Shanidev Panchali And Bratkotha: শ্রী শ্রী শনিদেবের পাঁচালী ও ব্রতকথা

শালগ্রাম শিলাতে ও শ্রী শ্রী শনিদেবের পূজা (Shanidev Panchali And Bratkotha) করা যায়। শালগ্রাম শিলা যদি না থাকে সেক্ষেত্রে ঘটে আমডাল, সশিষ ডাব, ফুল দূর্বা, সিন্দুর, গঙ্গা মাটি ও গামছা দিয়ে শ্রী শ্রী শনিদেবের পূজা করা যাবে।

Table of Contents

Shanidev Panchali And Bratkotha : পাঁচালী ব্রতকথা

শনিদেবের পাঁচালী ব্রতকথা শুরু করার পূর্বে গনেশ বন্দনা করে নিতে হবে। নিম্নে গনেশ বন্দনা উল্লেখ করা হয়েছে।

|| প্রভু গনেশের বন্দনা ||

বন্দ দেব গজানন গৌরীর নন্দন, সর্ববিঘ্ন নাশ হয় তোমার স্মরণে।।

Shanidev Panchali And Bratkotha: পাঁচালী ব্রতকথা
শনিদেবের পাঁচালী ব্রতকথা

সর্ব্বদেব পাদপদ্মে করিলাম নতি। সূর্য্যপুত্র শনৈশ্চর কহিব ভারতী ।। 

নমঃ নমঃ গ্রহরাজ প্রতাপে অতুল। এই ভবাণবে প্রভু তুমি মাত্র কুল ।। 

গ্রহ মাঝে তুমি দেব হও সুপ্রধান । বিশ্বাস কবির বাঞ্ছ। তব গুণগান।।

দেব নর যক্ষ রক্ষ ভয়ে হতবাক্ । তোমার কোপেতে যদি ঘটেছে বিপাক।।

স্কন্দ পুরাণেতে লেখা তোমার বর্ণন। অপরূপ শৌর্যবীর্য্য তুমি মহাজন।।

একাগ্র মানসে যেবা তব চিন্তা করে। সুখী ভবে সেইজন তব কৃপা করে ।। 

গ্রহরাজ তুমি ওহে জানে সৰ্ব্বজন। তোমার মাহাত্ম্য কথা করিনু বর্ণন ॥ 

শনি পূজা যে বা করে প্রতি শনিবারে। বিপদ আপদ তার পলায় যে দূরে ॥

বিধি বিষ্ণু বিশ্বনাথ তব তুল্য নন। অগ্রেতে তোমার পূজা বন্দি চরণে॥ 

শনির পাচালী যেবা রাখে নিজ ঘরে। সুখ শান্তি বাড়ে তার শনিদেব বরে॥ 

শনির মহিমা যেবা করিবে কীর্তন। আনন্দে জীবন তার হইবে যাপন॥

শনির দৃষ্টিতে হয় সৰ্ব্বকার্য্যসিদ্ধি। তুষ্ট যদি থাকে শনি ধন ধান্য বৃদ্ধি॥ 

রুষ্ট হোলে শনিগ্রহ নাহি পরিত্রাণ। অর্থদণ্ড মনঃকষ্ট হয় অপমান॥

একাগ্র মনেতে যেবা শনি পূজা করে। গ্রহকোপ খণ্ডে তার শনিদেব বরে॥

শোন শোন সৰ্ব্বজন শনির পাচালী। ধনে পুত্রে লক্ষীবন্ত হইবে সকলি॥

||পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান ||  ১

শ্রীহরি নামেতে এক আছিল ব্রাহ্মণ। দেব-নিজে সেবাব্রতে ছিলো তার মন॥ 

দ্বিজসেবা করে তার নাহিক ক্ষমতা। ভিক্ষা মাত্র শুধু তার কার্য্যের দক্ষতা॥ 

নিত্য ভিক্ষা করি করে উদর পূরণ। তাহাতেই দ্বিজসেবা হয় অনুক্ষণ ॥ 

বিনা চিন্তামণি চিন্তা আর চিন্তা নাই। কেমনে সে চিন্তামণি চিনিবারে পাই। 

