর অষ্টম গর্ভেতে। 

বৈকুণ্ঠ ত্যজিয়া বিষ্ণু এলেন মর্ত্যেতে। 

দেবকীর অষ্টম গর্ভে লৌহ কারাগারে।

 নারায়ণ জন্মিলেন কংস নাশিবারে।। 

হেথায় গোকুল মাঝে নন্দের গৃহেতে। 

ভগবতী জন্মিলেন যশোদা গর্ভেতে। 

একে একে দশ মাস দশ দিন গেল। 

প্রসব সময় আসি উপনীত হৈল।। 

ভাদ্রমাস কৃষ্ণপক্ষ অষ্টমী সে তিথি। 

রোহিণী নক্ষত্রযুক্ত অন্ধকার রাতি।। 

ভীষণ দুর্যোগময় রাত্রি ভয়ঙ্কর। 

ঝম ঝম বারিধারা ঝরে নিরন্তর ।। 

শশূন্ ঝড় বহে ভীষণ গর্জনে। 

ভয়ঙ্কর শব্দে বাজ পড়ে ক্ষণে ক্ষণে। 

অন্তঃপুরে নিদ্রাগত ছিল কংসরায়। 

চমকি উঠিয়া ভাবে হইবে প্রলয়। 

এ হেন দুর্যোগ মাঝে অবনী মাঝারে। 

জন্মিলেন নারায়ণ কংস কারাগারে।। 

পরিধানে পীতবাস কৌস্তুভ গলেতে। 

শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্ম চারিটি হস্তেতে।। 

পুত্র দেখি বসুদেব দেবকী চিন্তিল। 

নারায়ণ মর্ত্যে আসি জনম লভিল।। 

স্তব স্তুতি করি তারা বলে নারায়ণে। 

চারিহস্ত পরিহার করুন এক্ষণে।। 

কেমনে রক্ষিব তোমা কংস হাত হতে। 

ভাবিয়া উপায় মোরা নাই পাই চিতে।। 

অন্তর্যামী নারায়ণ সকলি বুঝিল। 

চারিহস্ত পরিহার দ্বিভুজ হইল।। 

তারপর বসুদেব বিষ্ণুর মায়ায়। 

শৃঙ্খল হইতে মুক্তি সেইক্ষণে পায়।। 

মায়াময় শ্রীহরির আশ্চর্য মায়াতে। 

রক্ষীগণ অচৈতন্য হইল নিদ্রাতে।। 

হেথা বৃন্দাবন মাঝে নন্দের ভবনে। 

ভগবতী ভূমিষ্ঠ হলেন সেইক্ষণে। 

কারাগারে বসুদেব দেবকী তখন। 

পুত্র কোলে লয়ে করে অশ্রু বিসর্জন।। 

এইরূপে দুইজনে কাঁদিতে লাগিল। 

হেনকালে কারাগারে দৈববাণী হৈল।। 

শুন বলি বসুদেব আমার বচন। 

পুত্রলয়ে বৃন্দাবনে করহ গমন।। 

নন্দালয়ে যশোদার কন্যা হইয়াছে। 

ত্বরা করি যাও তুমি যশোদার কাছে। 

পুত্রেরে রাখিয়া তথা লইয়া কন্যারে। 

পুনরায় ফিরে এসো কংস কারাগারে। 

দৈববাণী বসুদেব শুনি নিজ কানে।

পুত্র লয়ে ব্রজে যায় অতীব যতনে। 

অচেতন রক্ষীগণ বিষ্ণুর মায়ায়। 

আপনা-আপনি কারাদ্বার খুলে যায়।। 

অন্ধকার চারিদিক বেগে ঝড় বয়। 

পুত্র লয়ে বসুদেব সাবধানে যায়।। 

যমুনার তীরে আসি উপনীত হয়। 

কেমনে হইবে পার নাহিক উপায়।। 

জলে পরিপূর্ণ নদী ভীষণ আকার। 

খরতর স্রোত তাহে বহে অনিবার।। 

উত্তাল তরঙ্গময়ী যমুনার পারে। 

কিরূপে হইবে পার ভাবিছে অন্তরে।। 

সহসা শৃগাল এক পার হয়ে গেল। 

তাহা দেখি বসুদেব জলেতে নামিল।। 

কৃষ্ণে হেরি সে যমুনা আনন্দ অন্তরে। 

সাধ হ’ল কৃষ্ণ সনে ক্রীড়া করিবারে। 