অন্তরে সদাই সুখী অন্ন নাহি পেটে। তথাপি কৃষ্ণের নাম ভঙ্গে অকপটে। 

হেনকালে এক পুত্র ভুমিষ্ট হইল। হেরিয়া তাহার মুখ বিষাদে ভাসিল | 

হায়রে বিধাতা আজ কি সুখের দিন। হরিষে বিষাদ মন নিজে অতি হীন॥ 

যাহোক তাহোক নিজ প্রতিজ্ঞা রাখিব। ভিক্ষাতে নির্ভর করি দিন কাটাইব 

দ্বিজ আর শিশুসেবা ভিক্ষা করি করে। সুমঙ্গল বলি নাম রাখিল পুত্রেরে॥ 

অমঙ্গলে সুমঙ্গল পুত্ৰনাম রাখিল ৷ পঞ্চম বৎসরে পুত্রে পাঠশালে দিল॥ 

সুমঙ্গল বালকের সবে গুণ গায় ৷ অল্প দিন মধ্যেতে সে শিখে সমুদয়॥ 

শাস্ত্রজ্ঞ হইল ক্রমে শাস্ত্ৰ আলোচনে ৷ পণ্ডিত বলিয়া তারে মানে সৰ্ব্বজনে॥ 

কিন্তু তার কিছুতেই নাহি লয় মতি ৷ সদা চিন্তে কিসে পাবো কমলার পতি॥ 

কমলাসেবিত পদ কেমনে পাইব ৷ ইহকাল পরকাল সব নিস্তারিব

এইরূপে সার বস্তু চিন্তার কারণ। ছাড়িলা আপন গৃহ পিতৃমাতৃগণ॥ 

বিদেশে বিদেশে ভ্রমে করি পর্য্যটন। মনেতে কেবল মাত্র শ্রীহরি চরণ॥

আচম্বিতে এক স্থানে পায় সমাচার। পিতা মাতা দুইজনে ছেড়েছে সংসার॥ 

অতঃপর গয়াক্ষেত্রে করিয়া গমন। বিষ্ণুপদে পিণ্ড দিয়া করিল তর্পণ॥ 

স্থানে স্থানে বিদ্যাভ্যাস করিতে লাগিল। সকল বিদ্যায় ক্রমে নিপুণ হইল॥ 

কালেতে সকলি হয় কে করে খণ্ডন। পড়িল শনির দৃষ্টে দ্বিজের নন্দন॥

শনিতে হরিল বল বুদ্ধি গেল দূর। ভ্রমিতে ভ্রমিতে দ্বিজ গেল বহুদূর॥ 

যে দশাতে আপনি পড়িয়া ভগবান। গণ্ডকীতে শিলা কাটি পাইলেন ত্রাণ॥ 

চতুর্দশ বৎসর যে শিলা কাটিয়া ছিল। তাহাতেই শিলা শালগ্রাম যে হইল॥ 

ইন্দ্রঅঙ্গে ভগের যে চিহ্ন হ’য়েছিল। সেও শনিকোপে পড়ি ভ্রমিতে লাগিল॥

আচম্বিতে বিদর্ভ-নগরে উপনীত। দেখিল সে তথাকার অতীব সুনীত॥ 

সেখানের রাজা হয় শ্রীমন্ত ভূপতি। শান্ত দান্ত গুণবন্ত সদা ধৰ্ম্মে মতি॥  

তাঁহার সভায় দ্বিজ যাইয়া পৌঁছিল। দেখিয়া শ্রীমন্ত রাজা অভ্যর্থনা কৈল॥

||পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান || ২

কোথায় নিবাস বলি কহে নরপতি । কোন বংশোদ্ভব হও বাহে সম্প্রতি ॥ 

শুনিয়া দ্বিজের পুত্র কহে সমাচার। হুমঙ্গল নাম ধরি শুন নৃপবর॥

অতি দীন দুঃখী আমি নাহি পিতামাতাস্বদেশে বিদেশে আমি যাই যথা তথা॥ 

শ্রীমন্ত বলেন দ্বিজ চিন্তা পরিহর। আমার আলয়ে থাকি মোরে কৃপা কর॥

শাস্ত্রেতে নিপুণ তুমি বুঝি অনুমানে। আমারে করহ তুষ্ট বাক্যের সন্ধানে॥

আমার আছয়ে দুই যুগল নন্দন। তব স্থানে পড়াইব এই আকিঞ্চন॥ 

জ্ঞানবানের সুখ দুঃখ সব সমজ্ঞান। যখন যে দশা ঘটে সেই তো সমান ॥ 