অন্তর্যামী ভগবান মনেতে জানিল। 

বসুদেব ক্রোড় হতে জলেতে পড়িল।। 

দেখি তাহা বসুদেব লাগিল কাঁদিতে। 

জলমধ্যে পুত্রে তার লাগিল খুঁজিতে।। 

নারায়ণ বসুদেবে কাতর দেখিয়া। 

ক্রীড়া সাঙ্গ করি প্রভু উঠিল ভাসিয়া।। 

বসুদেব তাড়াতাড়ি কোলে তুলে নিল। 

যমুনা হইয়া পার নন্দালয়ে এল।। 

পুত্র দিয়া কন্যা লয়ে অতি যত্ন করে। 

বসুদেব আসে পুনঃ কংস কারাগারে। 

প্রাতে কংস দূতমুখে পাইল শুনিতে। 

কন্যা এক হইয়াছে দেবকী গর্ভেতে।। 

সংবাদ পাইয়া কংস কারাগারে এল। 

কন্যা লয়ে পাষাণেতে আছাড় মারিল।। 

পাষাণে না পড়ি কন্যা উঠি শূন্যোপরে। 

কংসেরে ডাকিয়া কন্যা বলে উচ্চৈঃস্বরে।। 

শোন্ ওরে দুষ্ট কংস আমার বচন। 

তোরে যে নাশিবে আছে গোকুলে এখন।। 

শুনি তাহা কংসরাজ মহা ভয় পায়। 

শ্রীকৃষ্ণে বধিতে করে অনেক উপায় ।। 

কিন্তু কিছুতেই কৃষ্ণে বধিতে নারিল। 

নারদ আসিয়া শেষে কংসে যুক্তি দিল।। 

পরামর্শ পেয়ে কংস যজ্ঞ আরম্ভিল। 

নিমন্ত্রণ পেয়ে কৃষ্ণ বলরাম এলো। 

বধ করি রাম কৃষ্ণ কুবল হস্তীরে। 

দুই ভাই ধেয়ে এল যজ্ঞসভা দ্বারে। 

চানুর মুষ্টিক নামে দুই মল্ল ছিল। 

রাম কৃষ্ণ তাহাদের বিনাশ করিল।। 

প্রকাণ্ড ধনুক এক ছিল যজ্ঞাগারে। 

কৃষ্ণ তাহে গুণ দিয়া কণ্ড খণ্ড করে।।

 যজ্ঞস্থলে প্রবেশিয়া শ্রীকৃষ্ণ তখন। 

নিজ হস্তে কংসরাজে করিল নিধন। 

কংসে বধি রাম কৃষ্ণ কারাগারে গেল। 

বসুদেব দেবকীরে কারামুক্ত কৈল।। 

দেবকী ও বসুদেব কারামুক্ত হয়ে। 

করিল কৃষ্ণের স্তব ভক্তিযুক্ত হয়ে।। 

এইরূপে ধরাভার করিতে মোচন। 

দেবকীর গর্ভেতে জন্মিলেন নারায়ণ।।

শ্রীকৃষ্ণ জন্মের তত্ত্ব অতি পুণ্যময়। 

এ তত্ত্ব শ্রবণে সর্ব পাপ নাশ হয় ।। 

ভক্তাধীন ভগবান ভক্তের কারণে। 

যুগে যুগে এসেছেন এই ধরাধামে। 

মহাপাপী কংসরাজে উদ্ধার করিতে। 

জন্মিলেন নররূপে দেবকী গর্ভেতে।। 

কৃষ্ণ হস্তে প্রাণ দিয়া কংস নররায়। 

পুষ্পরথে দিব্যদেহে বৈকুন্ঠেতে যায়।। 

এই তো শুনিলে ওহে দিলীপ রাজন। 

শ্রীকৃষ্ণ জন্মের তত্ত্ব অপূর্ব কথন।। 

এই ব্রত যেইজন করে ভক্তিভরে। 

সপ্ত জনমের পাপ যায় তার দূরে।। 

যেই মূঢ় এই ব্রত না করে পালন। 

মনুষ্য কুলেতে তার বৃথাই জনম।। 

ভক্তাধীন হয় সেই দেব দয়াময়। 

মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় তাঁহার কৃপায় ।। 

যদি কেহ একবার কৃষ্ণ বলে ডাকে। 

সকল বিপদে কৃষ্ণ রক্ষা করে তাকে।। 

দুষ্টের দমন আর ভক্তে রক্ষিবারে। 

অবতীর্ণ হয়েছেন মর্ত্যের মাঝারে । 

যখনি ধর্মের গ্লানি উপনীত হয়। 

ধর্ম রক্ষা লাগি আসে কৃষ্ণ দয়াময়।। 

কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি যেবা ডাকে বার বার। 

অবহেলে চলে যায় ভবসিন্ধু পার।। 

ভক্তগণ বলে সবে কৃষ্ণ দয়াময়। 

অন্তিম কালেতে দিও চরণে আশ্রয় ।। 

জন্মাষ্টমী ব্রতকথা হৈল সমাপন। 

হরি হরি হরি বল যত ভক্তগণ।। 

হরি বিনে মুক্তি নাই ইহা জেনো সার। 

তাই বলি হরি বলে ডাক বার বার ।।

জন্মাষ্টমী ব্রত সমাপ্ত

|| Vows and Rules of all Gods: জিতাষ্টমী ব্রত ||

ব্রতের নিয়ম- আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে বাড়ির উঠোনে ছোট আকারের একটি পুকুর খুঁড়ে তার মাবাখানে কলাচারা ও বেলচারা পুঁতে সারাদিন স্বামী-স্ত্রী উপবাসে থেকে পুরোহিত দিয়ে এই ব্রত উদ্যাপন করে ব্রত শেষে ব্রতকথা শুনে জলযোগ করতে হয়।

ব্রতের উপকরণ- নানা প্রকার ফল, ভিজে মটর কলাই, আতপচালের নৈবেদ্য, দীপ, ধূপ, ফুল ইত্যাদি।

ব্রতের ফল (Jitastami Vrat)- এই ব্রত পালন করলে বন্ধ্যা নারীও পুত্রলাভ করে। 

ব্রতকথা- সেকালে শালিবাহন নামে এক পরম ধার্মিক রাজা ছিলেন। তাঁর রানীও ছিলেন অতি ধর্মপরায়ণা, গুণে গুণবতী আর দেখতেও ছিলেন অতীব সুন্দরী। কিন্তু রাজা-রানীর মনে কোনো সুখ ছিল না, কারণ তাঁরা ছিলেন নিঃসন্তান। একদিন রাত্রে রানী স্বপ্ন দেখলেন, একজন দেবতা হাঁসের পিঠে চড়ে এসে তাঁকে বলছেন, তুমি জিতাষ্টমী ব্রত পালন করো, তা হলেই তোমার ছেলে হবে।

মঙ্গলচণ্ডী ব্রত

পরদিন সকালে রানী ঘুম থেকে উঠে রাজাকে স্বপ্নের কথা বললেন। স্বপ্নে সেই দেবতা যেমন বলেছিলেন, সেই নিয়ম অনুসারে আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা অষ্টমী তিথিতে রাজা উঠোনে একটা ছোট পুকুর কাটলেন, সেই পুকুরের মধ্যিখানে কলাগাছ ও ফলের নৈবেদ্য সাজিয়ে রাজা-রানী সমস্ত দিন উপবাস থেকে জিতাষ্টমী ব্রত উদ্যাপন করলেন এবং পূজার শেষে একটি পুত্র ও একটি কন্যা বর চাইলেন।

কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের একটি পুত্র ও একটি কন্যা জন্মগ্রহণ করল। ক্রমে ক্রমে ছেলেমেয়ে বড় হল। তারপর এক শুভদিনে ছেলে ও মেয়ের ভাল ঘরে ও বরে বিয়ে দিলেন। রাজা-রানী প্রতি বছর নিয়মিত ব্রত করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের ছেলের বউ এসব ব্রত দেখে আড়ালে মুখ টিপে হাসে ও শাশুড়িকে নানা টিটকারি পর্যন্ত করে। এদিকে ছেলের বউয়ের প্রায় প্রতি বছরই ছেলেপুলে হয় অথচ একটু বড় হতে না হতেই তারা মারা যায়।