শুনিয়া ভূপতি বাক্য সন্তুষ্ট হইল। এইরূপে কতদিন তথায় কাটিল ॥

রাজপণ্ডিত বলি সে হৈল পরিচয়। ভূপতির দুই পুত্রে যত্নেতে পঠয়॥

এইরূপে কিছু দিন হইল বিগত।বালকের বেশে শনি হৈলা উপনীত॥

হুমঙ্গল নিকটে আসি দিলা দরশন। পড়য়ার বেশে শনি চিনে কোন জন॥ 

চিনিতে নারিল দ্বিজ শনির ছলনা। শনির রূপেতে মন হইল মগনা॥ 

জিজ্ঞাসিল দ্বিজবর কহ বাছাধন ৷ কোন্ কাৰ্য্য হেতু এৰে তব আগমন॥

শনি বলে মহাশয় কর অবধান।পড়িবারে এনু আমি তোমা বিদ্যমান ॥ 

বিপ্র বলে ইচ্ছাসুখে কর অধ্যয়ন । যত্নের সহিত তোমা পড়াব এখন।

ব্যাকরণ স্মৃতি কাব্য সাংখ্য দরশন। অল্পদিন মধ্যে শনি কৈলা অধ্যয়ন ॥ 

সমস্ত বিদ্যায় শনি হৈলা যে নিপুণি। বিপ্রবর পরিচয় চাহিল তখুনি ॥ 

শনি বলে কিবা দিব মম পরিচয়। শনৈশ্চর নাম মোর সূর্য্যের তনয় । 

শুনিয়া তাঁহার বাক্য বিপ্রবর কয় । কি সৌভাগ্য আমার হে শুনি পরিচয় ।

গ্রহের প্রধান তুমি মান্য দেবতার । আমারে করিলে কৃপা কি কহিব আর । 

যদি হে প্রসন্ন দেব হইলে আমারে । কিসে মম কষ্ট দূর হইবারে পারে ।

তাহার সন্ধান কথা কহ দেখি শুনি ।ব্যথায় ব্যথিত বড় ব্যাকুল পরাণি।

আমার উপরে আছে তোমার কটাক্ষ। কিসে যাবে বল দেখি হইয়া স্বপক্ষ। 

শনি বলে বলি তবে শুন মহাশয় ৷ মম ভোগ দশ বৰ্ষ কাল মাত্র হয় || 

আর তব অবশিষ্ট ছয় মাস আছে। দশ দণ্ড মধ্যে যাবে৷ না আসিব পাছে ||

দশ দণ্ড দৌর্দণ্ড পাবে অতিশয় কষ্ট। পশ্চাতে মুখের লেশ ঘুচিবে অরিষ্ট ||

|| পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান || 

সপ্তম দিবসে গিয়ে ভাগীরথী-তীরে। এক মনে এক ধ্যানে ভজ মুরারিরে || 

মম কোপ হইতে পাবে অবশ্যই মুক্তি। কহিলাম সত্য আমি এই স্থির যুক্তি || 

এত বলি শনিদেব হৈলা অন্তৰ্দ্ধান । আর না দেখিতে পায় বিপ্রের সন্তান || 

শনি আজ্ঞা মত তবে গিয়া গঙ্গাতীরে। নারায়ণে এক মনে ভজে বসি ধীরে || 

দশ দণ্ড পূর্ণ হৈল হেন জ্ঞান করি । উঠিয়া দাঁড়ায় মুখে বলিয়া শ্রীহরি ||

কিন্তু দশ দণ্ড পূর্ণ না দেখি তখন । নয়ন মুদিয়া পুনঃ ভজে নারায়ণ ॥

সূর্যপুত্র হেরি মনে কুপিত হইল ৷নারায়ণ সাক্ষী করি তখনি বলিল ॥ 

আপনার দোষে কষ্ট পাইল ব্রাহ্মণ। মম কিবা দোষ ইথে দৈবের ঘটন ॥ 

আমি যা বলিমু তার কৈল। বিপরীত। বুঝে পড়ে শাস্তি দেব যে হয় বিহিত||

যে দুই রাজার পুত্রে পড়াইত দ্বিজে ৷ মায়া করি দুই পুত্রে হরি নিল নিজে||