শাশুড়ি বউমাকে তখন বললেন, এক কাজ করো বউমা, তুমি জিতাষ্টমী ব্রত করো। দেখবে আর তোমার ছেলেপুলে মরবে না। বউমা তো তাচ্ছিল্যের সুরে বলল, ও সব ব্রত-ট্রত আমার দ্বারা হবে না। শেষে শাশুড়ি তাকে অনেক করে বুঝিয়ে রাজি করালেন। 

তারপর থেকে বউমার যতগুলি ছেলেপুলে হল, একটিও মরল না। সেই থেকে দেশে দেশে এই ব্রতের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল।

জিতাষ্টমী ব্রত সমাপ্ত

General rules of domestic puja: ঘরোয়া পূজার সাধারণ নিয়ম

rules-of-domestic-puja

সাধারণ মানুষের আগে জানা প্রয়োজন, কেন আমরা নির্দিষ্ট নিয়মে (rules of domestic puja) পূজা-পাঠ, হোম-যজ্ঞ করব। তার একমাত্র বিশেষ কারণ হল, পূজা অর্থে ভগবানকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে ডাকা, শ্রদ্ধা করা, ভক্তি করা, আমাদের হৃদয়-মনের স্থানে বসানো।

মনের প্রেরণাকে আরো উজ্জীবিত করা। যে দেবদেবীকে মানুষ পূজা করে, তাকে নিজের ভালমন্দ সমর্পণ করার আর এক নাম পূজা।

এই সমস্ত দেবদেবীকে ডাকলে পার্থিব জগতের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, দারিদ্রতা, দুর্ভাগ্যকে জয় করে বা নিয়ন্ত্রণের দ্বারা সৌভাগ্যকে সহজেই জয় করতে সক্ষম হয়।

এই জগতসংসার বিশ্ব-মহামায়ার অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পার্থিব জগতে যাহা কিছুর মধ্যে রূপ, রস, গন্ধ আছে তাহাই সাকার রূপ শক্তি মায়ার অধীনে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

Table of Contents

rules of domestic puja

ঘরোয়া পূজার (Rules of domestic puja) নিয়ম প্রণালী

সুতরাং মানুষের জানা প্রয়োজন নিত্য পূজা -এর সাধারণ কিছু নিয়ম (Rules of domestic puja) আছে। আমরা সবাই জানি যে একজন পুরোহিত কিংবা ব্রাহ্মণের মতো নিখুঁত এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পূজা করা একজন সাধারণ গৃহস্ত মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু তার এই অর্থ নয় যে আমরা puja করবোনা বা পূজার নূন্যতম নিয়মগুলো অনুসরণ করবোনা।

নিত্য গৃহ দেবতা পূজা হউক অথবা একটি বিশেষ তিথির অথবা বিশেষ দেবী-দেবতার পূজা, সব পূজার একটি সাধারণ নিয়ম (Rules of domestic puja) আছে। সেই নিয়ম অনুসরণ করে যেকোনো পূজা খুব অনায়াসে করে ফেলা যায়। 

যে যে বিষয় বা বস্তুর মালিক যে যে দেব বা দেবী তাদেরকে মনের একাগ্রতার মাধ্যমে, সঠিক নিয়মে (rules of domestic puja) পূজাপাঠ, জপ, ধ্যান করতে পারলে ব্রহ্মাদেব আশীর্বাদ করেন।  বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এই সমস্ত দেবদেবীর আরাধনার মাধ্যমে আমরা জগতের এবং নিজের কল্যাণ সাধন করতে পারি। 

ঘরোয়া পূজোর আগের দিন

যে দেবতা বা দেবীর puja করবেন, সেই দেবদেবীর প্রতি সম্পূর্ণ ভক্তি, বিশ্বাস ও মনোনিবেশ চিন্তায় নিষ্ঠা থাকতে হবে এবং আগের দিন নিরামিষ ভোজন ও পূজার দিনে উপোস থাকবেন তবে একেবারে নির্জলা উপবাসে থাকবেন না, বিশেষ করে গৃহী।

তার কারণ হল, আমরা নিরাকার ব্রহ্মের পূজা করি বটে কিন্তু সাকারের মধ্য দিয়ে নিরাকার ব্রহ্মের পূজা করি, অর্থাৎ এই বিশ্বজগতের সমস্ত মানুষই একমাত্র পরমাত্মাকেই সেবা করেন।

কেউ প্রত্যক্ষ আবার কেউ পরোক্ষ ভাবে পূজা, পাঠ, জপ, হোম, তর্পণ ইত্যাদি করেন সুতরাং সেই পরমব্রহ্ম বা পরমাত্মার সাকার রূপ হচ্ছে জগতের জীব তথা মানুষ। 

সেই কারণেই মানুষের হৃদয়ের আত্মাকে কখনো নির্জলা কষ্ট দিয়ে অন্যান্য দেব বা দেবীর পূজা করলে ভগবান রুষ্ট হয়। সর্বকার্য, আশা নিষ্ফল হয়।

domestic worship

ঘরোয়া পূজার (Rules of domestic puja) ধাপগুলি

1) আচমন

আচমন অনেক রকম পক্রিয়ায় করা যায়। তবে দুটি পক্রিয়া হচ্ছে পূজার জন্য পরিপূরক। তাছাড়া যারা খুব সহজভাবে কার্য সিদ্ধি করতে চায় তারা  শুধু বিষ্ণু স্মরণ করেও আচমন ক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে।

কিন্তু আমরা এতো সংক্ষিপ্ত আচমনের কথা বলবো না। তার কারণ আমরা মনে করি যারা পূজা পাঠ করতে ভালোবাসেন তারা নিজেদের মনের ভালোবাসা, ভক্তি থেকে পূজা করেন।

সেক্ষত্রে কিছু নিয়ম অন্তত মেনে চলা উচিৎ। তাতে নিজের করা পূজার প্রতি একটা সততা এবং নিজের মনে একটা ভালো অনুভব থাকে। নিম্নে সেই দুই পদ্ধতিতে ঘরোয়া পূজার আচমন পক্রিয়া উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথম পদ্ধতিতে আচমন

গৃহকর্তা বা কর্ত্রী পূর্ব বা উত্তর দিকে মুখ করে বসে কুশ দিয়ে আংটি দুটি তৈরি করে দুই হাতে পার্শ্বের আঙ্গুলে ধারণ করবে এরপরে কোশা থেকে অল্প একটু শুদ্ধ জল নিয়ে মুখ শোধন করিবে।

যদি কুশের আংটি তৈরী করা সম্ভহব না হয় সেক্ষত্রে অনামিকা আঙুলের মাধ্যমে কোশা থেকে অল্প একটু শুদ্ধ জল নিয়ে মুখ শোধন করিবে।

মন্ত্রঃ- ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ এইভাবে তিনবার বলে জল মুখে নেবেন। হাতের তালুতে জল নিয়ে (হাতের তালুকে ব্রাহ্মতীর্থ বলে) এবারে ডান হাতের তর্জনী, মধ্যমা, অনামিকা দ্বারা মুখে ঠোঁটে স্পর্শ করে তর্জনী দিয়ে নাক স্পর্শ করিবে। অনামিকা আঙুল দিয়ে দুই চক্ষু ও দুই কান এবং কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে নাভি এবং ডান হাতের তালু দিয়ে হৃদয় ও দুই বাহুদ্বয় স্পর্শ করে (করজোড়ে)।

বিষ্ণু স্মরণ পাঠ করবে- ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রোবা সর্বাবস্থাং গতোহপিবা যঃস্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং সবাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ, ওঁ সর্বমঙ্গলাঃ মঙ্গল্যং, বরেণ্যং বরদং শুভম। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্ব (অমুক) কর্মাণি কারয়েৎ, নমঃ মাধবো মাধবো বাচি, মাধবো মাধবো হৃদি, স্বরন্তি সাধবঃ সর্বে মমোসর্বকার্যেযু মাধবম।। নমঃ মাধবায় নমঃ (৩ বার)।।

দ্বিতীয় পদ্ধতিতে আচমন

মন্ত্রঃ- ওঁ কেশবায় নমঃ, ওঁ নারায়নায় নমঃ ওঁ মাধবায় নমঃ

এই তিন মন্ত্র দিয়ে আচমন করতে হবে। প্রতিবার হাত ধুয়ে নিতে হবে। তারপর হাতজোর করে পথ করে নিন্মলিখিত  মন্ত্র উচ্চারণ করতে হবে।

বিষ্ণু স্মরণ পাঠ করবে- ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ো দিবীব চক্ষুরাততম্। তদ্‌ বিপ্রাসো বিপন্যবো জাগ্‌বাংসঃ সমিন্ধতে বিষ্ণোর্যৎ পরমং পদম্।। 