নিজ মায়া মন্ত্রে দুই শিশু মুণ্ড গড়ি। বিপ্রের নিকটে ল’য়ে গেল দড়বড়ি ॥ 

বিপ্রবর নয়ন মুদিয়া ধ্যান করে ।ফেলিয়া দিলেক তাঁর উরুর উপরে ॥ 

হেথায় শ্রীমন্তরাজ শয়নেতে ছিল। পুত্র অমঙ্গল যত স্বপনে দেখিল ॥

স্বপন দেখিয়া রাজা শশব্যস্ত হ’য়ে। ভাগীরথী তীরে রাজা চলিলেন ধেয়ে 

দেখিয়া বিপ্রের কোলে পুত্র মুণ্ডদ্বয়। হাহাকার করি রাজা ভূমিতে পড়য় ॥ 

বিশ্বাস কহিছে রাজা কেন হও ভ্রান্ত। অচিরে পাইবে পুত্র না জান বৃত্তান্ত॥

||পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান || ৪

পুত্রদ্বয় অদর্শনে রাজরাণীর খেদ । 

রাজা অতি দুঃখমনে, বারি বহে দু’নয়নে কাঁন্দিয়া করয়ে হাহাকার ।

বলে রে দারুণ বিধি, কি করিলে বল বিধি, প্রাণনিধি করিলে সংহার॥

বিভাবস্ত জন দেখি, সাদরে তাহারে রাখি, পড়িবারে দিলাম যতনে ।

হবে পুত্র গুণবান, সুখেতে জুড়াবে প্রাণ, এই বাঞ্ছা সদা করি মনে॥

হিতে হল বিপরীত, বিপ্র করে দস্থ্যনীত আমার করিল সর্ব্বনাশ ।

স্মরিতে বাছার মুখ, বিদরিয়া যায় বুক, ভাল কৰ্ম্ম করিলে প্রকাশ॥

এত সাধনার ধন, যদি রে হোল নিধন, রাজ্যধনে কিবা প্রয়োজন ।

ডুবিব সাগর-জলে, হৃদি সদা যায় জ্বলে, মম মনে জ্বলয়ে এখন॥

হৃদি মম ফেটে যায়, প্রাণে নাহি সহ্য হয়, শুন্য হৈল আমার আলয়।

Shanidev Panchali And Bratkotha

||পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান ||  ৫

এস রে প্রাণের নিধি, শীতল করিব হৃদি, তোমা বিনা মরিব নিশ্চয় ॥

হেথা অন্তঃপুরে রাণী, এ কথা শ্রবণে শুনি, এলোথেলো পাগলিনী প্রায়।

ক্ষণে উঠে ক্ষণে বৈসে, নয়ন-নীরেতে ভাসে বলে মম হৃদি ফেটে যায়॥

আমি রে ভুজঙ্গ ফণী, তুই রে আমার মণি মরি আমি তোমার বিহনে।

দেখা দিয়ে প্রাণরাখ, মা বলিয়া মোরে ডাক শ্রবণে জুড়াইব এ প্ৰাণে ॥ 

না হেরিয়া তব মুখ, বিদরিয়া যায় বুক, এ শোক সহিতে নাহি পারি।

বারেক আসিয়া হেথা, চাঁদমুখে কহ কথা, রাখি দোঁহে হৃদয়েতে ধরি ॥

কোথা প্রভু কৃত্তিবাস, পুরাইতে অভিলাষ অকালেতে করিলে হরণ ৷

 কিদোষেহয়েদোষী, গলেতেলাগায়ে ফাসী প্রাণশশী দিলে বিসৰ্জ্জন॥ 

ত্রিভুবন শূন্য হেরি, এ প্রাণ কেমনে ধরি পুত্রদ্বয় অকালে নিধন।

হৃদি মোর ফেটে যায়, প্রাণে আর নাহি সয় অশ্রুনীরে ভাসে দু’নয়ন॥

পুত্রহীন হয় যার, তাহার জীবন ছার, আমার জীবনে কিবা কাজে ৷

এখনি মরিব আমি, ত্যজিৰ এ মৰ্ত্তভূমি এ মুখ দেখাব কোন লাজে ॥