2) সঙ্কল্প

কুশীতে জল, তিল, হরীতকী ও পুষ্প লইয়া ডান হাতে ঢাকিয়া দক্ষিণ জানু মাটিতে রাখিয়া বলিবে- “বিষ্ণুরোম তৎসদদ্য… মাসি… পক্ষে…তিথৌ …গোত্রঃ শ্রী…দেবশর্মা (নিজের গোত্র ও নাম বলিবে)। শ্রী…দেবতা প্রীতিকামো (অথবা শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামো) গণপত্যাদি নানাদেবতা পূজা পূর্বকং শ্রীশ্রী…দেবতা পূজনমহং করিয্যে” (পরের বাড়ির পূজা হইলে নিজের নামের পরে অমুকগোত্রস্য শ্রী অমুক দেবশর্মণ শ্রী… দেবতাপ্রীতিকামে… পূজনমহং করিষ্যামি বলিবে। পরে ঐ জলের কিঞ্চিৎ নিজের ঈশান কোণে ফেলিয়া দিয়া অবশিষ্ট জলাদি তাম্রকুণ্ডে ফেলে দিতে হবে। অতঃপর হাতজোড় করিয়া স্ববেদীয় সঙ্কল্পসূক্ত পাঠ করিতে হইবে।

3) আসনশুদ্ধি

নিজের আসনে একটি ত্রিকোণ মণ্ডল করিয়া তাহাতে এতে গন্ধপুষ্পে ‘হ্রং আধারশক্তিকমলাসনায় নমঃ’ বলিয়া একটি পুষ্প দিয়া আসনে হাত রাখিয়া পাঠ করিতে হইবে:-

আসনমন্ত্রস্য মেরুপৃষ্ঠঋষিঃ সুতলং ছন্দঃ কৃৰ্ম্মো দেবতা আসনপরিগ্রহণে বিনিয়োগঃ। ওঁ পৃথ্বি ত্বয়া ধৃতা লোকা দেবি ত্বং বিষ্ণুনা ধৃতা। ত্বঞ্চ ধারয় মাং নিত্যং পবিত্রঃ কুরু, চাসনম্।। 

এই বলিয়া আসনশুদ্ধি করিবে। অনন্তর আতপতণ্ডুল গ্রহণ করিয়া, সেই আসনের দশদিকে ছড়াইয়া ঊর্দ্ধে তালত্রয় দিয়া, তুড়ি দিয়া দশদিক বন্ধন করিতে হইবে। তাহার পর, আসনে উপবেশন করিয়া, কৃতাঞ্জলিপূর্ব্বক

বামে- ওঁ গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরমগুরুভ্যো নমঃ ওঁ পরাপর-গুরুভ্যো নমঃ, ওঁ পরমেষ্ঠিগুরুভ্যো নমঃ। দক্ষিণে- ওঁ গণপতয়ে নমঃ। মধ্যে- জগন্নাথদেবতায়ৈ নমঃ বলিয়া প্রণাম করিতে হইবে।

4) জলশুদ্ধি ও কোষাকুষি স্থাপন

 কোষাকষির নীচে (ব) চিহ্ন এঁকে বসিয়ে কালো তিল, লাল ফুল, চন্দন, কাঁচা দুধ ও দই যব ইত্যাদি দিয়ে কোষা জলপূর্ণ করিবেন। এবারে (অঙ্কুশ মুদ্রা) দ্বারা অর্থাৎ ডান হাতের মধ্যমা ঐ কোষার জলে ঠেকিয়ে এবং বাম হাত দিয়ে ডান হাত ঢেকে ডান হাতের মধ্যমা ঐ জলে ঘোরাবে আর মন্ত্র বলবে- ওঁ গঙ্গে চ যমুনে চৈব গোদাবরি সরস্বতী, নর্মদে সিন্ধু কাবেরি জলেহস্মিন সন্নিধিং কুরু।।

যদি এইসব মুদ্রা সম্পর্কে  জ্ঞান না থাকে অথবা করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ না হয় সেক্ষত্রে জলের পাত্র স্পর্শ করে মন্ত্র উচ্চারণে জলশুদ্ধি করা যেটা পারে।

5) পুষ্পশুদ্ধি

ফুল স্পর্শ করে- ওঁ পুষ্পে পুষ্পে মহাপুষ্পে সুপুষ্পে পুষ্পসম্ভবে। পুষ্পচয়াবকীর্ণে হুং ফট্ স্বাহা।