||পাঁচালী ব্রতকথা: শুমঙ্গল ব্রাহ্মণের উপাখ্যান || ৬

এইরূপে রাজরাণী,খেদেতে আকুল প্রাণী উন্মাদিনী সম করে খেদ।

 ক্ষণে উঠে ক্ষণে বৈসে,ক্ষণে হাটে ঊর্দ্ধশ্বাসে ক্ষণে ক্ষণে ঝরে দুঃখ স্বেদ॥

এখানে শ্রীমন্তরাজ, জীবনে যে দিয়া লাজ, একমনে ভাবে পুত্রনিধি।

কোথা বাপ পুত্রধন, কোলে আয় দুইজন, তোর শোকে কাঁন্দি নিরবধি॥

কত পাপ করেছিল, তাই তোরে হারাইনু , বিনা মেঘে হইল বজ্রপাত ।

কি দিব বিপ্রের দোষ,তার প্রতি করিরোষ কাল নিশি হইল প্রভাত॥

ক্রোধেহোল অঙ্গভারি, আরনা সহিতে পারি চরে ডাকি দিল অনুমতি।

শুন শুন চরগণ, কর এ বিপ্রে বন্ধন কারাগারে রাখহ সম্প্ৰতি ॥

বিশ্বাস কাতরে কন, না কর বিপ্রে বন্ধন বিপ্র হন সৰ্ব্ব-সিদ্ধিদাতা ।

বিপ্রের হরিলে মান, নাহি পাবে পরিত্রাণ বিপ্র হন বিধাতার ধাতা॥

Shanidev Panchali And Bratkotha: পাঁচালী ব্রতকথা

** Shanidev Panchali And Bratkotha : শুমঙ্গল ব্রাহ্মণেকে কারাগারে নিক্ষেপ **

আজ্ঞামাত্র চরগণ ব্রাহ্মনে বান্ধিলো। গলাধাক্কা দিয়া কারাগারে রাখিলো॥

বিপ্রের নয়নে বারি ঝরে অবিরত। বলে হায় একি মোর হইলো আপদ॥ 

জপিলে আপদ যায় ভবানী চরণ। সকল বিপদ হন্তা শ্রীমধুসূদন॥ 

রাম হে মধুসূদন এ ঘোর সঙ্কটে। ভূপতির ক্রন্দন শুনি মোর হৃদি ফাটে॥ 

এইরূপে বিপ্রবর কারাগারে কাঁদে। শুনিলে পাষান ফাটে কি কব প্রবন্ধে॥ 

অতঃপর শুন সবে হয়ে একমন। দশ দণ্ড বেলা পূর্ণ হইলো যখন॥

পুত্রশোকে নুপাবর আছেন কাতর। হেনকালে দুই পুত্র আইলো সত্বর॥

চরণে প্রণমে উভে ভূমে লোটাইয়া। পিত মাতা বলি ডাকে আনন্দিত হিয়া॥

রাজা বলে কোথা ছিলি অন্ধের নয়ন। বুঝিতে না পারি আমি ইহার কারণ॥ 

দুই পুত্র বলে ছিনু করিয়া শয়ন। চরগনে কহে শীঘ্র আনহ বাহ্মন॥ 

ইহার বৃত্তান্ত কথা জানে সেই দ্বিজ। বিপ্রেরে দিলাম কষ্ট না বুঝিয়া নিজ॥ 

আজ্ঞা মাত্র চরগণ আনিল বিপ্রেরে। শীর্ণ কলেবর বিপ্র কান্দেন কাতরে॥ 

ভূপতি সে বিপ্রেরে করে নানা স্তুতি। অপরাধ ক্ষমা কর তুমি মহামতি॥ 

ত্বরায় করহ মম সন্দেহ ভঞ্জন।কোন শিশুমাখা বল ছিলো গো তখন॥

** Shanidev Panchali And Bratkotha : শুমঙ্গল ব্রাহ্মণেকে কারাগারে নিক্ষেপ **

বিপ্র কয় মহারাজ করি নিবেদন। কিছুমাত্র নাহি জানি ইহার কারণ ॥ 

শনি-শাপে কষ্ট পাই ঘটায় প্রমাদ ৷ শনির সে খেলা ভূপ মম পরিবাদ॥

সকলি ঈশ্বর লীলা অঘট ঘটন।আর কেন সেই কথা কর উত্থাপন॥ 

রাজা বলে এই কথা সত্য করি মানি। গ্রহদোষে নানা কষ্ট ভালরূপ জানি॥ 

যদি হে কখন হয় শনি দরশন ।পূজিয়ে তাঁহার পদ করি নিবারণ॥

ষোড়শোপচারে পূজি নানা উপচারে । ভক্তিতে সান্ত্বনা করি বিধি ব্যবহারে ॥ 

বিপ্র বলে মহারাজ স্থির কর মতি। এখনি জানাব আমি শনিগ্রহ প্রতি॥

এত বলি বিপ্রবর করিল গমন।শনির নিকটে আসি দিল দরশন॥

বিনয়ে কহেন বিপ্র শনিগ্রহ প্রতি। তোমাকে পূজিতে ইচ্ছা করেন ভূপতি॥

যদি অনুগ্রহ হয় চল মহাশয়।বলিতে অশক্ত আমি পাই মহাভয়॥

বিপ্রের বচনে শনি সন্তুষ্ট হইল।দুইজনে ভূপতির নিকটে আইল॥

রাজার নিকটে আসি দিল দরশন। শনিরে হেরিয়া রাজা আনন্দিত হন॥ 

শনির চরণে রাজা লোটায়ে পড়িল । বহুবিধ স্তব করি কহিতে লাগিল॥

** Shanidev Panchali And Bratkotha : শুমঙ্গল ব্রাহ্মণেকে কারাগারে নিক্ষেপ **

তুমি হে গ্রহের শ্রেষ্ঠ দেব শনৈশ্চর। রাখ মার সব পার ইচ্ছায় তোমার॥ 

তপন তনয় তুমি সৰ্ব্ব গুণধাম । তোমায় যে চিনে তার পূরে মনস্কাম॥

করিব তোমার পূজা করিয়াছি মন। অনুগ্রহ করি দেব করহ বর্ণন॥

পূজার পদ্ধতি কিবা কভু নাহি জানি । নিজ মুখে বলে দেব জুড়াও পরাণি॥

শুনিয়া রাজার স্তব শনিগ্রহ কয় । ক্ষমিলাম অপরাধ আর নাহি ভয়॥

পূজার নিয়ম মম শুন হে ভূপতি ৷ তুমি অতি বুদ্ধিমান সুজ্ঞান সুমতি ॥

 আমার বারেতে শুদ্ধ পরিয়া বসন । করিবে আমার পূজা হ’য়ে শুদ্ধ মন॥ 

নীল বসন কৃষ্ণতিল তৈল যে দিবে । মোষ আর মাষকলাই সংগ্রহ করিবে॥ 

কৃষ্ণবর্ণ ঘট চাই করিতে স্থাপন ৷ পঞ্চজাতি ফল ফুলে করিবে অর্চ্চন॥

পূজার বিধান যত কহিলাম সার। ভক্তিই প্রধান তার কি কহিব আর॥ 

ভক্তি করি যেবা করে আমার পুজন। ক্ষণেমাত্র হয় তার দুঃখ বিমোচন ॥ 

পুজা সারি করিবেক আমারে প্রণাম। নবগ্রহ স্তোস্ত্র পাঠে লইবেক নাম ॥ 

পরেতে প্রসাদ খাবে করিয়া যতন। সর্ব্বপাপে মুক্ত হবে আমার বচন ॥

** Shanidev Panchali And Bratkotha : শুমঙ্গল ব্রাহ্মণেকে কারাগারে নিক্ষেপ **

অভক্তিতে যেই আসি প্রসাদ খাইবে। অল্প দিনে কৃতান্তের ভবনে সে যাবে॥

আমার পুজায় যেবা করে অনাদর । চিরকাল দুঃখে সেই হইবে কাতর॥

এই কথা বলি শনি হৈল অদৰ্শন। ভক্তিতে করেন রাজা শনির পূজন॥

প্রতি শনিবারে পূজা করে নরবর। ধন দিয়া বিপ্রগণে তুষিলা অন্তর॥ 

সুমঙ্গল বিপ্র তবে বিদায় লইয়া ।গঙ্গাতীরে শনৈশ্চরে পুজিলেন গিয়া॥

শম্ভুনাথ বিশ্বাসের মধুর সঙ্গীত। পাঠশালে বসি গ্রন্থ করিল লিখিত॥

Shanidev Panchali And Bratkotha: পাঁচালী ব্রতকথা সমাপ্ত

Leave a Comment