6) দ্বারদেবতা পূজা

 পুষ্প লইয়া “এতে গন্ধেপুষ্পে ওঁ দ্বারদেবতাভ্যো নমঃ” মন্ত্রে পূজাগৃহের দ্বারদেশে নিক্ষেপ করিবে। পরে “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ব্রহ্মণে নমঃ” “এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বাস্তুপুরুষায় নমঃ” মন্ত্রে পূজা করিবে।

7) সূর্য্যার্ঘ্য নিবেদন ও সূর্য প্রণাম

 কুশীতে গঙ্গাজল, পুষ্প, চন্দন, দূর্বা, আতপ চাউল, তিল, যব দিয়ে দুই হস্তে স্পর্শ করে ধরিয়া মন্ত্র বলবে-“ওঁ নমো বিবস্বতে।

ব্রহ্মাণ ভাস্বতে বিষ্ণুতেজসে জগতসবিত্রে শুচয়ে সবিত্রে কর্মদায়িনে। ইদমর্থ্যং ওঁ নমো ভগবতে ভগবান শ্রীসূর্য্যায় নমঃ” বলে।

সূর্য্যপ্রণাম করিবে- ওঁ জবাকুসুমশঙ্কাসং কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিম। ধ্বান্তারিম সর্বাপাপঘ্ন প্রণতোহস্মিনদিবাকরম্।।

8) গণেশাদির পূজা

 প্রথমে গণেশ পূজা-ধ্যান-কূর্মমুদ্রায় লাল ফুল, চন্দন মাখিয়ে নিয়ে মন্ত্র- ওঁ খর্বং স্থূলতনুং গজেন্দ্রবদনং লম্বোদরং সুন্দরং প্রস্যন্দন্মদগন্ধলব্ধ মধুপব্যালোলগণ্ড স্থলম, দন্তাঘাত বিদারিতারি রুধিরৈঃ সিন্দুর শোভাকরং বন্দে শৈল সুতাসুতং গণপতিং সিদ্ধিপ্রদং কামদম।।

prarthona mudra
প্রার্থনা মুদ্রা

এরপরে ঘণ্টাবাদ্য সহ ফুল, চন্দন দ্বারা পূজা করবে। 

গাং এষ গন্ধো গণেশায়ঃ নমঃ (সুগন্ধ নিয়ে)-

গাং ইদং সচন্দন পুষ্পং গণেশায় নমঃ,

গাং এষ ধূপো গণেশায় নমঃ,

গাং এষ দীপো গণেশায় নমঃ,

মমো ইষ্ট দেব বা দেবী সম্প্রদানের সহিত গাং ইদং সোপকরণ এতদ্ অক্ষত নৈবেদ্যং গণেশায় নমঃ।

ইষ্ট দেব বা দেখীর সহিত গাং গণেশায়ৈ পাদুকায়ৈ পূজায়মিনমঃ, ইষ্ট দেব বা দেবীর সহিত গাং গণেশায়ৈ পাদুকায়ৈ তর্পয়ামিনমঃ।

গণেশ গায়ত্রী- ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে বক্রতুণ্ডায় ধীমহি তন্নো দন্তী প্রচোদয়াৎ।

গণেশ প্রণাম- (করজোড়ে)  ওঁ দেবেন্দ্র মৌলিকমন্দার মকরন্দ কনারুণাঃ, বিঘ্নং হরন্তু হেরম্ব চরণাম্বুজ রেণবঃ, একদন্তং মহাকায়ং লম্বোদরং গজাননম। মমো সব্ব বিঘ্ননাশকরং দেবং হেরম্বং প্রণমাম্যহম্।।

9) নারায়ণাদির অর্চনা

একটি করিয়া গন্ধপুষ্প নিয়ে নিম্ন মন্ত্র বলে পূজার ঘটে বা তাম্রপাত্রে দিবেন। মন্ত্র: যথা-

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নারায়ণায় নমঃ।

এতে গন্ধপুষ্পে মম শ্রীগুরুবে নমঃ গুরুকরণ না করিলে তারা বলবে এতে গন্ধপুষ্পে মম গুরু পিতা মাতায়ৈ নমঃ।

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ আদিত্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ।

এতে গন্ধপুষ্পে ইন্দ্রাদি দশদিক পালেভ্যো নমঃ।

এতে গন্ধপুষ্পে মৎসাদি দশাবতারেভ্যো নমঃ।

এতে গন্ধপুষ্পে সর্ব্বেভ্যো (পূজনীয় অমুক) দেব বা দেবীভ্যো নমঃ।

Rules of domestic puja: বিশেষ পূজা শুরু

এরপরে যে কোন প্রধান বা মূল দেব বা দেবীর পূজাপাঠ শুরু করতে হবে। যেকোনো পূজা শুরু করার আগে উপরিউল্লিখিত পূজা পদ্ধতি (rules of domestic worship) অনুসরণ করে পূজা করা যাবে।

উপরিউল্লিখিত পূজাগুলো (rules of domestic worship)সম্পন্ন করে আসন প্রতিষ্ঠা, কিন্তু যদি প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহ অথবা ছবি থাকে তাহলে আসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়না। 

আসন প্রতিষ্ঠার পর স্নানাভিষেক পর্ব সম্পন্ন করতে হবে। স্নানাভিষেক পর্বের পর তিলক, শৃঙ্গার এবং দীপ ধুপ প্রজ্জলন করে মূল পূজা শুরু করতে হবে। আরতি করার আগে অথবা শৃঙ্গার পর্ব সেরে ভোগ নিবেদন করতে হবে।

Rules of domestic puja: ভোগ নিবেদন

ভোগ নিবেদনের জায়গাটা ভালো করে পরিষ্কার করে, প্রভুকে পরিষ্কার পাত্রে ভোগ নিবেদন করতে হবে।

Rules of domestic puja: আরতি পর্ব

সাধারণতঃ ধূপ প্রদীপ জলশঙ্খ বস্ত্র/রুমাল পুষ্প চামর এইগুলো দিয়ে নিত্য ঘরোয়া পূজা অথবা বিষয়ে পূজায় আরতি করা হয়ে থাকে। তবে শুধু ধূপ প্রদীপ পুষ্প দিয়েও নিত্য ঘরোয়া পূজায় আরতি করা যায়, যদি বাকিগুলো হাতের কাছে না থাকে।

আরতি করার পদ্ধতিঃ-

ধূপ দিয়ে শুধু সর্বাঙ্গে সাতবার আরতি করতে হবে।

প্রদীপ দিয়ে চারবার পাদপদ্মে, দুইবার নাভিতে তিনবার মুখমণ্ডলে আর সর্বাঙ্গে সাতবার আরতি করতে হবে। 

জলশঙ্খ দিয়ে তিনবার মুখমণ্ডলে আর সর্বাঙ্গে সাতবার আরতি করতে হবে।

বস্ত্র/রুমাল, পুষ্প আর চামর দিয়ে শুধু সর্বাঙ্গে সাতবার আরতি করতে হবে।

FAQs:-

তুলসী কী সব দেবী দেবতার পূজায় ব্যবহার করা যাবে?

স্ত্রীদেবতার পূজা করার সময় তুলসী ব্যবহার করা যাবেনা। শিব ঠাকুরকে তিনটি তুলসী দিয়ে পূজা করা যাবে। গণেশপূজায় তুলসী ব্যবহার করা যাবেনা।

হ্যাঁ করা যাবে। নিত্য ঘরোয়া পূজায় পুষ্পাদি না থাকিলে কেবল জল দিয়ে পূজা করিলেও পূজা সিদ্ধ হইবে।

না করা যাবেনা। উপনীত ব্রাহ্মণ পুরোহিত ছাড়া প্রতিমা বা শালগ্রাম দিয়ে পূজা করার অধিকার কারোর নাই। সাধারণ মানুষ দেব দেবীর পূজা পটে-ঘটে-ছোটো মূর্তিতে করতে পারবে।

সকল দেব দেবীর পূজোতেই ফুলের প্রয়োজন হয়। ফুল ছাড়া কোনো পূজা হয় না। দেবতাগণ সোনা মানিক্য দ্বারা খুশী হোন না, খুশী হোন কেবল ফুলের দ্বারা। তাই ফুল পূজায় অত্যাবশক।

মাটিতে যে ফুল পড়ে থাকে সেই ফুল দেবতাকে উৎসর্গ করা যায়না, চুরি করা ফুল দিয়ে পূজা করা যায়না। কেতকী ফুল দিয়ে কোনো পূজা করা যায়না।